গত ১০ মার্চ ফরিদপুরের সালথায় কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করায় তার বাবা ও চাচাকে পেটানোর অভিযোগ উঠে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি রায় মোহন কুমারের বিরুদ্ধে। ঘটনাটি নিয়ে তখন এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে থানায় মামলাও হয়েছে। তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আসলে সেদিন কি ঘটেছিল, তা নিয়ে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।
শনিবার (১৮ মার্চ) অভিযুক্ত ছাত্রলীগ সভাপতির রায় মোহন দাবি করে গণমাধ্যমকে বলেন, চার বছর ধরে ওই কলেজছাত্রীর সঙ্গে তার প্রেম সম্পর্ক ছিল। সেই সম্পর্কে কিছুদিন ধরে ফাটল ধরে। বিষয়টি নিয়ে উভয়ের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে গত ১০ মার্চ সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি তনয় বোসের বাড়িতে একটি সালিশ হয়। ওই সালিশে মেয়ের বাবা জীবন পাল প্রথমে আমার মা’কে তুলে গালি দেয়।
আমি মৌখিকভাবে এর প্রতিবাদ করায় তিনি চেয়ার থেকে ওঠে এসে আমাকে থাপ্পড় মারে। পরে আমি তাকে ধাক্কা দেই। এরই মধ্যে মেয়ের চাচা ও চাচাতো ভাইয়েরা এসে আমার মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। পরে আমার পরিবারের লোকজন এসে আমাকে উদ্ধার করে। এ সময় উভয় পরিবারের লোকজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে মেয়ের বাবা-চাচা সামন্য আহত হয়। কিন্তু তারা স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা না নিয়ে আমাকে ফাঁসাতে হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হয়। হাসপাতালে দুই দিন থেকে এখন বাড়িতে দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছে।
তিনি আরও দাবি করে বলেন, প্রেম সম্পর্কে ফাটল ধরায় ঘটনাকে তিলকে তাল বানিয়ে প্রচার করা হয়েছে। চার বছরের প্রেম সম্পর্ককে ইভটিজিংয়ে পরিনত করা হয়েছে। মূলত আমার সভাপতি পদ কেড়ে নেওয়ার জন্য একটি কুচক্র মহল ওই মেয়ের বাবাকে ব্যবহার করে আমার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। মিথ্যা মামলা দিয়েছে। যেদিন ঘটনাটি ঘটেছে, সেদিন ওই মেয়ে বাড়িতে ছিল না, তাহলে কাকে আমি উত্ত্যক্ত করেছিলাম? কার হাত ধরে টানাটানি করেছিলাম?। সবার কাছে আমার প্রশ্ন- চার বছর ধরে যদি আমি ওই মেয়েকে উত্ত্যক্ত করে থাকি, তাহলে কেন তারা এতদিন আইনের আশ্রয় নিল না, আমার বিরুদ্ধে কেন মামলা দিল না।
সালিশে মধ্যস্থতাকারী তনয় বোস বলেন, ঘটনার একদিন আগে ছাত্রলীগ নেতা রায় মোহন আমাকে ওই মেয়ের সাথে তার সম্পর্কের ফাটলের বিষয়টি জানিয়ে মিমাংসা করে দিতে বলেন। রায় মোহন বলেন, আগে পিছে যা হবার হয়েছে, এখন থেকে তার মত সে, আমার মত আমি। পরে মেয়ের বাবাও আমার বাড়িতে আসে। ছেলে আর মেয়ের বাবাকে নিয়ে আমি মিমাংসায় বসি। তখন মেয়ের বাবা জীবন পাল, রায় মোহনকে বলে তোকে যদি আমার মেয়ে ভালবাসে তাহলে, আমি তাকে তোর সাথে বিয়ে দিবো, আর যদি না ভালবাসে তাহলে বলে… রায় মোহনের মা তুলে গালি দেয়। একপর্যায় মোহনকে থাপ্পড়ও মারে। পরে মেয়ের বাবার লোকজন রায় মোহনের মোটর সাইকেলও ভাঙচুর করে। এ সময় উভয় পরিবারের মধ্যে হাতহাতির ঘটনা ঘটে। আমি ঠেকাতে গিয়ে আহত হই। এরআগে ওই মেয়ের হাত ধরে টানাটানির কোনো ঘটনা ঘটেনি।
তবে ওই কলেজছাত্রী অভিযোগ করে বলেন, আমি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন থেকে রায় মোহন আমাকে বিরক্ত করা শুরু করে। বিষয়টি তখন স্কুলে বসে সালিশের মাধ্যমে মিমাংসা করা হয়। এরপর আবারও বিরক্ত করা শুরু করে। তখন রায় মোহন আমাকে বলে, তুই যদি আমার সাথে কথা না বলিস, তাহলে আমি তোর বাবা-ভাইকে মারধর করবো। একপর্যায় আমি ওর সাথে কিছুদিন ফোনে ও ভিডিও কলে কথা বলতে শুরু করি।
এরই মধ্যে এসএসসি পরীক্ষায় আমার রেজাল্ট খারাপ হয়। পরীক্ষায় আমার (এ প্লাস) পাওয়ার আসা ছিল, কিন্তু আমি ৪.৯৪ পেয়ে পাস করি। এরপর আমি মনে মনে ভাবলাম এসব (প্রেম) করা আমার উচিত নয়। এতে আমার পড়ালেখায় সমস্যা হবে। তখন আমি রায় মোহনকে বলি আপনি আমার জীবন থেকে সরে যান। আমি আর এসব করবো না। পরে গত ১০ মার্চ সকালে বাড়িতে আসি, তখন রায় মোহন বাড়ির সামনে এসে আমার হাত ধরে টানাটানি করে। তবে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ওই দিন কি হয়েছে তা আমি কিছুই জানি না, আমি বাড়িতে ছিলাম না।
অপরদিকে ভুক্তভোগী মেয়ের বাবা জীবন পালও দাবি করে গণমাধ্যমকে বলেন, তার মেয়েকে বাড়ির সামনে এসে হাত ধরে টানাটানি করে রায় মোহন। তখন প্রতিবাদ করলে রায় মোহন ও তার লোকজন আমাদের উপর হামলা করে। এতে আমি, আমার ভাই ও ভাতিজা আহত হই। তিনি বলেন, আমার মেয়ে যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, তখন থেকে তার পিছনে লাগে রায় মোহন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, লোকলজ্জার ভয়ে এতোদিন রায় মোহনের বিরুদ্ধে কথা বলেনি বা আইনী ব্যবস্থা নেয়নি।
শনিবার দুপুরে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক গণমাধ্যমকে বলেন, রায় মোহনের সঙ্গে ওই মেয়ের চার বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পেরেছি। গত দুই মাস তাদের সম্পর্ক ব্রেকআপ হয়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঘটনার দিন উভয় পরিবারের লোকজন এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ স্থানীয়ভাবে সালিশ করে সেই সালিশে উভয়ের লোকজনের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে।