কুমিল্লায় একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও উত্ত্যক্তের অভিযোগ এনে তাকে ‘অবরুদ্ধ’ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এ ঘটনায় বুধবার (১৫ মার্চ) রাত ১০টা পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছুড়ে। এতে ১০-১২ জন গুলিবিদ্ধ হয়। সরেজমিনে জানা গেছে, বুধবার দুপুর থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এসময় উত্তেজিত বিক্ষোভকারীরা প্রধান শিক্ষক ও তার জামাতার ব্যবহৃত দু’টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দেয়। এছাড়া উত্তেজিত জনতা পুলিশের তিনটি গাড়ি, একটি সিএনজি ও বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষের কয়েকটি দরজা ভাঙচুর চালায়। রাত পৌনে ৯টায় কুমিল্লা পুলিশ সুপার আব্দুল মান্নান ও দেবিদ্বার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বিপুল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে আনার পথে বিক্ষুব্ধ জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া করে। এসময় ডিবি পুলিশসহ তিন পুলিশকে আটক করে মারধর করে এবং এক পুলিশ সদস্যকে আটক করে রাখে। রাত সাড়ে ৯টায় ওই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধারে এলাকায় অভিযান চালায়। ওই সময় রাত ১০টা পর্যন্ত এলাকাবাসীর সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোঁড়ে এতে ১০-১২জন গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিবিদ্ধ আহতরা হলেন, সিয়াম (১৫), মিনহাজ (১৭), অলি (১৬), আকাশ (১৬) আরিফুল ইসলাম (২৬), সাব্বির (১৮) ও হৃদয় (১৭)। তাদের প্রথমে দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া পুলিশ সদস্য জহিরুল ইসলাম ও সারোয়ারসহ সাতজন পুলিশ আহত হয়েছে বলে জানা যায়। রাত ১২টা পর্যন্ত ৮-৯ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। এদিকে দুপুর থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দেবিদ্বার-বিপাড়া (সার্কেল) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো.আমিরুল্লা, ওসি কমল কৃষ্ণ ধর, ইউপি চেয়ারম্যান মো. হুমায়ুন কবীর, বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরাসহ বিভিন্ন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী উপস্থিত হয়ে ঘটনার নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। ঘটনার বিবরণে ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘দুপুরে আমার মেয়ে বাড়ি গিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে। তাকে ঘটনার কারণ জানতে চাইলে সে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনের বিষয়টি জানায়।’
অভিভাবকরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, ‘এর আগে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন কয়েকটি স্কুলে প্রধান শিক্ষক থাকাকালে ছাত্রীদের সাথে এমন অপকর্ম করেছেন। পরে তাকে ওইসব স্কুল থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে দেবিদ্বারে এসে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় সে এই স্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পায় এবং নিয়মিত অনৈতিক কাজে লিপ্ত হয়।’ ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা গেছে, অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক ভুক্তভোগীকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করলে ওই ছাত্রী দৌড়ে বাড়ি গিয়ে তার অভিভাবকদের ঘটনা জানায়। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘটনাটি জানাজানি হলে হাজার হাজার গ্রামবাসী স্কুল মাঠে প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে জুতার মালা ও প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভ করে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেন বলেছেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। মিথ্যে কলঙ্ক রটিয়ে একটি রাজনৈতিক মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আমাকে স্কুল থেকে তাড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে।’ এ বিষয়ে দেবিদ্বার-বিপাড়া (সার্কেল) সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার মো.আমিরুল্লা বলেন, ‘পুলিশের দুই জন সদস্য গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পুলিশের কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মোক্তল হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশের এ কর্মকর্তা জানান, ভুক্তভোগীর বাবা থানায় মামলা দিতে ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলার প্রস্তুতি চলছে।