ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে (ডিআইইউ) তিন শিক্ষার্থীকে রুমের দরজা বন্ধ করে রড দিয়ে পেটানোর ঘটনায় রহস্যের জট বেড়েই চলছে। সিএসসি বিভাগের শিক্ষার্থী ইনজামামুল হক মুহিদসহ তার দুই বন্ধুকে এলোপাথাড়িভাবে পেটানোর পাঁচদিন পার হলেও এ বিষয়ে মুখ খুলছেনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তিন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নিষেধ করা হলেও এ ঘটনার পরিপেক্ষিতে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কিনা কিংবা কারা তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন এ নিয়েও রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের পুলিশি হেফাজত থেকে মুক্ত করার পর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত নিয়ে এমন গড়িমসিকে রহস্যজনক মনে করছেন শিক্ষার্থীদের অনেকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিএসই বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান,আমরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছি। এখানেও নিরাপত্তা নেই। আমার ভাইকে নির্মমভাবে রড দিয়ে পেটানোর পর দোষীদের বিরুদ্ধে আশানুরূপ কোন ব্যবস্থা নেওয়া হল না। আমরা জানতেও পারলাম না তদন্ত হচ্ছে কিনা। কারা পকেট কমিটির মতো তদন্ত করছেন সেটাও জানতে পারলাম না। এবাবে চলতে থাকলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি আরও আবনতি হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা না দিলে কিভাবে চলবে?
এদিকে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নিজাম বলেন, কোন তদন্ত ছাড়াই আমাকে এককভাবে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত অনেক বহিরাগত এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের একাধিক
শিক্ষার্থী ছিল কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হোস্টেল সুপার ঠাকুর মণ্ডল দাস সহ অনেকেই এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকলেও তারা পর্দার আড়ালেই থেকে গেছে। সঠিক তদন্ত
করার পর সিদ্ধান্ত নিলে আমি এককভাবে অভিযুক্ত হতাম না।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি সম্পর্কে মুখ না খুললেও গোপন সুত্রে জানা গেছে, সিএসসি বিভাগের ডিন এটিএম মাহবুবুর রহমান কে তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে। এতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান এস জুবাইর আল আহমেদ, আইন বিভাগের চেয়ারম্যান রাইসুল ইসলাম সৌরভ, ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান ফরিদা বেগম এবং অতিরিক্ত রেজিস্টার শাহ আলম চৌধুরী। তবে কবে নাগাদ তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে এ বিষয়ে কিছুই জানা যায়নি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে তদন্ত কমিটি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর মো. আবু তারেক ফোন কেটে দেন। অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য,
উপ-উপাচার্য সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কল করা হলেও সবাই বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এর আগে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব বাতিল এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক এটিএম মাহবুবুর রহমান
বরাবর লিখিত অভিযোগ জানায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে লিখিত ওই অভিযোগ পত্রে নিরাপত্তা শঙ্কার কথা উল্লেখ করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ মধ্যরাতে আধিপত্য বিস্তারের জেরে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়।