সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের অধীনস্থ পূর্বের এতিমখানাকে ২০০৩ সাল থেকে সরকারীভাবে নামকরন করা হয় মহিলা শিশু পরিবার। পূর্বে জেলার ছেলে-মেয়ে এতিম শিশুরা এখানে বসবাস ও পুর্নবাসনের সুযোগ পেত সরাকারী ও বিভিন্ন ব্যাক্তি অনুদানের মাধ্যমে। মহিলা শিশু পরিবার নামকরনের পর থেকে পাবনার শিশু পরিবারে শুধু মেয়ে এতিমেরাই বসবাস করার সুযোগ পাচ্ছে এখানে। জেলার এতিম ছেলেদের ভর্তি হতে হচ্ছে সিরাজগঞ্জ অথবা নাটোর জেলাতে। এ কারনে জেলার ছেলে এতিম শিশুরা কমই সুযোগ পাচ্ছে ছেলে পরিবারে ভর্তি হবার। কারন পিতৃহীন এ শিশুদের মাতা অন্য জেলায় গিয়ে তার শিশুকে একনজর দেখা করতে সামর্থহীন। ফলে পিতৃ বা পিতৃ-মাতৃহীন এতিম ছেলে শিশুরা জেলাতে থেকেই বিভিন্ন ঝুকিপূর্ন শিশু শ্রমের সাথে জড়িয়ে পড়ছে। সেকারনে পাবনাতেও একটি ছেলে শিশু পরিবার স্থাপন করা দরকার বলে দাবী করেন ভুক্তভোগী পরিবারদের। খোজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার শহরতলীর করিবপুর স্থানে ছয় বিঘা জমির উপর এ মহিলা শিশু পরিবারটি অবস্থিত। অনেক জায়গা ফাকা ও যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে এখানে। সেক্ষেত্রে অতীতের ন্যায় একটি ছেলে শিশু পরিবারের ইউনিট চালু করা সরকার ও সমাজ কল্যান মন্ত্রনালয়ের সদেচ্ছার উপর নির্ভর করছে। পাবনার মহিলা শিশু পরিবারে একশতটি নিবাস বা সিট রয়েছে। এর ভেতরে দশটি সিট রয়েছে বয়স্ক অনাথ বা ভবঘুরে মহিলাদের। বর্তমানে ৮৭জন নিবাসী এখানে বসবাস করছে। তার ভেতর তিনজন মহিলা রয়ে বয়স্ক। যার ভেতর একজন রয়েছে নন বেঙ্গলী। যিনি হিন্দি ছাড়া কোন ভাষাতে কথা বলতে পারে না। তার ঠিকানাও বলতে পারে না। সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, ছয় বছর থেকে নয় বছর বয়সের মেয়ে শিশুরা এখানে ভর্তি হবার সুযোগ পেয়ে থাকে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের ভর্তি করে শিক্ষা দেয়া হয়। ভেতরেও রয়েছে দুইজন শিক্ষক যাদের একজন পুরুষ ও একজন মহিলা। পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের পিতা-মাতার স্নেহে গড়ে তুলছে এখানকার শিক্ষক ও অন্যান্য কর্মরত ব্যক্তিরা। বাড়ীর পরিবারের মতই বসবাস করছে তারা। পিতৃহারা শিশুদের মাতারা মাঝে মধ্যে এখানে এসে তাদের সন্তানদের সাথে দেখা করে যায়। তবে আঠার বছর বয়স পর্যন্ত এখানে বসবাস করতে পারে এ সব শিশুরা। তার পরে তাদের পাঠানো হয় পরিবারের কাছে। এখানে গিয়ে তারা পড়ে যায় বিভিন্ন সমস্যায়। তাদের বিবাহ দেবার মত কোন ক্ষমতা পরিবারের না থাকায় তারা বিভিন্ন ভাবে নিগৃহিত হতে থাকে। অতীতে বয়ং:প্রাপ্ত মেয়েদের এতিম খানায় বসবাসরত ছেলেদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে কর্মের সংস্থানের ব্যবস্থা করা হতো প্রশসনের পক্ষ থেকে। সরকারী এতিম কোঠাতেও অনেককে শিক্ষার মান হিসেবে চাকরী দেয়া হতো। কিন্ত বর্তমানে সে গুলো সবই বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা শিশু পরিবারের উপ-তত্ত্বাবধায়ক শিউলী রানী জানান, মেয়েরা এখানে বসবাস কলীন তাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য লেখা-পড়ার পাশাপাশি সেলাই, ব্লকবাটিক, স্কীন প্রিন্টের প্রশিক্ষনসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষন দেয়া হয়। এখান থেকে বেশ কিছু মেয়ে উচ্চ শিক্ষা নিয়ে চলে গেছে। সমাজ সেবা অধিদফতরের সহায়তার উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করে মেধা সম্পন্ন মেয়েরা করছে সরকারী চাকরী। তাদের মধ্য নার্স, শিক্ষকসহ অন্যান্য সরকারী পেষায়। সরকারী খরচেই দু’একজন নিয়েছেন বর্হিবিশ্ব থেকে ডক্টরেট ডিগ্রীও। বর্তমানে বসবাসরত মেয়েরা ১৮বছর বয়স পার হবার পরে এইচএসসি পাশ করলেও সাবলম্বী বা আর্থসামাজিক উন্নয়নের কোন সুযোগ নেই। কারন সরকারী কোন অনুদান উচ্চ শিক্ষা নেবার জন্য নেই। হাতের কাজ যারা শিখছে তাদেরও কোন অনুদানের ব্যবস্থা নেই। ২০০৩ সালের আগে এতিমখানা নামের সময় জেলার বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ এখানে বড় অঙ্কের অর্থ অনুদান দিত। সে অর্থ এতিমদের মাঝে দিয়ে তাদের সাবলম্বীর ব্যবস্থা করা হতো। কিন্তু সরকারী শিশু পরিবার নামকরনের কারনে কোন ব্যাক্তি সহযোগীতা পাওয়া যায়না। ফলে সরকারী অর্থের উপরই নির্ভর করে থাকতে হয় এসব শিশুদের। শিক্ষা গ্রহনের ব্যাপারেও অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয় পাবনা মহিলা শিশু পরিবারের সদস্যদের। পিএসসি পাশের পর প্রায় চার কিলোমিটার পায়ে হেটে গিয়ে বিদ্যার্জন করতে হয়। সেক্ষেত্রে ওদের দাবী একটি স্কুল মাক্রোবাস সরকার থেকে দিলে তাদের শিক্ষা ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহায়ক হতো। নবম শ্রেনীর ছাত্রী খাদিজা, শান্তা বলেন পরিবারের মতই এখানে বসবাস করছি। শিক্ষাসহ সব ধরনের সুযোগ পাচ্ছি। কিন্তু গ্রীষ্মকালে পায়ে হেটে অনেকদুরের স্কুলে যেতে কষ্ট হয়। বখাটে ছেলেদের অশ্লীল ভাষা ও অঙ্গভঙ্গি সহ্য করতে হয় নিরূপায় হয়ে। তাই আমাদের পরিবহনের জন্য একটি স্কুেল যাতায়াতের জন্য মাইক্রোবাস সরকার দিলে আমাদের বখাটের উৎপাত ও পায়ে হেটে শিক্ষা গ্রহনের কষ্ট লাঘব হবে। একাদশ শ্রেনীর আসমানী, শিরীনসহ অনেকেই জানান, আমরা এইচএসসি পাশ করার পর এখান থেকে চলে যেতে হবে। কিন্তু আমরা গিয়ে কি করবো? লেখা-পড়ার ফাকে হাতের কাজ যারা শিখেছে, তারা অর্থের অভাবে সে কাজ করতে পারবে না। সরকারীভাবে আমাদের উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে চাকরী অথবা আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য এককালীন সরকারী অনুদানের ব্যবস্থা করলে আমাদের অসহায়ত্বের লাঘব হবে।