বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী যে অনাহুত বিতর্কের সৃষ্টি করছে, তার ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, ভাস্কর্য নিয়ে মনগড়া ব্যাখ্যা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দেশের সংস্কৃতির প্রতি চ্যালেঞ্জ।
শনিবার (২৭ নভেম্বর) রাজধানীর সংসদ ভবন এলাকায় নিজের সরকারি বাসভবনে ব্রিফিং করার সময় এসব কথা বলেন তিনি।
স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী ইসলামের অপব্যাখ্যা দিয়ে ধর্মপ্রিয় মানুষের মনে বিদ্বেষ ছড়ানোর অপচেষ্টা করছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে এদেশে ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা, চর্চা এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধু প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে মাদ্রাসা বোর্ড পুনর্গঠনসহ ইসলাম প্রচারে তাবলিগ-জামাতকে জমি দিয়েছিলেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা পবিত্র ধর্মের একজন নিবেদিত প্রাণ ও অনুসারী হিসেবে ইসলামের সঙ্গে জ্ঞানবিজ্ঞানের সমন্বয় করে প্রকৃত ইসলামের চর্চা এগিয়ে নিতে জনমানুষের ধর্মানুরাগের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দেশের প্রতিটি উপজেলায় নির্মাণ করেছেন মডেল মসজিদ কমপ্লেক্স।
ওবায়দুল কাদের বলেন, একজন ধর্মপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্বে তখন এদেশে ইসলাম বিরোধী কোন কার্যক্রম হবে, তা বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।
তিনি বলেন, ভাস্কর্যকে যারা মূর্তি বলে অপপ্রচারে নেমেছে তারা নিজেরাই ভ্রান্তিতে রয়েছে। দেশের আলেম সমাজ এবং বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই বারবার বলেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্য এক নয়।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ইসলাম আমাদের ধর্ম, এ ধর্মের বিধিবিধানে ধর্মীয় ইস্যুতে বাড়াবাড়ির সুযোগ নেই। নিরুৎসাহিত করা হয়েছে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্ক করতে, নিষেধ করা হয়েছে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টিতে।
বাংলাদেশের স্থপতির ভাস্কর্য টেনে হেঁচড়ে নামাবে বলে কোনো কোনো ধর্মীয় নেতা ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য রাখছেন, তাদের এমন রুচি এবং ভাষা ব্যবহার দেখে তাদের ধর্মচর্চা ও ইসলামী রুচিবোধ নিয়ে জনমনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
“পবিত্র কোরআনের সূরা সাবার ১৩ নং আয়াতে বর্ণিত ‘তামাসিলা’ এবং সূরা ইব্রাহিমের ৩৫ নং আয়াতে বর্ণিত ‘আসনাম’ শব্দ ২টি এক নয়। কাজেই মুফাসসিরগণ মনে করেন তামাসিলা মানে ভাস্কর্য আর আসনাম মানে প্রতিমা-পূজা। এ দুটি শব্দকে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে ভুলব্যাখ্যা করা হয়েছে।”
প্রকৃত ইসলাম চর্চার আহবান জানিয়ে কাদের বলেন, ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা থেকে সবাই বিরত থাকি। তিনি ধর্মকে রাজনৈতিক ইস্যুতে ব্যবহার না করারও আহবান জানান।
ওবায়দুল কাদের হুঁশিয়ার করে বলেন, সরকারের সরলতাকে দুর্বলতা ভাববেন না। জনগণের শান্তি বিনষ্টের কোনো অপচেষ্টা করলে জনগণই রুখে দাঁড়াবে।
দেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, সংবিধান এবং রাষ্ট্রবিরোধী যে কোনো বক্তব্য বরদাশত করা হবে না বলে আবারও সাবধান করে দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের বলেন, সরকার প্রধান আগেই বলেছেন, দেশে কোরআান-সুন্নাহ বিরোধী কোনো আইন হবে না। তাই অন্য কোনো পথ না পেয়ে ধর্মীয় ইস্যুকে সামনে এনে ধর্মীয় সহনশীলতা বিনষ্টের যে কোনো অপচেষ্টা সরকার কঠোর হস্তে দমন করবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।
যারা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে,বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়, তাদের সবাইকে এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানান সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
১৩ নভেম্বর এক সমাবেশে ইসলামে ভাস্কর্য নির্মাণ ‘নিষেধ’ দাবি করে তা বন্ধের দাবি তোলেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও বাংলাদেশ খেলাফত যুব মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মামুনুল হক। এরপর ১৯ নভেম্বর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে এক বিক্ষোভেও একই মন্তব্যের পুনরাবৃত্তি করেন মাওলানা মামুনুল।