সরকারি সিদ্ধান্তে ২০১৬ সাল থেকে সারাদেশে বিভিন্ন ধাপে বন্ধ করে দেয়া হয় আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্যাস সংযোগ। তবে সংযোগ দেওয়া বন্ধ নেই ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে। প্রতিনিয়তই এখানে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দেয়া হচ্ছে নতুন নতুন আবাসিক গ্যাস সংযোগ।আর সংযোগ দিয়ে সরকারের গ্যাসে মাসে লাখ লাখ টাকা কামিয়ে নিচ্ছে রাজনীতিবিদ, জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের ওই সিন্ডিকেট। মাঝে মাঝে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে অভিযান হলেও বন্ধ নেই সিন্ডিকেটর অপতৎপরতা। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, র্যাব, সংশ্লিষ্ট কম্পানিসহ একাধিক সরকারি প্রতিষ্ঠানের সমন্বিত প্রয়াসও সিন্ডিকেটের অপতৎপরতা বন্ধ করতে পারছে না। এতে প্রতি মাসেই কোটি টাকা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের কাছ থেকে পাওয়া এক তথ্যে জানা গেছে, ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে ৩০ হাজার ফুট পাইপ লাইন ও ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ৪০ হাজার ফুট পাইপ লাইন বিচ্ছিন্ন করা হয়। কাটা পড়ে প্রায় আড়াই হাজারের মতো অবৈধ লাইন। বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাহিদুর রেজা বলেন, একের পর এক অবৈধ সংযোগের কারণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারায়াণগঞ্জের চেয়েও বড় ধরণের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর ও পৌর এলাকার মালিহাতা, বেতবাড়িয়া, খাঁটিহাতা, পূর্ব চান্দিয়ারা, বুধল বাজার, সুতিয়ারা, সুহিলপুর, হারিয়া, কালামুড়ি, কেন্দুবাড়ি, বেহাইর, আমতলী, রাজঘর, খেয়াবাড়ি, রামরাইল, ভাদুঘর, কালীসীমা এলাকায় রয়েছে অবৈধ গ্যাস সংযোগ। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একেক এলাকায় দীর্ঘ লাইন টেনে শত শত সংযোগ দিয়ে রাখা হয়েছে। পৌর এলাকার বহুতল ভবনগুলোতেও রয়েছে শত শত সংযোগ। একটি রাইজার থেকে আট-দশটি চুলা জ্বালানো হচ্ছে। একটি সংযোগ নিতে ৫০-৬০ হাজার দিতে হচ্ছে সিন্ডিকেটকে। প্রতিমাসে প্রতি চুলা বাবদও দিতে হচ্ছে হাজারের উপর বেশি টাকা। অনেককে বিল পরিশোধের ভুয়া বইও ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে। বই থাকার কারণে অভিযান চালাতে এসে সংশ্লিষ্টরা বিপাকে পড়েন।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিল্লাল, মাহিন, সুমন, আলমগীর, আজাদ, মহসীন, পাভেল, সেলিম, জামাল, বাশার, সাহেদ, শামীম, আজম, কাউছারসহ আরো অনেকে সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেয়ার সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে পৌর এলাকার বাসা-বাড়িতে গ্যাস সংযোগ দেয়ার সঙ্গে বাখরাবাদ গ্যাস কম্পানির লোকজনও জড়িত। মূলত পৌরসভার কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারি ওই কম্পানির লোকজনের সঙ্গে চুক্তি করে বহুতল ভবনে অবৈধ গ্যাস সংযোগ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করছেন।বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানি লিমিটেডের উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী জাহিদুর রেজা জেলার বিভিন্নস্থানে এখনো অবৈধ গ্যাস সংযোগ থাকার কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, পৌর এলাকার বহুতল ভবনে ঠিক কি পরিমান অবৈধ সংযোগ রয়েছে এ বিষয়ে আমরা নিশ্চিত নই। বাখরাবাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া কার্যালয়ে ৩০ জনের বদলে মাত্র সাতজন কর্মরত আছেন বলে তিনি জানান।