যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার ফুলের রাজধানী’খ্যাত গদখালির ফুল চাষিরা এ বছর ভালো লাভের আশা করছেন। তারা বলছেন দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকলে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস, এ চার মাসে কমপক্ষে ৬০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে গদখালির ফুল সেক্টর থেকে। ফুলচাষী ও ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, গত নভেম্বর মাস ও চলতি মাস জুড়ে হরতাল অবরোধের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ ও পরিবহনে দ্বিগুণ অর্থ গুণতে হয়েছে তাদের। যার ফলে চাষীরা ভালো দাম পাননি। যশোর জেলায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়, ছয় হাজারের বেশি কৃষক এ ফুল চাষের সঙ্গে জড়িত, সব মিলিয়ে শুধু গদখালীতেই ফুলের সাথে জড়িত প্রায় ১২ হাজারের বেশি মানুষ। দেশের মোট ফুলের চাহিদার ৭৪ শতাংশ ফুলই গদখালী থেকে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। গদখালী হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার। খুব সকালে গদখালি বাজারে ফুলের বেচাকেনা শুরু হয়, ব্যবসায়ী ও চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ৯ টাকা পর্যন্ত, গ্লাডিওলাস বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা থেকে ১৮ টাক পর্যন্ত, চন্দ্রমল্লিকা ৪ থেকে ৫ টাকা, গাদা ফুল প্রতি হাজার ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, রজনীগন্ধা ৩ থেকে ৬ টাকা, জিপসি ১০০ টাকা আঁটি, জারবেরা ১০-১২ টাকা। টাওরার গোলাপ চাষি মোহর আলী জানান, আমার ২ বিঘা জমিতে গোলাপ ফুল আছে, সাথে এ বছর ১৫ শতাংশ জমিতে রজনী গন্ধা ফুলের চাষ করেছি। তিনি বলেন এক বিঘা জমিতে চার হাজার গোলাপের চারা রোপণ করতে হয়, এক চারা তেরো টাকা করে মোট বায়ান্নো হাজার টাকার চারা, গাছ ফুল আসা পর্যন্ত প্রায় এক লক্ষ বিশ হাজার টাকা খরচ হয় বিঘা প্রতি, খরচ বাদে এবছর এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা লাভ হবে বলে আশা করছি। চাঁপাতলা গ্রামের গোলাপ চাষি মো: কনক বলেন, আগে ১৬ শতাংশ জমিতে গোলাপ ছিলো, এবছর আরও ১৭ শতাংশ জমিতে গোলাপে চারা রোপণ করেছিলাম, ভালো লাভের আশা আমার। ফুল চাষীদের অভিযোগ হরতাল, অবরোধের কারণে তারা মাঝে ফুলের ন্যায্য দাম থেকে তারা বঞ্চিত হয়েছেন, তাদের চাওয়া একটাই আমরা সর্বনাশা হরতাল, অবরোধ চাইনা। যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম জানান, এ বছর রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ফুল বাইরের জেলাগুলোতে বিপণনে আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশের পরিস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকে চলতি মৌসুমে চার মাসে গদখালি থেকে পাঁচ থেকে ৬০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে আমরা আশা করছি। আসন্ন বিজয় দিবস ও বড় দিন উপলক্ষে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। আমরা আশাবাদী দেশ স্বাভাবিক হবে, ফুলচাষিরা তাদের ফুল সুন্দরভাবে বাজারজাত করে লাভবান হবে।