ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল উপজেলার ঐতিহ্যবাহী সাপ্তাহিক নেকমরদ পশুরহাটে ২০ আগষ্ট রবিবারে অতিরিক্ত টোল আদায়ের আপরাধে ইজারাদারকে ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর আগে শনিবার (১৮ আগষ্ট ) দুপুরে রানীশংকৈল উপজেলার কাতিহার হাটের ইজারাদার গরু প্রতি ২৩০ টার স্থলে ৪০০ টাকা ও ছাগল প্রতি ৯০ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা টোল আদায় করছিলেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত হাটে গিয়ে ইজারাদারকে ৬০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। দুটি হাটেই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন রানীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রজিত সাহা। রানীশংকৈল উপজেলার নেকমরদ ও কাতিহার পশুর হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগে একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানের মাধ্যমে অর্থদন্ডের সাজা হলেও, মিলছে না প্রতিকার। এ নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। হাট দুটি প্রতি সপ্তাহের শনিবার কাতিহার ও রবিবার নেকমরদে বসে। অভিযোগ রয়েছে, অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার মাধ্যমে ইজারাদারদের একাধিকবার শাস্তি হিসাবে অর্থদন্ড প্রদান করলেও। অতিরিক্ত খাজনা আদায় তোলা বন্ধ হচ্ছে না। জানা গেছে, ১৪৩০ বাংলা সনের জন্য নেকমরদ পশুর হাট প্রায় দেড়কোটি টাকা দিয়ে ইজারা নিয়েছেন নেকমরদ এলাকার ব্যবসায়ী তোজাম্মেল হোসেন অপরদিকে কাতিহার পশুর হাট ১ কোটি ১৩ লাখ টাকায় ইজারা নিয়েছেন বাঁচোর এলাকার সানোয়ার হোসেন লিয়ন। তারা হাট দুটি পহেলা বৈশাখের ২ ও ৩ তারিখে বছরের প্রথম খাজনা আদায়ের সুচনা করেন। এ দিন থেকে তারা গরু প্রতি ৪০০ টাকা, ছাগল প্রতি ১৫০ টাকা হিসাবে খাজনা আদায় করে চলেছেন। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের সর্বশেষ নির্ধারিত দর অনুযায়ী গরু প্রতি ২৩০ টাকা, ছাগল প্রতি ৯০ টাকা নেওয়ার বিধান রয়েছে। এসব বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে তারা অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে চলছে। তবে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের প্রতিবাদে গত ১৬ ও ২৩ এপ্রিল নেকমরদ পশুর হাট সংলগ্ন মহাসড়কে মানবন্ধন করেছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এসব মানববন্ধন ও প্রতিবাদের কারণে রানীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে রানীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার ভুমি ইন্দ্রজিত সাহা ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে পর পর ৪টি হাটে অর্থদন্ড প্রদান করে জরিমানা আদায় করেছেন। অপরদিকে কাতিহার হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের অভিযোগে টাকা অর্থদন্ড প্রদান করেন রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রজিত সাহা। তবে খাজনা আদায়ের অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অর্থের সাজা প্রদান করলেও অতিরিক্ত খাজনা আদায় তোলা বন্ধ হচ্ছে না। স্থানীয় পশু ব্যবসায়ী মমিনুল ইসলাম, আদাবর আলী সহ একাধিক ব্যবসায়ী প্রতিবেদককে বলেন, প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করার পর তারা লোক দেখানো ব্যবস্থা নেই। হাটে এসে সামান্য জরিমানা করেই চলে যান। হাটের দিন কমপক্ষে ৬শত গরু ক্রয় বিক্রয় হয়। ছাগল হয় দেড় থেকে ৪ শতটির মত। সে হিসাবে গরুতে অতিরিক্ত টাকা নেই প্রায় ১ লাখের বেশি অপরদিকে ছাগলে অতিরিক্ত টাকা নেই ২৪ হাজার টাকা। আর প্রশাসন অভিযোগ পেলে এসে জরিমানা করে সামান্য টাকা। স্থানীয় গরু ব্যবসায়ী সফিউল ইসলাম বলেন, ‘মাঝে মাঝে এসিল্যান্ড এসে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা করে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু অতিরিক্ত খাজনা আদায় বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’ আরেক ব্যবসায়ী দুরুল হক বলেন, ‘যা জরিমানা করা হয় তা হাট ইজারাদারের পকেট থেকে যায় না। প্রত্যেক হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করে সর্বনিম্ন ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। সেখানে থেকে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা দিলে ইজারাদারের কোনো লোকসান হয় না।’ব্যবসায়ীরা বলছেন, লোক দেখানো ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। কারণ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে যদি অপরাধটি বন্ধ না হয় তাহলে সাধারণ মানুষের তো কোন উপকারের আসছে না। বন্ধ হচ্ছে না অতিরিক্ত খাজনা তোলা। শনিবার কাতিহার ও গত রোববার নেকমরদ হাটে গিয়ে দেখা যায়, তারা যথারীতিতে গরু প্রতি ৪০০ টাকা ছাগল প্রতি ১৫০ টাকা খাজনা আদায় করছে। জানতে চাইলে কাতিহার হাট ইজারাদার সানোয়ার হোসেন লিয়ন বলেন, অন্যান্য হাটে বেশি খাজনা আদায় করা হয়। তাই কাতিহার হাটেও খাজনা বেশি নেওয়া হয়। নেকমরদ হাট ইজারাদার তোজ্জাম্মেল হোসেন , বিষয়টি নিয়ে মুঠোফোনে কোন মন্তব্য করতে তিনি রাজি হননি। রানীশংকৈল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রজিত সাহা বলেন, অতিরিক্ত টোল আদায়ের বিষয়ে আমরা মানুষের অভিযোগের ভিত্তিতে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে আইনগত যে ব্যবস্থা সেটা করি। হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়, একাধিকবার ভ্রাম্যমাণ আদালতে একই অপরাধে অর্থদণ্ড ছাড়াও অপরাধীকে পরবর্তীতে জেলে যাওয়ার সুযোগ আছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের সুযোগ নেই। পরবর্তী হাটে অতিরিক্ত টোল আদায় না করার বিষয়ে হাট ইজারদারকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানান তিনি।