চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) ১৫ জুন পর্যন্ত ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৫৫২ জন কর্মী বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কাজের উদ্দেশ্যে গেছেন বলে জাতীয় সংসদে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজমের করা প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এ তথ্য জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উত্থাপিত হয়। বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী বলেন, গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে (১৫ জুন, ২০২২) ৯ লাখ সাত হাজার সাতজন বিদেশে গিয়েছিলেন। গত বছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ বেশি কর্মী বিদেশে গেছেন। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, জনশক্তি রপ্তানির উদ্দেশ্যে নতুন নতুন দেশের সঙ্গে চুক্তি সইয়ের পরিকল্পনা রয়েছে। বর্তমানে লিবিয়া, মাল্টা, আলবেনিয়া, রোমানিয়া ও সার্বিয়ার সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের কার্যক্রম চলমান। সরকারদলীয় সংসদ সদস্য নুরন্নবী চৌধুরীর প্রশ্নের জবাবে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী জানান, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ১৩ জুন পর্যন্ত এক লাখ ১৪ হাজার ৫২১ জন বিদেশগামীকে দুই হাজার ৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বিভিন্ন ধরনের অভিবাসন ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ঢাকা-১১ আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম রহমতুল্লাহর প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, চা শিল্পের উন্নয়নে বর্তমান সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছে। ফলে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯৩ দশমিক ৮৩ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদন করা হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত চা রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। তিনি বলেন, পূর্বে দেশে চায়ের অভ্যন্তরীণ চাহিদা উৎপাদনের তুলনায় কম ছিল। তখন বেশি চা উদ্বৃত্ত থাকতো এবং বেশি চা রপ্তানি হতো। বর্তমানে দেশে চায়ের চাহিদা প্রায় ১০০ মিলিয়ন কেজি। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় অভ্যন্তরীণ চাহিদাপূরণের জন্য দেশে উৎপাদিত সব চা ব্যবহৃত হয়। রপ্তানির জন্য খুব বেশি চা উদ্বৃত্ত থাকে না। চা রপ্তানি বাড়াতে গুণগতমানের চা উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার তথা চা বোর্ড নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনের সংসদ সদস্য দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বহির্বিশ্বের সঙ্গে আমদানি/রপ্তানির প্রয়োজনে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়। বাস্তবতার নিরিখে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাওয়ায় আমদানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৮৭৯ দশমিক ৫৬ মিলিয়ন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ছিল ১৬ হাজার ২৪২ দশমিক শূন্য ১ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ২৮ হাজার ১৩৭ দশমিক ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীর প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী জানান, বিশ্বের ২১টি দেশের ২৩টি শহরে বাংলাদেশের বাণিজ্য মিশন রয়েছে। সেগুলো হলো- ক্যানবেরা, ব্রাসেলস, বেইজিং, কুনমিং, প্যারিস, বার্লিন, নয়াদিল্লি, কলকাতা, তেহরান, টোকিও, ইয়াংগুন, কুয়ালালামপুর, মস্কো, সিউল, সিঙ্গাপুর, মাদ্রিদ, জেনেভা, দুবাই, লন্ডন, ওয়াশিংটনডিসি ও লস এঞ্জেলস। তিনি বলেন, অদূর ভবিষ্যতে ব্রাজিলের ব্রাসিলিয়ায়, তুরস্কের আঙ্কারাতে, মেক্সিকোর মেক্সিকো সিটি ও আফ্রিকা মহাদেশে বাণিজ্যিক উইং স্থাপনের কার্যক্রম চলমান। এছাড়া ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যাণ্ডে মিশন স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। সংরক্ষিত নারী সংসদ সদস্য আদিবা আনজুম মিতার প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ২০২৩ মৌসুমে ধান, সিদ্ধচাল ও গম সংগ্রহের জন্য সরকার নির্ধারিত মূল্য হলো- ধান প্রতি কেজি ৩০ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৪ টাকা এবং গম প্রতি কেজি ৩৫ টাকা। নোয়াখালী-২ আসনের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের প্রশ্নের জবাবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) ও গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচির আওতায় দেশের অধিক বজ্রপাতপ্রবণ ১৫ জেলায় ৩৩৫টি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন করা হয়েছে। তিনি জানান, দেশের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ১৫ জেলায় বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ছয় হাজার ৭৯৩টি বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপনের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করে অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে প্রেরণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদন হলে এগুলো স্থাপন করা হবে।