নিজস্ব প্রতিবেদক
দীর্ঘ ৫২ বছর পর নীলফামারীর চিলাহাটি থেকে ঢাকা রেলপথে ‘চিলাহাটি এক্সপ্রেস’ নামে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হলো। গতকাল রোববার সকাল ১০টায় গণভবন থেকে সবুজ পতাকা নাড়িয়ে এবং বাঁশি বাজিয়ে ভার্চুয়ালি এ ট্রেনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পর নীলফামারীর চিলাহাটি রেলওয়ে স্টেশন থেকে ট্রেনটি ৭৯২ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এ উপলক্ষে সকাল থেকে চিলাহাটি স্টেশন এলাকার আশপাশে জমায়েত হতে থাকে উৎসুক জনতা। তারা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত রেল যোগাযোগের উদ্বোধনের মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অনুষ্ঠানস্থল ছাড়াও প্রায় পাঁচ-সাত কিলোমিটারজুড়ে রেলপথের দুই ধারে দাঁড়িয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করলেন প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। ডোমার উপজেলার পূর্ব ভোগডাবুড়ি গ্রামের আজিজুল ইসলাম (৪৫) বলেন, ‘নীলফামারীবাসীর ৫২ বছরের অপেক্ষার আজ অবসান হয়েছে। তাই চিলাহাটি স্টেশনে সাধারণ মানুষের উপচেপড়া ভিড়। দীর্ঘদিন পর দিবাট্রেনটি চালু হওয়ায় দৃশ্যটি উপভোগ করতে এসেছি।’ একই উপজেলার গোসাইগঞ্জ গ্রামের আমির হোসেন (৫৫) বলেন, ‘রাত্রীকালীন নীলসাগর ট্রেনটি চালু হওয়ায় এই এলাকার মানুষের সার্বিক উন্নয়ন হয়েছে। পাশাপাশি চিলাহাটি এক্সপ্রেসের কারণে আমাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে। তাই আজ আমরা ভীষণ খুশি। এখন থেকে দিনের বেলা ঢাকায় যেতে পারবো। প্রধানমন্ত্রী ও রেলমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ জানাই।’ অনুষ্ঠানের জন্য স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় স্থাপন করা হয় প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার একটি তাঁবু। বেলা ১০টার দিকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। ওই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি বড় পর্দায় সেখানে দেখানো হয়। নতুন ট্রেনটি চিলাহাটি থেকে ছাড়বে সকাল ৬টায় আর ঢাকা পৌঁছাবে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে। আবার ঢাকা থেকে ছাড়বে বিকাল ৪টা ১৫ মিনিটে, চিলাহাটি পৌঁছাবে রাত ১টা ৪৫ মিনিটে। যাওয়ার পথে ডোমারে সকাল ৬টা ২০ মিনিটে, নীলফামারীতে ৬টা ৪০ মিনিটে, সৈয়দপুরে ৭টায়, পার্বতীপুরে ৭টা ৩০ মিনিটে, বিরামপুরে ৮টায়, জয়পুরহাট ৮টা ৩০ মিনিটে, সান্তাহারে ৯টা ১৫ মিনিটে, নাটোরে সকাল ১১টায় এবং ঢাকার বিমানবন্দর স্টেশনে ২টা ৩০ মিনিটে ও কমলাপুরে ৩টা ১০ মিনিটে পৌঁছাবে। অপরদিকে, ফেরার পথে ঢাকা থেকে বেলা ৪টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে। বিমানবন্দরে ৪টা ৪৫ মিনিটে, নাটোরে ৯টায়, সান্তাহারে ৯টা ৪৫ মিনিটে, জয়পুরহাটে ১০টা ২৫ মিনিটে, বিরামপুরে ১১টায়, পার্বতীপুরে ১১টা ৩০ মিনিটে, সৈয়দপুরে ১২টায়, নীলফামারীতে ১২টা ৩০ মিনিটে, ডোমারে ১টায় এবং চিলাহাটিতে ১টা ৪৫ মিনিটে পৌঁছাবে। চিলাহাটিপ্রান্তে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান নূর, সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার, সংসদ সদস্য রাবেয়া আলিম, জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মমতাজুল হক, পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি দেওয়ান কামাল আহমেদ, চিলাহাটি স্টেশন মাস্টার আশরাফ আলী প্রমুখ। ছাড়াও রেলপথ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আগামী ৭ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিলাহাটি-ঢাকা রেলপথে যাত্রী নিয়ে চলাচল শুরু করবে চিলাহাটি এক্সপ্রেস। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রেলকে ধ্বংস করেছিল বিএনপি-জামাত। আওয়ামী লীগ রেলকে পুনরুজ্জীবিত করেছে, রেললাইন সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন কোচ এবং লোকোমোটিভ এনে রেলের আওতা বাড়িয়েছে। এর ফলে নিরাপদ এবং স্বাচ্ছন্দ্যে গণপরিবহন হিসেবে ট্রেনে যাতায়াত করতে পারছেন যাত্রীরা।’ আগামীতে এশিয়ান রুটে রেল যুক্ত হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।