২১জুন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন। বৃহস্পতিবার মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫ স্বতন্ত্র মেয়রপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে মেয়র প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফয়সল কাদির বৈধ ও বাতিল প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। মনোনয়ন বৈধ হওয়া প্রার্থীরা হলেন- মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), হাফিজ মাওলানা মাহমুদুুল হাসান (হাতপাখা) ও মো. জহিরুল আলম (জাকের পার্টি), মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু (স্বতন্ত্র), মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন (স্বতন্ত্র)। মনোনয়ন বাতিল হওয়া মেয়রপ্রার্থীরা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তারা হলেন- সামছুন নুর তালুকদার, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন, মো. শাহজাহান মিয়া, মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলেও খুব তোড়জোড় নেই সাধারণ ভোটারের মাঝে ।বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন না করার ঘোষণার পর থেকেই ভোটের মাঠে চলে আসে নীরবতা । আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মাঠ একাই গরম করে রাখার চেষ্টা করলে ও দলের বাইরের সাধারণ ভোটার নির্বাচন নিয়ে আলাপ আলোচনাই বাদ দিয়ে দিয়েছেন, সবার এক কথা একদলীয় নির্বাচন কে পাশ করবে সেটাতো জানা-ই আছে।
সিলেটে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছিলেন মোট ১১ জন। এর মধ্যে দলীয় প্রতীকের প্রার্থী ৪ জন। তারা হলেন, মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (আওয়ামী লীগ), নজরুল ইসলাম বাবুল (জাতীয় পার্টি), হাফেজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান (ইসলামী আন্দোলন) ও মো. জহিরুল আলম (জাকের পার্টি)। চারটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের মধ্যে নির্বাচনী হলফনামা সবাই নিজেদের ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছেন। আর শিক্ষাগত যোগ্যতায় এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। তাদের একজন মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী স্নাতক ডিগ্রিধারী এবং আরেকজন প্রার্থী মাহমুদুল হাসান এল.এল.বি ডিগ্রিধারী। আর জাতীয় পার্টির মো. নজরুল ইসলাম (বাবুল) হলফনামায় নিজেকে ‘স্বশিক্ষিত’ বলে দাবি করেছেন। নির্বাচন কমিশনে (ইসি) মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রার্থীর ব্যক্তিগত তথ্যের পাশাপাশি তাদের আয়, আয়ের উৎস, স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, মামলা, দেনাসহ বেশ কিছু তথ্য দিতে হয়। তিনজন প্রার্থীই নিজেদের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দিয়েছেন। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর বিরুদ্ধে কোন ফৌজদারি মামলা না থাকলেও অপর দুই প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা ছিল এবং এখনো আছে। হলফনামায় আনোয়ারুজ্জামান উল্লেখ করেন, তার কাছে নগদ ৪১ লক্ষ ৮৪ হাজার ৮৪৮ টাকা রয়েছে। এছাড়া সম্পদ-সপ্তত্তির মধ্যে ২টি টিভি, ১টি ফ্রিজ, ২টি এসি, ৪৭ ভরি স্বর্ণ, ২ সেট সোফা, ৪টি খাট, ১টি টেবিল, ১০টি চেয়ার, ২টি আলমিরা রয়েছে। এছাড়া ৩ বিঘা কৃষিজমি, ২৩ শতক অকৃষি জমি, ১টি দালান ও ১টি এপার্টমেন্ট রয়েছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটা মামলা তদন্তাধীন। এ ছাড়া অতীতে তার বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হলেও সেগুলো থেকে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন। হলফনামায় নজরুল ইসলামের উল্লেখ করেন, তার কাছে নগদ ৫২ লক্ষ ৮৯ হাজার ১১০ টাকা এবং ব্যংকে রয়েছে ৫৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৮৯ টাকা রয়েছে। এছাড়া ১৫টি যানবাহন, ৩লক্ষ ২০ হাজার টাকার স্বর্ণ এবং ২ লক্ষ টাকার আসবারপত্র সহ কৃষিজমি, অকৃষি জমি, দালান ও এপার্টমেন্টের বিবরণ দেন তিনি। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী মাহমুদুল হাসানের বিরুদ্ধে বর্তমানে কোন মামলা না থাকলেও অতীতে তার বিরুদ্ধে একটা মামলা ছিল, এবং সেই মামলায় তিনি বেকসুর খালাস পেয়েছেন বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন। হলফনামায় মাহমুদুল হাসান উল্লেখ করেন, তার কাছে নগদ ১ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা এবং ব্যংকে রয়েছে ১ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া একটি মটর সাইকেল ও আসবারপত্রে বিবরণ দেন তিনি।বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় নির্বাচন নিয়ে পুরো আগ্রহটাই হারিয়েছে সাধারণ ভোটারদের। আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে এলে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সঙ্গে ভোটে তুমুল লড়াই হতো বলে মনে করেন নগরীর ভোটার এবং পর্যালোচকরা। মূলত এই তিনজনের মধ্যে যে লড়াই হবে সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জামানত হারাবেন এবং ভোটে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সঙ্গে জাতীয় পার্টির প্রার্থীর আকাশ পাতাল ব্যবধানে হবে বলে মনে করছেন সবাই। এর আগে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দু’বার কাউন্সিলর নির্বাচন করে দু’বারই গো-হারা হেরেছেন।