বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম নিদর্শন তালপাখা। কবে, কোথায় এই তালপাখার উৎপত্তি কেউ নির্দিষ্ট করে বলতে পারে না। সেই প্রাচীন কাল থেকে রাজা মহারাজাদের সময়ে তাল পাখা অনেক জনপ্রিয় ছিল। শীতের কাঁথা, বর্ষার ছাতা আর গরমের পাখা এটাই বহুকাল ছিল বাঙালির জীবনের অঙ্গ। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে এই ঐতিহ্যবাহী তাল পাখা।
তালপাখা তৈরি করতে ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী তাল গাছের ডাগুরসহ পাতার দরকার। তারপর সেগুলিকে ভাল করে পানিতে ধুয়ে রোদে শুকানো হয়। তারপর সেগুলোকে সমান মাপে কেটে নিয়ে বাঁশের চিকন কঞ্চির মধ্যে গেঁথে নানা রকম বুনন প্রক্রিয়া দ্বারা এই পাখা প্রস্তুত করা হয়। তালপাখা সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হত বিশ শতকের আগে। তখন গ্রামগঞ্জে প্রচুরসংখ্যক তালপাতার ব্যবহার লক্ষ করা যেত।
তালপাখা ওজনে হালকা, দেখতে সুন্দর এবং এর বাতাস অনেক বেশি শীতল যা গ্রীষ্মের দিনের তীব্র গরমে প্রশান্তি প্রদান করত। গ্রামের বাজারে ,নববর্ষের মেলায় বিক্রি হতো তালপাখা। গ্রামে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগার আগে মানুষ তালপাখা ব্যাপক ব্যবহার করত। মেহমান আসলে তাদের তালপাখার বাতাশে আমন্ত্রন জানানো হতো। গ্রীষ্মের তীব্র গরমে শান্তির হাওয়া পেতে তালপাখার জুড়ি মেলা ভার। রফিকুজ্জামানের লেখা ‘তোমার হাত পাখার বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে আসে’ গানটি বেশ জনপ্রিয়।
বর্তমানে তালপাখার ব্যাবহার কমে যাওয়ায় কমে গিয়েছে এর উৎপাদন। পাশাপাশি কমে গিয়েছে এর কারিগরের সংখ্যা। তবে দেশের অনেক স্থানে বাঙালির এই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখন স্বল্প পরিসরে তালপাখা তৈরি করে আসছে কারিগররা। খুচরা বাজারে একটি তালপাখা ৩৫ থেকে ৪০ টাকা বিক্রি করা হয় । এছাড়াও দেশের অনেক যায়গায় পাইকারি ও খুচরা তালাপাখার বাজার রয়েছে।
কিন্তু আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালীর এই প্রাচীন ঐতিহ্য। আগের চেয়ে চাহীদা কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমে গিয়েছে। গ্রামের নতুন প্রজন্মের কেউ এই পেশায় আসছে না। যার কারণে উৎপাদন কমে গিয়েছে। কারিগরেরা জানান বর্তমানে বাজার কমে যাওয়ায় পাখার উৎপাদনে প্রভাব পড়ছে। পাশাপাশি দেশে তালগাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় পাতার অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। অনেকে তালপাখার বদলে হাতপাখা ব্যাবহার করছেন। এভাবেই দেশের পাখাশিল্পের করুণ অবস্থা জানান পাখাশিল্পীরা।
লেখক: ঐশ্বর্য সরোয়ার অপূর্ব
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়