বিশ^বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সুলতান মেলা উপলক্ষে অন্য রকম ভালোবাসা প্রদর্শন করলেন সুলতান ভক্ত নড়াইল শহরের তাহিদুল ইসলাম আরজান। সুলতান মেলা থেকে কয়েক’শ গজ উত্তরে শহরের রূপগঞ্জ এলাকায় তার দোকান মিতালী ফার্মেসীর সামনে বিভিন্ন প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত হওয়া সুলতানের ওপর লেখা প্রতিবেদনের কাটিং এবং তার কাছে সুলতানের লেখা কয়েকটি চিঠি বিভিন্ন ব্যানারে প্রদর্শন করেছেন। ৭জানুয়ারী থেকে ২০ জানুয়ারী পর্যন্ত নড়াইলের সুলতান মঞ্চে শুরু হওয়া সুলতান মেলায় সুলতান ভক্ত আরজানের এ প্রদর্শনী সোমবার (১৬ জানুয়ারী) থেকে শুরু হয়েছে চলবে বুধবার (১৯ জানুয়ারী) পর্যন্ত। জানা যায়, শিল্পী সুলতান সারা জীবনই কৃষক,শ্রমিক ও সাধারন মানুষের সাথে ওঠাবসা, খানা-পিনা ও চলাফেরা করতেন। একই এলাকার মানুষ হওয়ায় আরজান বয়সে ছোট হলেও শিল্পী সুলতানের সাথে তার সখ্যতা ছিল। শিল্পী তার জীবদ্দশায় প্রায় প্রতিদিনই এই আরজানের দোকানে এসে বসতেন এবং গল্প করতেন। প্রয়াত এই শিল্পীর যে কোনো অনুষ্ঠানের খবর পেলে এখনও এই সুলতান প্রেমি সেখানে ছুটে যান। যে সুলতান একদিন বিশ্বকে কাঁপিয়েছেন,দেশকে বিশ্বের কাছে পরিচয় করিযে দিয়েছেন,সেই বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান বিভিন্ন সময় অভাব অনটনের মধ্য দয়ে দিন কাটিয়েছেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত অভাব তাকে তাড়া করে ফিরেছে। সুলতান নিজের ও পরিবারের জন্য, ওষুধ, প্রিয় শিশু ও পশু-পাখির জন্য, ঢাকায় যেতে, বাড়ির অতিথিদের জন্যসহ বিভিন্ন কারনে হাতে গোনা আপন দু’এক জনের কাছ থেকে টাকা ধার করেছেন তাদের একজন হচ্ছে নড়াইল শহরের সারজান। শিল্পী সুলতান শহরের রূপগঞ্জ এলাকার আরজানের মিতালি ফার্মেসির ওষুধের দোকানে প্রায় প্রতিদিনই বসতেন। অসুস্থতা বা কাজের কারনে অনেক সময় তিনি আসতে পারতেন না। শিল্পীর কাছে অর্থ না থাকলে বা সরকারি ভাতার টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় তার(সুলতানের) কাছের মানুষ বলে পরিচিত বানছা বিশ্বাস, ওসমান, বিষ্ণু বা কখনও দুলাল বা রহমানকে বাজার করতে আরজানের কাছে একটি চিঠি লিখে বাজারের ব্যবস্থা করে দিতে বলতেন। সেসব চিঠির ভাষা আর পাঁচটি চিঠির ভাষার মত নয়। শিল্পীর লেখা কয়েকটি চিঠিও প্রদর্শনীতে রাখা হয়েছে। সুলতান একটি চিঠিতে লিখেছেন,“ আরজান,পশু পাখিদের জন্য যন্ত্রনা আমার সহ্য হচ্ছে না, নিতান্ত অর্থাভাবে আছি। কোন রকম বাজার হচ্ছে না। কিছু ব্যবস্থা কর”। সুলতানের মৃত্যুর কিছু দিন পূর্বে ৯৪ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর লিখেছেন,“আরজান,বিষ্ণুকে পাঠালাম। অন্তত তিন শত টাকার সাহায্য করিও। একই সালের সালের ১২ সেপ্টেম্বর লিখেছেন,“ আরজান কিছু মনে কর না, এই অভাব একটু সুস্থ হলে আর থাকবে না। কারো কাছে বলা যায় না,চালিয়ে নিও”। ৯০ সালের ৩ এপ্রিল এক চিঠিতে লিখেছেন, শূন্যহাত,বাজার খরচ নাই। দুলালকে (সুলতানের পালিত পূত্র) ঢাকা পাঠাইয়াছি। হয়ত শিল্পকলা একাডেমি থেকে এক মাসের টাকা পাওয়া যাবে। তিন দিন পর আসবে। তুমি অন্তত দুই শত টাকা ওসমানের(সুলতানের বাসার কেয়ারটেকার) মারফৎ সাহায্য করিও। অন্যের জন্য লিখেছেন, “আরজান, কুড়ি টাকা রহমানকে দিয়া দিবা, অন্যথায় ওর বাজার হবে না। কদিন তোমাকে বার বার বিরক্ত করছি। মনে কিছু করিও না। এর পর দিন অন্য এক চিঠিতে লিখেছেন, “আরজান, বানছা বিশ্বাস আমাদের বাড়িতে বছর ভরে কাজ করে। খুবই বিস্বস্ত। ভালো মানুষ। ওর জন্য ৫০ টাকা প্রয়োজন”। ৯০ সালের ১২ সেপ্টেম্বর লিখেছেন, “ আরজান চাল কিনতে হবে। জীব জš‘র দুপুরে রান্না হবে না। কালকের মত একটু কষ্ট করে একটা ব্যবস্থা করিও”। একই বছরের ৩ অক্টোবর লিখেছেন, “আরজান, আজকের বাজারের ব্যবস্থা কোন ব্যবস্থা হল না। একটু কষ্ট করে দ্যাখ দেখি সম্ভব হয় কিনা। অন্যথায় জীবজš‘ নিযে মুস্কিল,ওদের জন্য একটু ভাব কিছু করতে পার কিনা”। এ রকম ৭০-৭৫টি চিঠি ৫/৬ বছর ধরে শিল্পী সুলতান তার প্রিয় আরজানের কাছে লিখেছেন। সাহায্যের এসব চিঠির জন্য আরজানের কখনও আপত্তি ছিল না বরং তিনি গর্ববোধ করেন। অনেক চিঠি হারিয়ে ফেললেও ৪৫টির মতো চিঠি তিনি লেমিনেশন করে বাঁধিয়ে রেখেছেন। তাহিদুল ইসলাম আরজান বলেন, সুলতান কাকু আমাকে নিজ সন্তানের মত স্নেহ করতেন। মাঝে মধ্যেই তিনি টাকা ধার নিতেন। কিছু অর্থ পরিশোধ করেছেন। কিছু শোধ করতে পানেন নি। সবচেয়ে বড় কথা হলো একজন মহান ব্যক্তিকে সাহায্য করতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ করি। তার প্রতি এই শ্রদ্ধাবোধ এবং ভালোবাসা থেকেই এ রিপোর্ট ও চিঠি প্রদর্শন করেছি।
###