মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের আয়োজনে সম্প্রতি রাজধানী বনানীতে ‘অঙ্কুর’ শীর্ষক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদর্শনীটি ২০ নভেম্বর হতে এশিয়াটিক সেন্টারের ‘বাতিঘর – স্মৃতিতে স্মরণে আলী যাকের’-এ অনুষ্ঠিত হচ্ছে (বাড়িঃ ৬৩, রোডঃ ৭/বি, ব্লকঃ এইচ, বনানী)।
আমাদের দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লক্ষ শিশু রক্ত বা অস্থিমজ্জার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়; যার মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ শিশু সুস্থতা অর্জন করতে পারে। আক্রান্ত শিশুদের প্রতি সবার সহমর্মিতা বৃদ্ধিতে এবং পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে ‘অঙ্কুর’ শীর্ষক প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। প্রদর্শনীতে আলোকচিত্রী ফারহানা সেতুর ধারণ করা অসামান্য আলোকচিত্রের প্রদর্শণ হচ্ছে।
আক্রান্ত শিশুদের স্বপ্ন ও দর্শনের প্রতিচ্ছবি প্রদর্শনীর মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন আলোকচিত্রী। শিশুদের কষ্ট বা অবহেলার ব্যাপারে আমরা অনেকেই বোধগম্য নই কিংবা সচেতন নই।
ঢাকা-ভিত্তিক ফটো সাংবাদিক ও ডকুমেন্টারি ফটোগ্রাফার ফারহানা সেতু শিশুদের মনের অন্তস্থলে রেখে দেয়া লালিত এবং চাপা স্বপ্ন আমাদের সম্মুখে হাজির করেছেন। যেখানে বাচ্চারা মনে মনে নিজেদের ধারণ করে অন্য একটি মাত্রায়।
ফারহানা সেতুর এই আলোকচিত্রগুলো আমাদেরকে বাচ্চাদের দুর্দশা কিংবা দুঃখ দেখায় না। বরং দেখায় কিছু নরম মনের প্রতিফলন। যা হয়ত এতদিন সেই শিশুটি ছাড়া অন্য কেউ জানতে পারেনি।
আলোকচিত্রগুলো আমাদেরকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। বুঝতে শেখায় যে আমরা শিশুদের সাথে অন্য মাত্রায় গিয়ে কিভাবে মিশতে পারি। তাদের হাত ধরতে পারি। হয়ত এই শিশুটি কিছুদিন পর পৃথিবীতে আর তার ছায়া নিয়ে বিচরণ করবে না। তবে তারও কিছু স্বপ্ন ছিল, যেমন কোমল মনেরও কিছু দর্শণ থাকে।
এ বিষয়ে এশিয়াটিক থ্রিসিক্সটি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আসাদুজ্জামান নূর বলেন, “মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশন তৈরির মূল উদ্দেশ্য ছিল সাংস্কৃতিক ও মানবহিতৈষী বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকা। আলী যাকের সম্পর্কে আপনারা জানেন, তিনি এক দিকে বিজ্ঞাপন জগতের একজন দিকপাল ছিলেন। অন্যদিকে নাটকের জগতেও তিনি একজন পথপ্রদর্শক ছিলেন। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশে দর্শনীর বিনিময়ে নাট্যপ্রদর্শন আলী যাকেরের হাত ধরেই শুরু হয়। গাড়ি নিয়ে গ্রাম-গঞ্জে ঘুওে বেড়ানো এবং বুনো ফুলের ছবি তোলা ছিল তার নেশা। আমি অন্তত তাকে নানাভাবে দেখেছি। এসবের ভেতর থেকে যে মানুষটা সবচেয়ে বড় হয়ে ওঠে, তা হলো একজন মুক্তিযোদ্ধা আলী যাকের। এই দেশ এবং দেশের মানুষকে তিনি খুব ভালোবাসতেন। তিনি সব সময় তার সীমিত সামর্থ্যের মধ্যে থেকে মানুষের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা কিছু কাজ করার চেষ্টা করছি। আজকের প্রদর্শনী তার মধ্যে অন্যতম।”
এ প্রদর্শনী বিষয়ে মঙ্গলদীপ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইরেশ যাকের বলেন, “বাতিঘরে উন্মুক্ত গ্যালারি বানানোর পেছনে আমাদের যে আকাঙ্খা ছিল, সেটা হলো বাংলাদেশ কিংবা ঢাকা শহরে এখন নতুন এবং সম্ভাবনাময় শিল্পী, যেমন আলোকচিত্রী বা ভাস্করদের স্বল্প বা বিনা খরচে নিজেদের কাজ সবার সামনে তুলে ধরার সুযোগ নেই। তথ্য-প্রযুক্তির এ যুগে অনেক কিছুই ভার্চুয়াল জগতে হচ্ছে, তারপরও শিল্প প্রত্যেকের জন্য স্বশরীরে এসে দেখাটাই জরুরি। আমরা বাতিঘরের মাধ্যমে তরুণ এবং প্রতিভাবান শিল্পীদের জন্য এমন সুযোগ নিশ্চিত করতে চাই। সে লক্ষ্যেই আমরা অঙ্কুরের আয়োজন করেছি। এটাই শেষ নয়, আমরা আশা করছি ভবিষ্যতে বাতিঘর এবং বাতিঘরের বাইরে তরুণ ও প্রতিভাবান শিল্পীদের দক্ষতা প্রকাশে আরো কিছু প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে পারব”।
প্রদর্শনীটি চলবে আগামী ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত । প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনীটি সবার জন্য উন্মুক্ত।