নরসিংদী রেলস্টেশনে পোশাক নিয়ে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া নারীর জামিন শুনানিতে পোশাকের বিষয়ে কিছু মন্তব্য করেছিলেন হাইকোর্ট। এই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানায় দেশের নারী অধিকার ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো।
এরই প্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গত ১ সেপ্টেম্বর ‘যেমন খুশি তেমন পর’ নামে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। যেখানে পোশাকে বৈচিত্র্যতাকে স্বাগত জানানো হয়।
কর্মসূচিতেই অংশ নেওয়া এক তরুণীর ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি সংক্রান্ত একটি বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। কেউ কেউ তার পক্ষ নিলেও, বেশ কিছু পোস্টে তার বিরোধিতাও করা হয়েছে। তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ট্রল ভিডিও।
তবে এবার সেই তরুণীর পক্ষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরীন। তসলিমা তার ফেসবুকে সেই তরুণীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, আমি এই ব্লাউজবিহীন শাড়ি পরা সাহসী মেয়েটিকে স্যালুট দিচ্ছি।
তসলিমা নাসরীনের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো–
মেয়েরা যেন ছোট পোশাক না পরে, এই উপদেশ দিতে কিছু অশিক্ষিত, অসভ্য লোক তাদের অশ্লীল ব্যানার নিয়ে ঢাকার পথে নেমেছিল। তার প্রতিবাদে একটি মেয়ে ব্লাউজ ছাড়া শাড়ি পরে প্রতিবাদ করেছে। বলেছে তার নানি-দাদিকে সে ব্লাউজ ছাড়াই শাড়ি পরতে দেখেছে, কেউ কেউ মেয়েটির পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের এক টাকার নোট দেখিয়েছে, যে নোটে ব্লাউজবিহীন একটি গ্রামের মেয়ের ছবি ছাপানো।
অথচ শহরের একটি মেয়েকে ব্লাউজ ছাড়া হাঁটতে দেখে অভুক্ত পুরুষের চোখ দিয়ে লালা ঝরেছে, অভুক্ত মেয়েদের চোখ দিয়ে হিংসে ঝরেছে।
তিনি বলেন, আমি এই ব্লাউজবিহীন শাড়ি পরা সাহসী মেয়েটিকে স্যালুট দিচ্ছি। নষ্ট সমাজকে বদলানোর জন্য সাহসী মানুষের প্রয়োজন। অশিক্ষিত অসভ্য লোকদের চোখে জ্বালা ধরানোর জন্য, কানে তালা লাগানোর জন্য, নাকে ঝাঁঝালো গন্ধ দেওয়ার জন্য, মুখের ‘রা’ বন্ধ করার জন্য, উত্থানরহিত করার জন্য কিছু করা দরকার সব সময়। না হলে ওদের নিশ্বাসে কলুষিত হবে আকাশ-বাতাস। সমাজ পচে যাবে, মানুষের মৃত্যু হবে।
তসলিমা নাসরিন আরও বলেন, বাঙালির পোশাক আদিকাল থেকেই স্বল্প। ব্লাউজ জিনিসটা একেবারেই নতুন, ব্রিটিশের নিয়ে আসা। যত কম পোশাক পরবে নারী-পুরুষ, ততই বাঙালিত্ব বাঁচবে। যখন নোংরা ধর্মযুদ্ধ চলছে, ধনীরা ঠকাচ্ছে গরিবদের, যখন লোভ লালসা হিংসে দ্বেষে অন্যায় অবিচারে পৃথিবী দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে, ক্রমশ মেকি হয়ে পড়ছে, তখন কিছু অশিক্ষিত লোক মেতে আছে মেয়েদের কাপড়-চোপড় নিয়ে, মূলত মরিয়া হয়ে উঠছে মেয়েদের বোরকা পরিয়ে নিজেদের ধর্মীয় রাজনীতির স্বার্থ উদ্ধার করতে।
এদের বিষাক্ত নিশ্বাস আজ ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। এই অসভ্যদের নিশ্চিহ্ন করতে হলে ওই মেয়েটির মতো লাখো কোটি সাহসী মেয়ে দরকার, শিক্ষিত সভ্য ছেলে দরকার।