অবশেষে শেষ হলো ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা। বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাত থেকেই পূর্ব সুন্দরবনে জেলেদের মাছ ধরার অনুমতি মিলেছে। এরই মধ্যে জেলেরা মাছ আহরণের সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন।
প্রজনন মৌসুমকে ঘিরে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে ৩ মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকায় শরণখোলার প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার জেলে পরিবার নিদারুণ অর্থ কষ্টে পড়ে অনেক দেনায় জড়িয়েছে। এতে চরম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে জেলে পরিবারগুলো।
এদিকে ৩ মাস বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার থেকে মাছ ধরার অনুমতি পেয়ে সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজার হাজার জেলে পরিবারে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে।
পূর্ব বন বিভাগ ও জেলেদের সূত্র জানিয়েছে, বনভূমির অর্ধেকেরও বেশি অর্থাৎ ৫১ শতাংশ বনই হচ্ছে সুন্দরবন। প্রায় ৬ হাজার ১১৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই সুন্দরবনে ছোট-বড় মিলিয়ে ৪৫০টি নদী-খাল রয়েছে। রয়েছে সুন্দরী, গেওয়া, গরান, পশুরসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রল হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। নদ-নদীতে রয়েছে বিলুপ্তপ্রায় তালিকায় থাকা ইরাবতীসহ ৬ প্রজাতির ডলফিন, কুমির ও ২১০ প্রজাতির মাছ। বনাঞ্চলের এ জলাভূমির মধ্যে অভয়ারণ্য ঘোষিত ৩০টি খাল এবং ২৫ ফুটের কম প্রশস্ত খালে সারা বছরই মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে। আর বাকি অংশের নদী-খাল ও জলাভূমিতে বনবিভাগ থেকে পাশ-পারমিটধারী জেলেরা মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে।
সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন রক্ষায় বনবিভাগ প্রজনন মৌসুম দুই মাসকে পরিবর্তন করে তিন মাস মাছ ধরা বন্ধের যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে সেটিকে আমি স্বাগত জানাই। এ উদ্যোগকে বাস্তবায়ন করার জন্য বনবিভাগের নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। যেন জেলে সেজে বনের গহীনে গিয়ে বিষ প্রয়োগ করতে না পারে।
পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. বেলায়েত হোসেন জানান, আগে জুলাই ও আগস্ট এ দুই মাস সুন্দরবনের মৎস্য প্রজনন মৌসুম। কিন্ত এক মাস বাড়িয়ে তিন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। তাই বনের অভ্যন্তরে মাছের বংশ বিস্তারের জন্য কোনো প্রকার মৎস্য শিকার বা আহরণ করা সরকারের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ তিন মাসে বন বিভাগ থেকে জেলেদের কোনো প্রকার পাশ-পারমিট দেওয়া হয় না। তবে সে সব জেলেরা বনের উপর নির্ভরশীল তাদের জন্য সরকার জেলে কার্ডের মাধ্যমে পর্যাপ্ত সহায়তা করে আসছে, যেন বনে মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময় তারা অনাহারে না থাকে।
বৃহস্পতিবার থেকে অভয়ারণ্য এলাকা ব্যাতিরেখে জেলেরা বন বিভাগের পাশ-পারমিট নিয়ে পুনরায় বনের নদী-খালে মাছ আহরণ করতে পারবে। তবে বিষ প্রয়োগ করে যে সব জেলেরা বনের ভিতরে মাছ শিকার করার চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে বনবিভাগের পৃথক টিম গঠন করা আছে। তাদেরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, বনের বিষ দস্যুদের কঠোর হস্তে দমন করা হবে বলে জানান বনের এ বিভাগীয় কর্মকর্তা।