ডিজেলের ওপর আরোপিত সমুদয় আগাম কর থেকে অব্যাহতি এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশের পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করার ফলে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করা হয়েছে। এর প্রেক্ষিতে সরকার বাস ভাড়া সমন্বয় করতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির ‘সম্মতি’ রয়েছে বলে সমিতির পক্ষে সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন।
সড়ক পরিবহন নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে জানা গেছে, ভাড়া সমন্বয়ের জন্য বৈঠকের বিষয়ে সংস্থার পক্ষ থেকে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে তেলের মূল্যহ্রাসের কারণে ভাড়া সমন্বয়ের বিষয়ে সংস্থা ভাবছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ রাতে রাইজিংবিডিকে বলেন, সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোয় যানবাহনের ভাড়াও কমতে পারে। এ বিষয়ে দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমরা বাস ভাড়া কমাতে প্রস্তুত আছি।
তবে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো বা কমানোর সিদ্ধান্ত নিতে হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা নিতে হয়। তাই এখনই এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেই বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
চলতি মাসের শুরুতে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বাস বাড়া ১৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ে। এখন দূরপাল্লার বাসে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ২.২০ টাকা, মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২.৫০ টাকা, মিনিবাসে ২.৪০ টাকা ভাড়া হবে। আগে ভাড়া ছিল দূরপাল্লার বাসে ভাড়া কিলোমিটারপ্রতি ১.৮০ টাকা, মহানগর পর্যায়ে কিলোমিটারে বাসে ২.১৫ টাকা, মিনিবাসে ২.১০ টাকা। সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা। এতে বাস ভাড়া ১৬ থেকে ২২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ছয় বছর আগে ২০১৬ সালের এপ্রিলে ডিজেলের দাম ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা করে। তখন দাবি উঠলেও বাস ভাড়া কমেনি। বিআরটিএ থেকে বাস ভাড়া কিলোমিটারে ৩ পয়সার মতো কমানোর সিদ্ধান্ত আসে, যেটি আসলে প্রভাব পড়ার মতো নয়। এবারও দাম কমানোর ব্যাপারে অনেকে শঙ্কা প্রকাশ করছেন। তবে জোর দাবি জানাচ্ছেন ভাড়া কমানোর। কারণ গত কয়েক মাসে শুধুমাত্র জ্বালানি তেলের অজুহাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ অধিকাংশ পণ্যের এবং সেবার মূল্য বেড়েছে। তাই পরিবহন ভাড়া কমানো জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) সূত্র জানিয়েছে, বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর ডিজেলের দাম মোট ৬ দফায় ৩৯ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আর এক দফায় ৩ টাকা হারে কমানো হয়েছে। তবে কখনই একসঙ্গে এতো বেশি পরিমাণে দাম বাড়ানো হয়নি। ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি ৭ টাকা হারে বাড়ানো ছিল সর্বোচ্চ রেকর্ড। বর্তমান সরকারের সময়ে সর্বশেষ ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি ডিজেল-কেরোসিন লিটার প্রতি ৭ টাকা বাড়িয়ে ৬৮ টাকা করা হয়। এর আগে, ২০১১ সালে ৪ দফায় দাম বাড়ানো হয় সর্বসাধারণের ব্যবহৃত এই পণ্যটি। প্রথম দফায় ৬ মে লিটারে দুই টাকা ৪৬ টাকা করা হয়, দ্বিতীয় দফায় ১৯ সেপ্টেম্বর ৫ টাকা বাড়িয়ে ৪৯ টাকা, ১১ নভেম্বর ৫ টাকা বাড়িয়ে ৫৬ টাকা এবং ৩০ ডিসেম্বর লিটার প্রতি ৫ টাকা বাড়িয়ে ৬১ টাকা করা হয়। আর ২০১৬ সালের এপ্রিলে ৩ টাকা কমিয়ে ৬৫ টাকা করা হয়।
এ ছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে গত ৫ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে ভর্তুকি কমানোর কথা বলে সব ধরনের জ্বালানি তেলের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয়। সেদিন প্রতি লিটার ডিজেল ও কেরোসিন ৮০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলের মূল্য ৮৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, কিছুটা কর কমানোয় জ্বালানি তেলের মূল্যে সমন্বয় করা হলো। বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমলে আবারও সমন্বয় করা হবে।
প্রসঙ্গত, ডিজেল-অকটেন-পেট্রোল-কেরোসিনের দাম লিটারে ৫ টাকা করে কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার। সোমবার (২৯ আগস্ট) রাত ১২টা থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের ভেতর ডিজেলের লিটার ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা মূল্য ১০৯ টাকা, কেরোসিন ১০৯ টাকা, অকটেন ১৩০ টাকা ও পেট্রোল ১২৫ টাকায় বিক্রি হবে।