পচা দুর্গন্ধটা দুদিন ধরেই নাকে আসছিল বাড়ির সবার। কিন্তু কে জানত ওই দুর্গন্ধ তাদেরই কোনো স্বজনের পচা লাশের। সেই দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে পিন্টু দেবনাথ খুঁজে পেলেন ভাইয়ের লাশ আর স্ত্রীর দুর্গন্ধযুক্ত পরকীয়ার ইতিহাস।শনিবার (৫ ডিসেম্বর) ভোররাতে চট্টগ্রামের টেরিবাজারের আফিমের গলিতে পিন্টু দেবনাথের বাসার খাটের নিচ থেকে ২৪ বছর বয়সী মামাতো ভাই মাধব দেবনাথের লাশ উদ্ধার করা হয়। লাশ উদ্ধারের একদিনের মাথায় চাঞ্চল্যকর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে পুলিশ। হত্যার দায় স্বীকার করে রোববার (৬ ডিসেম্বর) আদালতে জবানবন্দি দেন ভাবি বীথি দেবনাথ।
বীথি দেবনাথ আদালতকে জানান, শারীরিক সম্পর্কের কৌশলে তিনি একাই তার মামাতো দেবর মাধব দেবনাথকে খুন করেছেন। এর আগে বীথির সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ ছিলেন স্বর্ণের দোকানের কারিগর মাধব দেবনাথ (২৪)। কিন্তু সেই সম্পর্কের সূত্রে মাধব বীথিকে ফাঁদে ফেলে। বিশেষ মুহূর্তের ছবি পৌঁছে দেন ফেসবুকের মাধ্যমে তার স্বামী পিন্টু দেবনাথের কাছে। ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়ে বীথি মাধবকে বাসায় ডেকে নিয়ে শারীরিক সম্পর্কের কৌশলে খুন করেন। পরে সেই মরদেহ তিনদিন খাটের নিচে রেখে স্বাভাবিক জীবনযাপনও করেন।
রোববার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সরওয়ার জাহানের আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে বীথি বলেন, ‘ঘটনার দিন (২ ডিসেম্বর) রাত আনুমানিক পৌনে ১০টার দিকে বিদ্যুৎ চলে গেলে আমার দেবর, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ সবাই বাসার বাইরে চলে যায়। এ সময় হঠাৎ আমার রুমে আমি মাধব দেবনাথকে দেখতে পাই। এক পর্যায়ে মাধব আমাকে বলে, ও যেভাবে আমাকে চায় ওভাবে ওকে দিতে হবে। ওর কথা শুনতে হবে, নইলে ওর নিকট আমার যে ভিডিওগুলো আছে সেগুলো আমার ভাই, কাকা আত্মীয়-স্বজনকে দিয়ে আমাকে চরিত্রহীনা বানাবে।’
‘তখন আমার মাথায় আসে, এখান থেকে বের হয়ে যেতে পারলে সে যে কাউকে আবারও ভিডিওগুলো দেখাতে পারে। তাই আমি মনস্থির করি যে, তাকে মেরে ফেলতে হবে। তাকে মারার কৌশল হিসেবে আমি তার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেই এবং বলি, তুমি যেভাবে চাইবে সেভাবে হবে।’‘আমি তাকে কৌশলে ফ্লোরে শোয়াই। আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী একটি গামছা দিয়ে ওর মুখ বেঁধে ফেলি। এক পর্যায়ে আমি গামছা দিয়ে ওর গলা চেপে ধরি। দুই মিনিট পর দেখি ওর চোখ থেকে পানি পড়ছে। নাক ও মুখ থেকে ফেনা বের হলে আমি গলা ছেড়ে দেই এবং ওর পা খাটের নিচে ঢুকাই। পরে পুরো শরীর ঠেলে ঢুকিয়ে দিই’-বলেন বীথি দেবনাথ।
কোতোয়ালি থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মরদেহ খাটের নিচে রেখে বীথি বুধবার রাতে ঘুমান। পরদিনও স্বাভাবিক খাওয়া-দাওয়া করেন। শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) দুপুরে খাওয়া-দাওয়ার পর তার শাশুড়ি দুর্গন্ধ টের পান। সন্ধ্যার দিকে পিন্টু বাসায় ফিরে খাটের নিচে মোবাইলের আলো জ্বেলে দেখতে পান, মরদেহ পড়ে আছে। পরে পুলিশকে খবর দেয়া হয়।’বীথির জবানবন্দির বরাত দিয়ে ওসি বলেন, ‘নগরের আফিমের গলির চারতলা ভবনের নিচতলার ফ্ল্যাটে মা-বাবা, স্ত্রী ও দুই ভাইকে নিয়ে থাকেন পিন্টু দেবনাথ। তার ফুপাতো ভাই মাধব হাজারি গলির একটি গয়নার দোকানে কারিগর হিসেবে কাজ করতেন। একসময় সে তাদের বাসায় টাকার বিনিময়ে খেত।
মাঝে একবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে বীথি আর তার শাশুড়ি সেবা-যত্ন করে মাধবকে সারিয়ে তোলেন। তখনই ২২ বছর বয়সী বীথির সঙ্গে মাধবের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে, যা শারীরিক সম্পর্ক পর্যন্ত গড়ায়।এক সময় আর্থিক বিবাদে জড়িয়ে বীথির বাসায় আসা বন্ধ হয়ে যায় মাধবের। তাই সে বীথিকে বাইরে দেখা করার জন্য চাপ দেয়। না হলে বীথির অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়। বীথি দেখা করলেও মাধব ফেসবুকের একটি ফেক আইডি থেকে অশ্লীল ভিডিও স্বামী পিন্টুকে পাঠায়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মাধবকে হত্যার পরিকল্পনা করেন বীথি। ২ ডিসেম্বর মাধব বীথির বাসায় গেলে বীথি শারীরিক সম্পর্কের কৌশলে হাত-পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করেন।