গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ে (বশেমুরকৃবি) দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ ফলনশীল সয়াবিনের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে। বশেমুরকৃবি’র কৃষিতত্ত্ব বিভাগের বিইউ সয়াবিন-২ নামে সম্প্রতি সয়াবিনের এ উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়। কৃষিতত্ত্ব বিভাগে, তাইওয়ানে অবস্থিত অংরধহ ঠবমবঃধনষব জবংবধৎপয ধহফ উবাবষড়ঢ়সবহঃ ঈবহঃবৎ (অঠজউঈ), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ও দেশের নোয়াখালী এলাকা থেকে, প্রায় ২০০ জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে ২০০৫ সাল থেকেই বিভিন্ন আঙ্গিকে সয়াবিন নিয়ে গবেষণা চলছে। এ পর্যন্ত সয়াবিন উৎপাদনের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের লক্ষে ছয় জন ছাত্র পিএইচ.ডি ও বার জন ছাত্র এম.এস ডিগ্রী অর্জন করেছেন। তাদের ধারাবাহিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, অঠজউঈ থেকে সংগৃহীত অএঝ ৩৮৩ জার্মপ্লাজমটি, যা বিইউ সয়াবিন-২ নামে অবমুক্ত করা হয়েছে। উচ্চ ফলনের পাশাপাশি এ জাত খরা, জলাবদ্ধতা ও ঝড়ো হাওয়ায় হেলে পরা প্রতিরোধী (ষড়ফমরহম ৎবংরংঃধহঃ)। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাইক্লোন থেকে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও ঝড়ো হাওয়ায় হেলে পড়ার কারণে অন্যান্য জাতের তুলনায় বিইউ সয়াবিন-২ অনেক কম ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
জাতটি উদ্ভাবন টিমের প্রধান প্রফেসর ড. আব্দুল করিম জানান, কৃষি মন্ত্রনালয় কর্তৃক জাতটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করার পূর্বে বশেমুরকৃবিসহ নোয়াখালী জেলার কমলনগর ও সুবর্ণচর উপজেলা, টাঙ্গাইল জেলার ভূয়াপুরের চর এলাকা এবং গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় জাতটির উপযোগীতা যাচাই করা হয়। জাতটির গড় ফলন পাওয়া গিয়েছে প্রতি হেক্টরে ৩.৫ মে: টন। তবে গোবিন্দগঞ্জ ও কমলনগরে এর ফলন ছিল যথাক্রমে ৪.৭ ও ৪.৪ মে: টন, যা এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ এবং বিশে^র সবচেয়ে বেশী ফলনশীল জাতের সাথে তুলনীয়। জাতটির ১০০০-বীজের ওজন ২২০ গ্রাম, যা বাংলাদেশের বিদ্যমান যে কোন জাতের চেয়ে বেশী। এর বীজে নাইট্রোজেনের পরিমাণ ৮.৯ শতাংশ যা প্রায় ৫৬ শতাংশ প্রোটিনের সমতূল্য। রবি মৌসুমে এর জীবনকাল ১০০ দিন এবং খরিফ-২ মৌসুমে ৯০ দিনেই পরিপক্ক হয়। উল্লেখ্য ইতিপূর্বে ২০১৪ সালে বশেমুরকৃবি এর কৃষিতত্ত্ব বিভাগ থেকে বিইউ সয়াবিন-১ নামে খর্বাকৃতি ও অপেক্ষাকৃত কম সময়ে পরিপক্ক (ংযড়ৎঃ ফঁৎধঃরড়হ) একটি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে, যা কৃষক পর্যায়ে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটাতে এবং সয়াবিনের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নতুন জাত বিইউ সয়াবিন-২ বিশেষ ভুমিকা রাখতে সক্ষম হবে।