বরিশাল প্রতিনিধি
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেলায় ফাতেমা বেগম (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের সার্জারি ওয়ার্ডে শনিবার বিকেলে এই বিয়োগান্তের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রোগীর স্বজনদের নার্সদের ওপর চড়াও হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে মেডিকেলে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণসহ রোগীর স্বজনদের আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। অবশ্য রোগী মৃত্যুর এই ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও তদন্ত করে কারও অবহেলা প্রমাণিত হলে শাস্তির কথা জানিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বরগুনার সদর ডলুয়া গ্রামের বাসিন্দা ও বরিশাল শহরের বৌদ্যপাড়া এলাকার ভাড়াটিয়া বাদশা হাওলাদারের স্ত্রী ফাতেমা বেগম পিত্তে পাথর অপারেশন করার জন্য শুক্রবার শেবাচিম হাসপাতালের তৃতীয় তলায় মহিলা সার্জারি ২ ওয়ার্ডে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা গ্রহণ করছিলেন।
রোগীর স্বজনেরা জানায়, শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ফাতেমা বেগমের আকস্মিক শাসকষ্ট দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্স সিথি দাস তাকে অক্সিজেন দেন। কিন্তু এরপরেও রোগী ছটফট করতে থাকলে স্বজনেরা বিষয়টি নার্সদের অবহিত করেন এবং তাদের এসে দেখতে বলেন। এতে নার্স সিথি দাস ক্ষুব্ধ হয়ে তাদের গালিগালাজ দেওয়াসহ হুমকি ধামকিও প্রদান করেন। উপায়ান্ত না পেয়ে স্বজনেরা ডাক্তার ডেকে আনতে যান, কিন্তু ডাক্তার আসার আগেই রোগীর মৃত্যু ঘটে। ফাতেমা আক্তারের স্বামী বাদশা হাওলাদারের অভিযোগ, তার স্ত্রীকে অক্সিজেন দেওয়ার ক্ষেত্রে ত্রুটি ছিল। ফলে তার স্ত্রী অক্সিজেন পাননি। এই বিষয়টি প্রত্যক্ষ করার পরে তারা নার্স সিথি দাসকে অবহিত করেন। কিন্তু তিনি এতে ক্ষেপে গিয়ে উল্টো গালাগালি করে এবং হুমকি ধামকি দেন। পরে ডাক্তার ডেকে আনার আগেই ফাতেমা মৃত্যু কোলে ঢলে পড়েন। মেডিকেল পুলিশের ইনচার্জ নাজমুল জানান, এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে হাসপাতাল নার্স-স্টার্ফ ও রোগীর স্বজনদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। একপর্যায়ে রোগীর স্বজনেরা নার্স সিথি দাসের ওপর চাড়াও হওয়ার খবর পেয়ে ছুটে গিয়ে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করেন। এসময় তাদের আইনি সহায়তা দেওয়ার অভয় দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। তবে রোগী মৃত্যুর ঘটনায় সিনিয়র নার্স সিথি দাস দায়িত্ব অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করলেও হাসপাতাল পরিচালক ডা. মোহাম্মদ বাকির হোসেন বলছেন বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হওয়ার পরে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। এই বিয়োগান্তের ঘটনায় নার্সের বিরুদ্ধে উত্থ্যাপিত অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে তিনি। এদিকে নিহত ফাতেমা বেগমের স্বামী বাদশা হাওলাদার জানান, এই ঘটনায় কোতয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা গ্রহণ প্রস্তুতি চলছে।