কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা যৌবনে টইটম্বুর। বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে থাকা বানভাসীদের দুর্ভোগ বেরে উঠেছে। বন্যা কবলিত এলাকা গুলোতে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, গো-খাদ্য ও শিশু খাদ্যের সংকট তীব্র হয়ে উঠছে। ঘরে খাবার না থাকায় এবং ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় চরম খাদ্য কষ্টে ভুগছেন বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে থাকা বানভাসিরা।
সরকারিভাবে জিআর ও ভিজিএফের খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দিলেও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তুলনায় বরাদ্দের পরিমাণ খুবই কম। এ কারণে অধিকাংশ মানুষ সরকারি ত্রাণ থেকে বঞ্চিত থাকছেন। ইউপি চেয়ারম্যানরা জানায়, জিআর চালের বরাদ্দ এতই কম যে তাদের পক্ষে এত কম মাল নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এদিকে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত চিলমারী পয়েন্টে ব্রম্মপুত্রের পানি ৭৮ ও নুনু খাওয়া পয়েন্টে ৬৩ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও পানি স্থির অবস্থায় ছিল। ধরলা নদীর পানি ব্রীজ পয়েন্টে দুই সেন্টিমিটার কমে ৫৮ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি ৪ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো’র সূত্র জানিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি এখনও অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোর বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি দীর্ঘ সময় ধরে পানির নিচে তলিয়ে থাকায় তা ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এসব এলাকার মানুষজন প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। বন্যাকবলিত এলাকার সর্বত্রই গো-খাদ্যের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের মনছের আলী জানান, টানা ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যার পানিতে পড়ে আছি। কাজ-কাম নাই। ঘরে খাবার নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানও কিছু দেয় না। বন্যার আগে ভাইরাসের কারণে তো কোথাও যেতেও পারিনি। এক কথায় খুব কষ্টে আছি।
কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কে আশ্রয় নেয়া এনতাজ, মনসের, একাব্বর ও কোবাদ আলী জানান, ১৫ দিন ধরে এই সড়কে গরু, ছাগল নিয়ে অবস্থান করছি। নিজের খাবারের কষ্ট। তার উপর গরু, ছাগলের খাবার। সবমিলে আমাগো চরম কষ্টে দিন যাচ্ছে ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকায় পানিতে তলিয়ে আছে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি নলকূপ।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ১ মাসে পানিতে ডুবে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জনই শিশু।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল সম্পূর্ণ রুপে নষ্ট হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. রেজাউল করিম জানান, এ পর্যন্ত জেলায় বন্যার্তদের জন্য ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর নগদ টাকা ৯ লাখ, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।