গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস সংগ্রহ ও রস থেকে পাটালি (গুড়) তৈরি করছেন মৌসুমি গাছিরা। শীতের আগমনের শুরু থেকেই এ কাজে ব্যস্ত তাঁরা। হালকা কুয়াশার মধ্যে এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। এ দৃশ্য চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর গ্রামের খেজুরবাগানে। প্রতিবারের মতো এবারও ঐ গ্রামে শুরু হয়েছে খেজুরের পাটালি উৎপাদন। সুগার মিলের মোহন ইক্ষু খামার খেজুরবাগানে এবার ৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকায় ৭ শতাধিক গাছ বার্ষিক চুক্তিতে লিজ নিয়ে গুড় তৈরি শুরু করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী মোঃ আব্দুল । তাঁর এ বাগানে কাজ করছেন নাটোরের লালপুর থেকে আসা ৬ জন কৃষিশ্রমিক। প্রায় ১০ একর জমিতে গড়ে উঠেছে এ খেজুরের বাগান। রস ভোরের সূর্য ওঠার আগেই গাছ থেকে নামিয়ে টিনের পাত্রে জ্বাল দিয়ে শ্রমিকরা তৈরি করছেন পাটালি। গুড় তৈরির এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখতে প্রতিদিন আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। জানা যায়, অক্টোবরের শুরু থেকে গাছের পরিচর্যা করছেন গাছিরা। নভেম্বরের শুরু থেকে সীমিত পরিসরে পাটালি বানানোর কাজ করছেন শ্রমিকরা। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কেজি পাটালি উৎপাদন হয়। সেই সঙ্গে ১০০ টাকা লিটারে খেজুরের রস ও পাটালি বিক্রি করছেন ৩০০ টাকা কেজি করে। খেজুরের বাগানে রস খেতে এসেছেন প্রকৃতিপ্রেমী আবু রায়হান , কালাম সহ বেশ কয়েকজন। তাঁরা বলেন, ‘অনেক ভোরে এসেছি এ বাগানে। সরাসরি রস সংগ্রহ ও রস দিয়ে কীভাবে গুড় তৈরি হচ্ছে তা দেখলাম। গ্রামীণ ঐতিহ্য এটি, দেখে অনেক ভালো লাগল। রস কিনেছি ১০০ টাকা লিটারে আর গুড় ৩০০ টাকা কেজি। ’ আরেক প্রকৃতিপ্রেমী রাশিদা, সুলতানা ও খতেজা বলেন, ‘বান্ধবীরা মিলে এসেছি এ বাগানে। এবারই প্রথম আসা। পরিবেশটি অনেক সুন্দর। বিশেষ করে কুয়াশার সকালে খেজুর গাছের দৃশ্যটি অসাধারণ লাগে। আর গুড় বানানো এ প্রথম দেখলাম। সেই সঙ্গে গুড় খেলাম, বেশ মজাদার। ’ বাগানমালিক মো. সেলিম মিয়া বলেন, ‘আমরা অক্টোবরেই গাছের পরিচর্যা শুরু করেছি। নভেম্বরে রস সংগ্রহ করছি। সেই সঙ্গে অল্প পরিসরে পাটালি বানানোর কাজ করছি। প্রতিদিন অনেক দর্শনার্থী আসছেন। তবে শীত এখনো সেভাবে না পড়ায় আমাদের রস উৎপাদন তেমন হচ্ছে না। আমরা প্রতিটি হাঁড়ি মশারি দিয়ে ঢেকে দিয়েছি; যাতে কোনো পাখি মুখ দিতে না পারে। আশা করি শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রসের উৎপাদন বাড়বে। আমরা লাভবান হব। ’