১৯৭৩ সালে সৌন্দর্য বর্ধনের নামে শেখ মুজিবের নির্দেশে বুলডোজার দিয়ে রমনা কালী মন্দির ভেঙে দেওয়া হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী শ্রী শ্রী পু-রীকধামে রাধাষ্টমীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
সংখ্যালঘু কার্ড ব্যবহার করে আওয়ামী লীগকে আর কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ার করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি হচ্ছে বিভাজনের রাজনীতি। তারা সংখ্যালঘু-সংখ্যাগুরু বিভাজনের মাধ্যমে সব সময় দেশকে অস্থিতিশীল করে রাখার চেষ্টা করেছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে ক্ষতি আওয়ামী লীগই করেছে। শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের ৩ মার্চ সেহারাওয়ার্দী উদ্যানের সৌন্দর্য বর্ধনের কথা বলে রমনা মন্দির গুঁড়িয়ে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতারা গত ১৫ বছরে দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করেছে। কার টাকা পাচার করা হলো? আমার-আপনার সকলের টাকা পাচার করা হলো। অর্থ পাচারসহ তাদের সকল অপরাধের শাস্তি পেতে হবে। তাদের বিচার এ দেশের মাটিতেই হবে।
তিনি বলেন, আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতাকে পাখির মতো গুলি করে মারা হয়েছে। গত ১৫ বছর মানুষ কথা বলতে পারেনি, ভোট দিতে পারেনি। সবকিছু একটি দল ও একটি পরিবারকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছিল। কিন্তু ৫ আগস্ট পরবর্তী আওয়ামী লীগের কাউকে কিছু বলা হয়নি, ভয় দেখানো হয়নি। সাধারণ মানুষের ভয়ে তারা পালিয়ে গেছে। কারণ তাদের রাজনীতি ছিল জনগণের বিরুদ্ধে, তাদের রাজনীতি ছিল শোষণের রাজনীতি। বিএনপির নেতাকর্মীরা জনগণের রাজনীতি করে বলেই তারা ভয় পায় না। গত ১৫ বছর কত মামলা, কত নির্যাতন করা হলো। বিএনপি নেতাকর্মীরা কষ্ট করে তাদের আন্দোলন চালিয়ে গেছে, কিন্তু এদেশ ছেড়ে পালিয়ে যায়নি। এটিই হচ্ছে দেশ ও জনগণের প্রতি বিএনপি’র কমিটমেন্ট। আওয়ামী লীগের সময় আমার বাড়িতে হামলা হয়েছিল। থানায় যাওয়া হলো মামলা করতে। পুলিশ মামলা নেয়নি। কারণ কি? কারণ হচ্ছে, হিন্দু হয়ে আমি কেন বিএনপি করি।
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করেছেন বলে তিনি এত বেশি জনপ্রিয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেত্রীকে জনরোষে পালিয়ে যেতে হয়েছে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল বলেন, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য নজির হাটহাজারী। এখানে মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান- সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে নির্ভীক চিত্তে নিজ নিজ ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করছেন। সব ধর্মের মানুষের মেল-বন্ধনে আমাদের মধ্যে চমৎকার ধর্মীয় সম্প্রীতি বিরাজ করছে। এ এলাকার মানুষ শত বছর ধরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে চলছেন। এখানেই একশ বছরের বেশি সময় আগে গড়ে উঠেছে দক্ষিণ এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী হাটহাজারী মাদ্রাসার জামে মসজিদ (বড় মসজিদ) এবং ‘শ্রী শ্রী সীতাকালী কেন্দ্রীয় মন্দির’। এক দেয়ালের এক পাশে মসজিদ থেকে প্রতিদিন ভেসে আসছে আজানের ধ্বনি। পাশের মন্দিরেও নিয়ম করে বেজে উঠছে উলুধ্বনি। কারও বিরুদ্ধে কারও কোনো ধরনের অভিযোগ নেই।
মীর হেলাল আরও বলেন, আমাদের নেতা দেশনায়ক তারেক রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানচিত্রে ঠিকানা আমাদের যেখানেই হোক, পরিচয় একটাই, আমরা সবাই বাংলাদেশি।’
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা যে কোনো ষড়যন্ত্র রুখে দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাংবাদিক বিপ্লব পার্থ ও প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসের সঞ্চালনায় সভায় সভাপতিত্ব করেন পু-রীক বিদ্যানিধি স্মৃতি সংসদের সহ-সভাপতি স্বপন চৌধুরী। উদ্বোধক ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল। স্বাগত বক্তব্য রাখেন পু-রীক বিদ্যানিধি স্মৃতি সংসদের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার অশোক কুমার নাথ। আর্শীবাদক ছিলেন ইসকন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌর দাস ব্রহ্মচারী, রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠের প্রতিনিধি শ্রীমৎ স্বামী পূর্ণব্রতানন্দ মহারাজ, শ্রীমৎ পুলকানন্দ। প্রধান বক্তা ছিলেন পু-রীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সাইফুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক কুশল বরণ চক্রবর্তী, হাটহাজারী বিএনপির সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের যুগ্ম মহাসচিব আর কে দাশ রুপু, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজীব ধর তমাল, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সংসদের সদস্য সচিব উজ্জ্বল বরণ বিশ্বাস, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সংসদের সদস্য সচিব জুয়েল চক্রবর্তী, চট্টগ্রাম মহানগর শাখার সদস্য সচিব বাপ্পী দে, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ হাটহাজারী শাখার সভাপতি গৌবিন্দ প্রসাদ মহাজন প্রমুখ।