কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তেজনা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে ইতোমধ্যেই দুটি পক্ষের মধ্যে ৫টি সংঘর্ষ, হামলা ও নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এসব রুখতে অস্ত্রধারীদের গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ।
অন্যদিকে একে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে মন্তব্য করেছেন নৌকার প্রার্থী সেলিম আফতাফ জর্জ। তিনি বলেন, এসব বিচ্ছিন্ন ঘটনা নির্বাচনের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না।
সর্বশেষ শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমারখালীর বহলবাড়িয়ায় সংঘর্ষে ৬ জন আহত হন। এদিন স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি ক্যাম্প ভাঙচুরের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কুমারখালী থানার ওসি আকিবুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে। তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় টহল জোরদার করা হয়েছে।
গত বুধবার কুমারখালীর নন্দলালপুরে আব্দুর রউফের নির্বানি কার্যালয় উদ্বোধনের সভায় জেলা আওয়ামী লীগের নেতা জাহিদ হোসেন জাফরের ওপর হামলা ও কুমারখালী আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান খানের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় নৌকার সমর্থক এক ইউপি সদস্যকে একদিনের জেল ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
১৮ ডিসেম্বর আমলাবাড়ীতে অফিস ভাঙচুর ও পোস্টার ছিড়ে ফেলার অভিযোগ করেন আব্দুর রউফ।
১৪ ডিসেম্বর খোকসার ধোকড়াকোল কলেজ মোড়ে নৌকা ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত হন সাতজন। সংঘর্ষে উভয়পক্ষ দেশিয় অস্ত্রের ব্যবহার করে।
৫ ডিসেম্বর কুমারখালী শহরে আব্দুর রউফের কর্মী আজিজুর রহমান সুমনকে (৪২) মারধরের অভিযোগে নৌকা প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা হয়। গ্রেফতার হন পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম শাহীন।
এসব সংঘর্ষের বাইরে কথার লড়াইও চলছে প্রতিনিয়ত। স্বতন্ত্র প্রার্থীর ভোটারদের প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে আলোচনার জন্ম দেন কুমারখালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র সামসুজ্জামান অরুণ। প্রতিপক্ষের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘৭ তারিখের পরে আপনাদের সঙ্গে যেন আমাদের দুর্ব্যবহার করা না লাগে, আপনারা যদি বাড়ি থেকে বের হতে না পারেন, আমরাই কিন্তু কষ্ট পাবো।’
অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুর রউফ টেলিভিশন সাক্ষাতকারে বলেছেন, আমরা কি শুধু মারই খাবো? আমরা মারতে পারব না?
চলমান এসব দ্বন্দ্বের বিষয়ে নৌকা প্রার্থীর সমর্থক ও কুমারখালী পৌরসভার প্যানেল মেয়র হারুন অর রশিদ বলেন, ১৯৮৯ সালে নৌকার প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আবুল হোসেন তরুণের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন আব্দুর রউফ। ২০০১ সালেও তিনি নৌকার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেন। এবারও তিনি নৌকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। এ নিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থেকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটছে।
এ বিষয়ে আব্দুর রউফের রাজনৈতিক সচিব সালেহীন সেলিম বলেন, এ পর্যন্ত ১০টির ওপর হামলায় আমাদের অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। নৌকার লোকজন ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিতেই এসব হামলার ঘটনা ঘটাচ্ছে।
এ অবস্থায় হানাহানিমুক্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছেন জেলার দুই হেভিওয়েট প্রার্থী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাক মাহবুবউল আলম হানিফ। হানিফ বলেন, শান্তিপূর্ণ অবস্থানে থেকে প্রচার-প্রচারণা চালাতে সব প্রার্থীকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেউ সহিংসতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসব ব্যাপারে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম মতিনুর রহমান বলেন- বিএনপি ভোটে না আসায় নিজেদের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আস্থার সংকট আছে, তাই এসব সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। এগুলো গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয় জানিয়ে মতিনুর আরো বলেন, সাধারণ মানুষ নিরাপত্তা চায়। তা বিঘ্ন হলে উৎসবমুখর ভোট অনুষ্ঠান সম্ভব হবে না।