মানিকগঞ্জ জেলা প্রাণিসম্পদ দফতরের জনবল সঙ্কটে চিকিৎসা দিচ্ছে ভূয়া ডাক্তার ও সরকারি ঔষুধ না থাকায় এবং আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাবে পশু-পাখির স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে, দিশেহারা হয়ে পড়েছে হাজার হাজার খামারিরা। প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিরা কোন সরকারি সেবা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে একাধিক খামারিদের। প্রাণিসম্পদ দফতরের সহযোগিতা ছাড়াই গড়ে উঠেছে হাজার হাজার পশু-পাখির খামার। সরকারি পশু ডাক্তারের সহযোগিতা না পাওয়ায় বিভিন্ন হাতুড়ে ডাক্তারের পরামর্শে চলছে এসব খামার। ফলে বাড়তি অর্থ ও ভূল পরামর্শে ঘটছে নানা দূর্ঘটনা। লাগামহীন চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে রেজিষ্টারবিহীন ভুয়া ডাক্তার। জেলা প্রাণিসম্পদ দফতর সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মঞ্জুরীকৃত ৯০ টি পদের মধ্যে ২৮ টি পদ শূন্য। ফলে প্রকট হয়ে উঠেছে জনবল সঙ্কট। প্রয়োজনীয় জনবল সঙ্কট হওয়ায় ভুয়া ডাক্তার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে ভূয়া ডাক্তারদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে জেল জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজনীয় সকল কাঠামো না থাকায় ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। জেলা পর্যায়ে পশু-পাখির পরিক্ষা- নিরীক্ষার জন্য কিছু যন্ত্রপাতি থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে তেমন কোন যন্ত্রপাতি নেই। হতাশায় খামারিরা। জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় হাঁস, মুরগি, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, গাভীসহ গবাদিপ্রাণি ও পোল্ট্রির মোট ১২ হাজার ৪৯৮ টি খামার রয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার। যার পরিমাণ ৯ হাজার ৬৬৯ টি। এছাড়াও গাভীর খামার ৬৩৫টি, ছাগলের ১১০৯ টি, ভেড়ার ১৩ টি, লেয়ার মুরগি ১১২ টি, ব্রয়লার ৮৩৬ টি অপরদিকে, কবুতরে ১১৪ ও অন্যন্য ১০ টি খামার রয়েছে। জেলায় হৃষ্টপুষ্ট গরু-মহিষের ৯ হাজার ৬৬৯ টি খামারে গরু রয়েছে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৬৩১ টি, মহিষ রয়েছে ১ হাজার ২৩৩ টি। এছাড়া ১১০৯ টি খামারে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৭৬৬ টি ছাগল এবং ১৩ টি খামারে ৩৮ হাজার ৪৫১ টি ভেড়া পালন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে জেলায় ৪ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৬ টি হাঁস, ২৭ লক্ষ ৩ হাজার ১২ টি মুরগি, ৩ হাজার ২০০ টি কোয়েল, ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৬০০ টি কবুতর রয়েছে। এসব গবাদি পশু-পাখির রোগ নিরাময়, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরামর্শের জন্যে মাঠ পর্যায়ে নিয়োজিত অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদগুলো শূন্য থাকায় জেলার খামারগুলোয় বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। খামারিরা দুধ, গোশত ও ডিম উপাদন করতে হিমশিম খাচ্ছেন। পাচ্ছেন না সরকারি চিকিৎসা ও ঔষুধ সেবা। চিকিৎসা করাচ্ছেন বাইরের ভুয়া নামধারী পশু ডাক্তার দিয়ে। বিভিন্ন খামারী বেশির ভাগই পাচ্ছে না সরকারি ঔষুধ ও পশু-পাখির নিয়মিত টিকাদান, চিকিৎসাসেবা, কৃত্রিম প্রজনন ও গরু মোটাতাজাকরণ ফলে কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মো: মাহবুবুল ইসলাম টুকু মিঞার সাথে কথা বললে তিনি জানান, জেলায় ও উপজেলায় মোট ২৮ টি পদ শূণ্য আছে। আমাদের চাহিদা দেয়া আছে, লোক আসলেই আমাদের ডাক্তারেরা প্রান্তিক পর্যায়ে চিকিৎসার কাজ করতে পারবে। তবে সরকারি ভাবে বছরে এ জেলায় যে পরিমান ঔষুধ দেয়, তা যদি ঠিকমত খামারিদের দেওয়া হয় সর্বচ্চো ১ মাস চলবে এই জন্যে আমরা খামারিদের ঠিকমত ঔষুধ দিতে পারি না। ভূয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।