আট লেন হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক। ২০২৫ সাল নাগাদ শুরু হবে এই প্রকল্পের উন্নয়নের কাজ। এখন চলছে নকশা তৈরির কাজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এ তথ্য জানান সড়ক ও জনপথ বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও রোড-ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের প্রকল্প পরিচালক মো. সাব্বির হাসান খান।
তিনি বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লাইনে উন্নীত করতে বর্তমানে ডাটাবেজসহ নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। আগামী বছরের অক্টোবরে নকশার কাজ শেষ হলে আমরা প্রকল্প প্রণয়নের কাজ শুরু করব। সব মিলে আগামী ২০২৫ সালের পাইপলাইনে এ প্রকল্প সেট করার পরিকল্পনা রয়েছে।
অর্থাৎ পুরো মহাসড়ক আট লেন হবে না। যানবাহনের চাপের ওপর ভিত্তি করে কোথাও ছয় লেন, কোথাও আট লেন হবে। এ কাজ বাস্তবায়নে নিয়োজিত থাকবে দেশি-বিদেশি পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। ১৮ মাস লাগবে নকশা তৈরির এ কাজে। এতে প্রায় ৪৫ কোটির টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। কাজের অর্থায়ন করছে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক-এডিবি।’
পরিকল্পনা কমিশনের সূত্রমতে, দ্রুত যাতায়াত এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। ফেনী-বিলোনিয়া, কুমিল্লার বিবিরবাজার এবং রামগড় স্থলবন্দর থেকে চট্টগ্রামে পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমও হচ্ছে এ মহাসড়ক। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি), পাশাপাশি বিশ্ববাংক, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআইআইবি) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে।
সূত্র আরও জানায়, আলাদা তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রশস্ত করা হবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কটি। গত জানুয়ারিতে ২২৯ কিলোমিটারের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে তিনটি ভাগ করে আলাদা আলাদা তিনটি পিডিপিপি পরিকল্পনা কমিশনে পাঠায় সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
এর মধ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর ঢাকা অংশের তিনটি জেলায় (ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জ)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ৩৮ কিলোমিটার, যা নির্মাণে খরচ হবে ৮ হাজার ২৬৮ কোটি টাকা। আরেকটি প্রকল্প হবে বৃহত্তর কুমিল্লা অংশের দুটি জেলায় (কুমিল্লা ও ফেনী)। এ অংশে সড়কের দৈর্ঘ্য ১২৫ কিলোমিটার। এটি বাস্তবায়নে খরচ হবে ৪৫ হাজার ৯৪১ কোটি টাকা। অপরটি বাস্তবায়িত হবে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অংশে; ফেনী থেকে চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত। আর এতে খরচ হবে ১৮ হাজার ৯৪২ কোটি টাকা। এই অংশের দৈর্ঘ্য ৬৯ কিলোমিটার।
তিনটি প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ৭৩ হাজার ১৫১ কোটি টাকা। ২২৯ কিলোমিটার সড়কের কোথাও চার লেন, আবার কোথাও ছয় লেনে উন্নয়নের প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনটি প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ২৩২ কিলোমিটারের কাজ একটি প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়ন করা হলে খরচ বেশি পড়বে। কোনো উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা এত টাকা একসঙ্গে ঋণ দিতে রাজি হবে না বিধায় আলাদা তিনটি প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকার ২০০৬ সালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নীত করতে একটি প্রকল্প নিয়েছিল। দুই দফায় বাড়িয়ে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৬ সালে। এতে প্রকল্পের খরচ ২ হাজার কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকায়। অবশেষে ২০১৬ সালে চালু হয় কুমিল্লার দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে চট্টগ্রাম সিটি গেট পর্যন্ত ১৯২ কিলোমিটার চার লেন সড়ক।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক আট লেনে উন্নীতকরণ শুধু জরুরি নয়, অতীব জরুরি। কারণ, দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের সবগুলো এই সড়ক দিয়ে পরিবহন করা হয়। এ কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সবসময় একটি ব্যস্ততম সড়ক। পণ্য পরিবহণ ও যাত্রী পরিবহন একসঙ্গে হয়ে থাকে। এতে দ্বিগুণ সময় যেমন লাগে, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনাও লেগে আছে। এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র উপায় হবে এই মহাসড়ক আট লেনে উন্নীত করা। অথবা ফোরলেনের আরেকটি সড়ক পণ্য পরিবহনের জন্য আলাদাভাবে তৈরি করা। এতে দেশের বাণিজ্য সমপ্রসারিত হবে। সমৃদ্ধ হবে দেশের অর্থনীতি।’