সাতক্ষীরায় সমবায় মার্কেট নিয়ে ব্যবসায়ী ও সমবায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করছেন। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হয়েছে মানববন্ধনও। তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘদিন পূর্বে সমবায় ব্যাংক কর্তৃক পরিচালিত সাতক্ষীরা সমবায় মার্কেট ১৪ জন ব্যবসায়ীকে ডিডের মাধ্যমে দোকান ঘর বরাদ্দ দেয়। দোকান ঘরগুলো ২০ থেকে ৫০ হাজার টাকা অগ্রিম ও মাসিক ১৯৫০ ও ২৪৫০ টাকা মাসিক হারে ভাড়া দেওয়া হয়। সেসব ডিডের মেয়াদ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে। সমবায় বাংক কর্তৃপক্ষের অভিযোগ বার বার ব্যবসায়ীদের নতুন ডিডের চুক্তির জন্য তাগাদা দিলেও ব্যবসায়ীরা তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তারা বার বার দোকান খালি করার নোটিশ ব্যবসায়ীদের প্রদান করে। তবে পাল্টা অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীরা জানান হঠাৎ করেই গত সপ্তাহে আমাদের দোকান ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ পাঠিয়েছে সমবায় ব্যাংকের প্রিন্সিপ্যাল অফিসার শহিদুল হারেস। সমবায় মার্কেটের ব্যবসায়ী আব্দুল গফ্ফার মিঞা জানান, ‘তাদের অনুমতি নিয়ে আমার নিজের পয়সা খরচ করে ঘর করা। হঠাৎ গত সপ্তাহে নোটিশ দিয়ে মাসের মধ্যে ঘর খালি করতে বলা হয়েছে। তা না হলে উচ্ছেদ করা হবে। আমরা ব্যবসায়ীরা মানববন্ধন করে সমবায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন হঠকারি সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।’ ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, ‘সমবায়ের যেটুকু অস্তিত্ব ছিলো সেটা নষ্ট করার জন্য প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হারেস ও স্বঘোষিত চেয়ারম্যান আব্দুর রব ওয়ার্ছি চেষ্টা করছেন। প্রতি তিন বছর পর পর আমরা ডিড নবায়ন করে থাকি। এ পর্যন্ত তিনবার আমাদের ডিড নবায়নের জন্য নোটিশ করা হয়েছে। আমরা ব্যবসায়ীরা তিনবারই সমবায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ডিড করা জন্য গিয়েছি কিন্তু তারা দোকান ঘর প্রতি ১০ লক্ষটাকা করে দাবি করে নবায়ন করার জন্য। আমরা অগ্রিম কমানোর দাবি করলে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার ও চেয়ারম্যান অন্য ব্যক্তি ঠিক করতে থাকে দোকান ঘর নতুন করে ভাড়ার ডিড করা জন্য। তারা দুজনে ডিডের মোটা টাকা পকেটস্থ করার জন্য একটা হীন চক্রান্ত চালাচ্ছে। তাই পূর্ব কোন ঘোষনা না দিয়েই ব্যাংকের ভেতরে থাকা একটি শতবর্ষী ছাতিম গাছ শুক্রবারে কেটে ফেলে লোকচক্ষুর আড়ালে। অন্যদিকে নিম্ন মানের সামগ্রী দিয়ে ভেতরে মার্কেট নির্মান করে চলেছে অন্য ব্যবসায়ীদের বরাদ্দ দেওয়ার জন্য। পূর্বেই আমাদের সাধারণ সভায় সিদ্ধান্ত হয় যে ঢাকা থেকে অনুমতি নিয়ে বহুতল ভবন নির্মান করে সমবায় অফিস ও মার্কেট করা যেতে পারে। কিন্তু প্রিন্সিপ্যাল অফিসার হারেস যোগদান করার পর থেকে নিজের ইচ্ছা মতো সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যবাসয়ীদের সাথে প্রতারণা করছেন ও সমবায় ধ্বংসের পায়তারা করছেন।’ সমবায় মার্কেটের অপর ব্যবসায়ী দবির উদ্দীন জানান, ‘সপ্তাহ খানেক আগে আমাদের নোটিশ দিয়ে দোকান ঘর ছেড়ে দিতে বলা হয়। কিন্তু নোটিশ ইস্যু করবেন চেয়ারম্যান। কিন্তু চেয়ারম্যান না দিয়ে প্রিন্সিপ্যাল অফিসার নোটিশ করেছেন। তারা সমবায় মার্কেট লুটপাট করার জন্য নানা পায়তারা করছেন। আমরা এসব ষড়যন্ত্রের প্রতিকার চাই। ’এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সমবায় ব্যাংক সাতক্ষীরা শাখার প্রিন্সিপ্যাল অফিসার শহিদুল হারেস জানান, “আমাদের সমবায় ভবনটি পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালে। কিন্তু তারপরও আমরা সে ভবনেই অফিস করছি। কিছুদিন পূর্বে ছাদের পলেস্তরা খসে একজন আহত হওয়ায় জীবন বাঁচানো তাগিদে আমরা পাশেই অবস্থান করার জন্য ঘর নির্মান করছি। সাটার বিশিষ্ট দোকান ঘরের মতো স্থাপনায় সমবায় ব্যাংকের কার্যক্রম চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ঘরগুলো আপাতত পাঁচজন ব্যবসায়ীর জন্য করেছি। ভেতর ঢোকার পথ তৈরির জন্য পাঁচটি দোকান ভাঙা হবে। তাদের পুর্নবাসনের জন্য এ ব্যবস্থা করেছি। অন্যদিকে তিনি দাবি করেন ব্যবসায়ীরা দশ থেকে পঞ্চাশ হাজার টাকা অগ্রিম ও ১৯৫০ টাকা প্রথম পাঁচজন ও পরে নয় জনকে ২৪৫০ টাকায় দোকান ঘর ভাড়া দেওয়া হয়। তারা ডিডের শর্ত ভেঙে সাব ডিড করে দোকানঘর প্রতি পাঁচ থেক দশ লক্ষ টাকা অগ্রিম নিয়ে মাসে বিশ হাজার টাকা করে ভাড়া তুলছেন। তাতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে সর্বশেষ ডিডটিও গত ২০১৯ সালে শেষ হয়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরা চুক্তি অনুযায়ী দোকানঘর ভাড়ার টাকাও পরিশোধ করছেন না। ফলে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে। আমরা তাদের বার বার নোটিশ করা স্বত্বেও তারা নতুন করে দোকানঘর ভাড়ার চুক্তি করছেন না। এটি ছাড়াও আমাদের মার্কেটটি রাস্তা থেকে ৬ ফুট পৌরসভার জমিতে হওয়ায় সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকেও বার বার দোকান ঘর উচ্ছেদ করার জন্য আমার কাছে নোটিশ আসছে। ফলে ব্যবসায়ীদের ওখান থেকে তুলতে হবেই। এখানে নতুন ভবন নির্মানের জন্য ঢাকায় প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও এখনো এ বিষয়ে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ হয়নি। স্বঘোষিত চেয়ারম্যান আব্দুর রব ওয়ার্ছির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, গত বছরের (২০২৩খ্রিঃ) নভেম্বর বা ডিসেম্বরের ১১ তারিখে সমবায়ীদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিত কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রব ওয়ার্ছি। চেয়ারম্যান ইন্তেকাল করায় বিধি মোতাবেক ভাইস চেয়ারম্যানকে চেয়ারম্যান পদে কো-অপট করা হয়।’