বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানকে যুক্ত করে আওয়ামী লীগ তাকে খলনায়ক বানানোর অপচেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেছেন, শেখ মুজিব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে যুক্ত করে ভুল তথ্য ছড়িয়ে ইতিহাস বিকৃত করার চেষ্টা করছে এবং চলমান আন্দোলন বানচাল করার চেষ্টা করছে।
শুক্রবার রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ৪২তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, সরকার শুধু স্বাধীনতার ঘোষকের নাম মুছে ফেলতে চায় না, তারা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে তাকে খলনায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘তখন বিএনপির অস্তিত্ব ছিল না। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান ছিলেন না, তিনি উপপ্রধান ছিলেন। অথচ যারা তখন সেনাবাহিনী প্রধান, নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমানবাহিনী প্রধান ছিলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তারা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে গঠিত সরকারের প্রতি স্যালুট করে আনুগত্য প্রকাশ করেছিলেন।
আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এ কথাও ভুলতে পারি না, শেখ মুজিবুর রহমানের লাশ তার বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ নেতারা খন্দকার মোশতাকের নেতৃত্বে সরকার গঠন করেছিলেন। যারা আজকে মিথ্যা প্রচার চালান, বলেন- ১৫ আগস্টের ঘটনায় জিয়াউর রহমান জড়িত ছিলেন তাদের একটাই উদ্দেশ্য, তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা এবং ইতিহাস থেকে একেবারে মুছে ফেলা। তবে সেটা সম্ভব নয়।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা এ দেশের স্বাধীনতার একমাত্র দাবিদার বলে নিজেদের দাবি করে, বলে যে তারাই যুদ্ধ করেছে, তারা কিন্তু সেদিন স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল।
ফখরুল বলেন, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে তাদের (আওয়ামী লীগের) অধিকাংশ লোক তখন ভারতে পালিয়ে গিয়েছিল।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে কত বছর হয়ে গেল, জিয়াউর রহমানের নাম কি মুছে ফেলতে পেরেছে? পারে নাই। যারা ইতিহাস তৈরি করে, যারা একটা রাষ্ট্রের জন্মের জন্য যুদ্ধ ঘোষণা করে, যারা জনগণের কল্যাণের জন্য একটি রাষ্ট্র নির্মাণের সমস্ত ভিত্তি তৈরি করে; তাদের এভাবে মুছে ফেলা যায় না। ভুলিয়ে দেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, দেশ গভীর সংকটে আছে। এই সংকট থেকে মুক্তির পথ আমাদেরকে দেখান শহিদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। কারণ, ১৯৭১ সালে যখন রাজনৈতিক নেতৃত্ব সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছিল, এমনকি তখন যারা পাকিস্তান সরকার ইয়াহিয়া খানের সরকারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করছিলেন যে কিভাবে একটা আপোষ করা যায়। সেই সময়ে জিয়াউর রহমান বুকে সাহস নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন। এটা একটা বিরল ব্যাপার, কোনো মানুষের পক্ষে এটা সম্ভব না।
অনুষ্ঠানে তিন পর্বে মোট ৬৯ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। এরমধ্যে প্রাথমিক স্তরে জিহাদ ইবনে ইমরান, মোস্তাকিম হাসান, হুমায়রা জান্নাত প্রার্থনা, মাধ্যমিক স্তরে এফতেখার এনাম নাহিদ, তালাম মাহমুদ নিবাস, আবু হাসান নাহিয়ান এবং উচ্চতর ও উন্মুক্ত স্তরে কানিজ ফাতেমা কনিক, আজম ইকবাল শিপন ও মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল নোমান নিজ নিজ বিভাগে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন।
রচনা প্রতিযোগিতা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আফম ইউসুফ হায়দারের সভাপতিত্বে ও শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলামের সঞ্চালনায় দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আবদুল লতিফ মাসুম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, অধ্যাপক ছিদ্দিকুর রহমান, অধ্যাপক এমতাজ হোসেন, অধ্যাপক শামসুল আলম সেলিম, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক ইসরাফিল প্রামাণিক ও শামসুজ্জামান মেহেদী প্রমুখ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।