নোয়াখালীর সেনবাগে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়। সেখানকার একটি ইউনিয়নেই ১২টি ইট ভাটা গড়ে উঠেছে। ইট ভাটার কারণে দিন দিন পরিবেশ বিষিয়ে উঠছে। এদিকে পরিবেশ দুষনের ফলে স্থানীয়রা ভুগছে স্বাশকষ্টসহ নানা রোগে। মাঠে উৎপাদন হচ্ছেনা ফসল, গাছে ধরছেনা ফল। আগামী প্রজন্মের জন্য সেনবাগের ছাতারপাইয়া হয়ে উঠছে অনিরাপদ। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সেনবাগের ছাতারপাইয়া ইউয়িনের এমকেবি ব্রিকফিল্ডে সকাল ১০ টায় গিয়ে দেখা যায় প্রকাশ্য দিবালোকে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে স্তুপ করা হচ্ছে। সারিসারি মাটি কাটার ভেকু ব্রিক ফিল্ডের আশপাশের মাঠের পর মাঠ দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে। অথচ ব্রিক ফিল্ডের জন্য ফসলি জমি থেকে মাটি কাটা সম্পূর্ন নিষিদ্ধ। কিন্তু এমকেবি ব্রিক ফিল্ড সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রভাব খাঁটিয়ে দিন পর দিন মাটি কেকে সাবাড় করছে ফসলি জমি। ঘটনারস্থল থেকে সাংবাদিকরা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করলেও তিনি কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। তাছাড়া ব্রিক ফিল্ডের কালো ধোয়ায় প্রায় সময় অন্ধকারে আচ্ছন্ন থাকে পুরো এলাকা। বিষাক্ত ধোয়া ও বাতাসের কারণে স্থানীয় ভূগছে নানা রকম রোগে। বিশেষ করে শিশুরা হাচি, কাশি, শ^াসকষ্ট রোগ, চর্ম এলার্জিসহ দীর্ঘ মেয়াদি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়াও এমকেবি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে সরকারের ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকি দেয়াসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে। পরিবেশের ছাড়পত্র থাকলেও সেখানে উল্লেখিত কোন শর্তই মানছেনা এমকেবি ব্রিক ফিল্ড কর্তৃপক্ষ। ব্রিক ফিল্ডের কারণে আশপাশের জমিতে হচ্ছেনা ফসল, গাছেও ধরছেনা ফল। পরিবেশ দুষিত হয়ে এমকেবি ব্রিক ফিল্ড এর আশপাশ মানুষ বসবাসের অনুপযোগি হয়ে পড়েছে। স্থানীয়রা এসব বিষয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিলেও কোন কাজ হচ্ছেনা। বরং প্রতিবাদ করলে প্রতিবাদকারীর উপর নেমে আসে নির্যাতন। ব্রিক ফিল্ডের মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় প্রশাসনও নীরব ভূমিকা পালন করছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন? একটি ইউনিয়নে কি ভাবে ১২টি ব্রিক ফিল্ডের লাইসেন্স দেয়া হয়েছে। সেখানকার মানুষ কি আদৌ বাঁচবে? বিষয়টি গুরুত্বসহকারে সরকারের সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষকে খতিয়ে দেখা দরকার। এ সব অনিয়মের বিষয়ে এমকেবি ব্রিক ফিল্ডের মালিক আবদুর রেজ্জাক ব্যাপারীকে পাওয়া যায়নি। তবে ব্রিক ফিল্ডের ম্যানেজার আবদুর রহিম জানান, সরকারী সব নিয়ম মেনেই আমরা ব্রিক ফিল্ড চালাচ্ছি। ডিসি অফিসের লাইসেন্স, পরিবেশ অফিসের ছাড়পত্রসহ সবগুলো সরকারি দপ্তরের কাগজপত্র রয়েছে। কেউ ষড়যন্ত্র করে আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। ফসলি জমি থেকে কেটে আনার বিষয়ে তিনি বলেন, ব্রিক ফিল্ডের জন্য মাটিতো লাগবেই। যেখান থেকেই হোক তা সংগ্রহ করতে হবে। শুধু এমকেবি ব্রিক ফিল্ডই নয়, ছাতারপাইয়া ইউনিয়নে থাকা ১২টি ব্রিক ফিল্ডের একই চিত্র। কেউ মানছেননা সরকারী নিয়ম। স্থানীয় বাসিন্ধা আবদুল করিম জানান, ইট ভাটার কালো ধোয়ার কারণে আমরা বসবাস করাই কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা প্রতিবন্ধি হয়ে যাচ্ছে। বিষয়টি কর্তৃপক্ষ দেখেও না দেখার ভান করেন। তাছাড়া ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নেয়ায় আগামীকে এ অঞ্চলে খাদ্য সংকটও দেখা দিতে পারে। কারণ একদিন ফসলি জমি থেকে তারা মাটি কেটে নিচ্ছে অন্যদিকে ইট ভাটার প্রভাবে জমিতে ফসল হচ্ছেনা। এই বিষয়গুলো কর্তৃপক্ষ কি দেখে না? একই কথা বলেন, ওই এলাকার কৃষক মজিদ আলী, হাসেম মিয়া, কলিম উদ্দিন। তারা ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে সেনবাগ উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুন নাহার জানান, ইট ভাটাগুলো পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অনুমতি নিয়ে তাদের ব্যবসা করছে। আপনারা তাদের সাথে কথা বলুন। আমরা সুনিদৃষ্ট অভিযোগ পেলে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে থাকি। একই ইউনিয়নের ১২টি ব্রিক ফিল্ড থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করে নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদার জানান, ইট ভাটার অনুমোদনের সাথে জেলা প্রশাসনও জড়িত। কেউ আমাদের কাছে আবেদন করলে নিয়ম অনুযায়ী শর্তসাপেক্ষে ইট ভাটার ছাড়পত্র দিয়ে থাকি। তবু কেউ অনিয়ন করলে সরেজমিন গিয়ে সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নোয়াখালী জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে আইনশৃংখলা মিটিং-এ আলোচনা হয়েছে। কেউ আইন অমান্য করলে ছাড় দেয়া হবেনা। পরিবেশ স্বাভাবিক রাখা, ফসলী জমি রক্ষার জন্য আমাদের জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটরা নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে। প্রয়োজনে ইট ভাটাগুলোতে অভিযান চালানো হবে।