সিরাজগঞ্জে আধুনিকতার ছোঁয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের গ্রামবাংলার ঐহিত্য গরুর দিয়ে ধান মাড়াই। ২০ বছর আগেও এই পদ্ধতি চালু ছিল। কিন্তু কৃষি ক্ষেত্রে আধুনিকতায় এখন ধান রোপণ, কাটা, মাড়াই এমনকি ধান থেকে চাল তৈরিসহ প্রত্যেকটা কাজই যন্ত্রের সাহায্যে হচ্ছে। তাই গরু আর লাঙ্গল টানা সেই জরাজীর্ণ কৃষকদের এখন আর দেখা যায় না। ঋতু চক্রের ঘূর্ণিয়মান রূপকালে যখন হেমন্তের আগমনে গ্রাম বাংলার কৃষকরা ধান কাটার উৎসবে মেতে উঠত। কৃষকরা দিনে ধান কেটে বাড়িতে আনার পর সন্ধ্যায় মাড়াইয়ের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠত। ধান মাড়াইয়ের পর কৃষক পরিবার মেতে উঠতো নবান্ন উৎসবে। সিরাজগঞ্জের কামারখন্দের ৭৫ বয়সী কৃষক হাতেম আলী বলেন, একসময় ধান কাটার পর প্রতিটি গ্রামে রাতভর চলতো হালের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ। যাতে অংশ নিত পরিবারের নারী-পুরুষেরা। কিন্তু বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতির প্রচলনে কৃষিতে পুরনো এসব পদ্ধতি নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, এখন উন্নত মানের পাওয়ার টিলারের সাহায্য অল্প সময়ে জমি প্রস্তুত হয়ে যাচ্ছে। আগের মত চাষাবাদে বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা না করে পাম্পের সাহায্যে সেচ কাজ করে পানির চাহিদা মিটানো হচ্ছে। নিত্য নতুন কীটনাশক বাজারে আসছে। জমিতে বীজ ছিটানোর জন্যে এখন আছে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি। ধানের পাতা পরীক্ষা করে জমির উপযোগী কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। ধান কাটার ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে ধান কাটার যন্ত্র। তবে আধুনিক সভ্যতার ভিড়ে পুরানো ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে অনেকটাই শখের বসে মাঝে মাঝে তারা হালের গরু দিয়ে ধান মাড়াইয়ের কাজ করেন বলে জানান। সদর উপজেলা দিঘলকান্দি গ্রামের মজনু চকদার বলেন, বিজ্ঞানের নিত্যনতুন আবিষ্কার ও আধুনিক সভ্যতার প্রচলন এই দুইয়ের সমন্বয়ে কৃষিতে আমূল পরিবর্তন আসছে। তবে এটাও ঠিক বিজ্ঞানের এই নব নব আবিষ্কারের ভিড়ে আমরা হারাতে বসেছি আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে, স্বকীয় ও সত্তাকে। আগামী প্রজন্মের কাছে এক সময়কার এসব ঐতিহ্যকে পরিচিত করতে চাষাবাদে আধুনিক যন্ত্রপাতির পাশাপাশি এসব পুরনো ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখার দরকার বলে মনে করেন তিনি। এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার সাদাত বলেন, কৃষিকে আধুনিকায়ন করার ফলে প্রাচীন পদ্ধতি বিলুপ্তি হয়েছে। কৃষিযান্ত্রিকীকরণের ফলে কৃষকেরা এখন অল্প সময়ের মধ্যে বিভিন্ন যন্ত্রের ব্যবহারের মাধ্যমে তাদের উৎপাদিত ফসল ঘরে তুলতে পারছে। সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাবুল কুমার সুত্রধর বলেন, কৃষিতে আধুনিকতার ছোয়ায় প্রাচীন পদ্ধতি আজ বিলুপ্ত প্রায়। এতে সময়, অর্থ অপচয় কম হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়াতে দেশের উন্নয়নের পাশাপাশি কৃষকেরা যথেষ্ট লাভবান হচ্ছে।