চলতি বছরের শেষ দিকে দীর্ঘ-প্রতিক্ষিত বগুড়া-সিরাজগঞ্জ সরাসরি রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এই প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। একজন রেল কর্মকর্তা জানান, দু’জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করতে বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েস্ট জোন এই রুটে ডুয়েল গেজ রেললাইন স্থাপন করছে। রাজশাহী আঞ্চলিক সদরদপ্তর ৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ রেলওয়ের বগুড়া থেকে শহিদ এম. মনসুর আলি স্টেশন, সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ডুয়েল গেল রেললাইন স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি গ্রহণ করেছে। প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম ফিরোজ বাসসকে বলেন, এই রুটের উভয় দিকের জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে, রেললাইন স্থাপন কাজের দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া চলছে। নকসা প্রস্তুতের কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। জমি অধিগ্রহণসহ প্রয়োজনীয় সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর এ বছরের শেষ অথবা আগামী বছরের শুরুর দিকে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু হতে পারে। এই নতুন রেলওয়ে রুটের জন্য দুই জেলার ৯৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। বগুড়ায় প্রায় ৫০০ একর ও সিরাজগঞ্জে ৪৬০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই এই প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণ বাবদ ১ হাজার ৯২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রকল্পটির আওতায় বগুড়া থেকে সিরাজগঞ্জের শহিদ এম মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ডুয়েলগেজ রেললাইন স্থাপন করা হবে। পরের একটি ডবল লাইন রুট স্থাপন করা হবে। ওই রুটে নয়টি স্টেশন থাকবে। এগুলো হলো- এম মনসুর আলি, রায়পুর, নলকা কৃষ্ণদিয়া, চান্দাইকোনা, রায়গঞ্জ, সোনকা, শেরপুর, আরিয়া বাজার ও রানীরহাট। প্রকল্পটির আওতায়, বগুড়া রেলওয়ে লাইন থেকে সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতুর এম মনসুর আলি স্টেশন পর্যন্ত ৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেললাইন এবং কাহালু স্টেশন থেকে বগুড়ার রানীরহাট পর্যন্ত আরেকটি ১২ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হবে। এই প্রকল্পের আওতায় স্টেশন, প্লাটফরম, সেতু, একটি প্রশাসনিক ভবন ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও এ প্রকল্পে বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন, ওভারহেট সাইন স্ট্রাকচার ও লাইন স্থাপন করা হবে। এছাড়াও করোতোয়া ও ইছামতি নদীর ওপর দুটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু এবং ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে আধুনিক যোগাযোগ সুবিধা সম্বলিত ওভারপাস নির্মিত হবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও উত্তরাঞ্চলের মধ্যে এবং ঢাকার মধ্য দিয়ে দেশের পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের দূরত্ব কমে যাবে। প্রকল্পটি ২০২৬ সালে সফলভাবে সম্পন্ন হলে উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সাথে ঢাকার দূরত্ব ১১২ কিলোমিটার হ্রাস পাবে। এছাড়াও বগুড়া ও সিরাজগঞ্জের মানুষের যোগাযোগ সহজ হবে। এতে তিন থেকে চার ঘন্টা সময় বাঁচবে। প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পটি উত্তরাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগে গতি সঞ্চার করবে। প্রকল্পটি সম্পন্ন হলে এই অঞ্চলের জেলাগুলো থেকে রাজধানী ঢাকায় সাশ্রয়ী মূল্যে কৃষিপণ্যের পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের শিল্পপণ্য পরিবহন করা যাবে। সার্বিকভাবে এতে এই অঞ্চলের জেলাগুলোর অর্থনীতি সমৃদ্ধ হবে।