উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বারে যমুনা নদীর বুকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু এখন দৃশ্যমান। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার অদূরে চলছে এ নির্মানযজ্ঞ। মোট ৫০ টি পিলারের উপর বসানো হবে ৪৯ টি স্প্যান। সেতুটির পূর্বপ্রান্তে পিলারের উপর ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই সেতুতে ভিয়েতনাম থেকে তৈরিকৃত স্প্যান বসিয়ে রেলসেতু দৃশ্যমানও করেছেন তারা। সহস্রাধিক দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকদের তত্বাবধানে চলছে রেলসেতুর এ কর্মযজ্ঞ। জাপান এবং বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১ দশমিক ২০ কিলোমিটারের বেশি দৃশ্যমান হয়েছে। দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু। যমুনা নদীর ওপর টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী এই সেতুটি আগস্টে রেল চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে। এর ফলে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগব্যবস্থায় নবদিগন্তের সূচনা হবে। খুলবে অপার অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দ্বার। ৪.৮ কিমি. দীর্ঘ ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এই রেলসেতুটির ১.২ কিমি. এখন দৃশ্যমান। পুরো কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫৭ ভাগ। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণাধীন এই রেলসেতু চালু হলে বিদেশ থেকে দেশে আসা মালবাহী রেল সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি-রপ্তানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের ওপর চাপ কমবে। ঝুঁকিও হ্রাস পাবে বঙ্গবন্ধু সেতুর। বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর দিয়ে গাড়ির সঙ্গে রেলও চলছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ জন্য খুবই ধীরগতিতে চলে রেল কোচ। এখন বঙ্গবন্ধু সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে রেল চলাচল করতে পারে। রেল সেতুটিতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। এর ওপর দিয়ে যে কোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে। কমে আসবে ভ্রমণকালও। জ্বালানি খরচও কমবে রেল বিভাগের। একই সঙ্গে উত্তরবঙ্গ থেকে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা সহজ হবে, কমবে পণ্য পরিবহন খরচ, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও সামাজিক জীবনযাত্রায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এটা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর বিভিন্ন পর্যায়ের নির্মাণকর্মী ও কর্মকর্তারা জানান, দেশের অন্যতম বৃহৎ মেগা প্রকল্পে যুক্ত হতে পেরে খুশী তারা। কাজের ব্যাপারে তারা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সচেতনতা নিয়ে কাজ করছেন। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মাণ হচ্ছে ডাবল লেনের ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে রেলসেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে জাইকা। এই সেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার বেগে একসঙ্গে দুটি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। নতুন রেলসেতু হলে নতুন রুট চালু করা হবে। বর্তমানে যে রেলসেতুগুলো রয়েছে তাতে একটি করে লাইন রয়েছে। এ সেতুটিতে দুটি রেললাইন বসবে। যার ফলে কোনো রেলকে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একসঙ্গে দুটো ট্রেন দুই দিকে চলে যেতে পারবে। সেই উদ্যোগের একটি অংশ উত্তর জনপদের রেলসংযোগ সংস্কার ও নতুন রেলপথ সংযোজনের কাজ এগিয়ে চলছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুট হিসেবে ভারতের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে নীলফামারীর চিলাহাটি এবং চিলাহাটি বর্ডারের মধ্যে ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের কাজও চলছে। অন্য পাশে ভারতের ফুলবাড়ি অংশে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে সে দেশের রেল বিভাগ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মান কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, প্রকল্পটির মোট ব্যায় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতু খুলে দেয়া হলে মানুষের সহজ যাতায়াত যেমন নিশ্চিত হবে, তেমনই খুলবে উত্তর জনপদের ব্যবসা বানিজ্য সহ সম্ভাবনার নানা দ্বার। আরও একধাপ এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।