দেশে প্রতি ৫ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত। উচ্চরক্তচাপজনিত মৃত্যু কমাতে সরকার বেশ কিছু নীতি, পদক্ষেপ ও কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সম্প্রতি সিলেট জেলার ৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে সরকারিভাবে বিনামূল্যে রোগীদের উচ্চরক্তচাপের ওষুধ দেয়া হচ্ছে। তবে ক্রমবর্ধমান উচ্চরক্তচাপ ঝুঁকি মোকাবিলায় সিলেটসহ সারাদেশে তৃণমূল পর্যায়ে ওষুধের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে কমিউনিটি ক্লিনিকের বিদ্যমান ওষুধ তালিকায় উচ্চরক্তচাপের ওষুধ অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি ওষুধ সরবরাহ নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে এখাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। গতকাল বুধবার সকালে সিলেটের সঞ্চয়িতা ট্রেনিং সেন্টারে ‘হাইপারটেনশন কন্ট্রোল ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সাংবাদিক কর্মশালায় এসব তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরা হয়। গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই)-এর সহযোগিতায় প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) ও ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ কর্মশালাটি আয়োজন করে। কর্মশালায় সিলেট কর্মরত প্রিন্ট, ইলেক্ট্রনিক এবং অনলাইন মিডিয়ার ২৬ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। কর্মশালায় জানানো হয়- বাংলাদেশে প্রায় ৩ কোটি মানুষ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত। বাংলাদেশ এনসিডি স্টেপস সার্ভে, ২০১৮ এর তথ্য অনুযায়ী উচ্চরক্তচাপে আক্রান্তদের মধ্যে নিয়মিত ওষুধ সেবনের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছে মাত্র ১৪ শতাংশ। গ্লোবাল বারডেন অফ ডিজিজ স্টাডি, ২০১৯ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের প্রধান তিনটি কারণের একটি উচ্চরক্তচাপ। দেশে উচ্চরক্তচাপ বিষয়ে প্রশিক্ষিত কর্মী রয়েছে মাত্র ২৯ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবাকেন্দ্রে। উচ্চরক্তচাপের কারণে হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং মৃত্যুঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। বিশ্বে প্রতিবছর ১ কোটিরও বেশি মানুষ উচ্চরক্তচাপের কারণে মারা যায়, যা সকল সংক্রামক রোগে মোট মৃত্যুর চেয়েও বেশি। কর্মশালায় আরও জানানো হয়- বর্তমানে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনসিডি কর্নার থেকে উচ্চরক্তচাপের রোগীদের একমাসের ওষুধ প্রদান করা হয়। এক্ষেত্রে রোগীদের দুই থেকে তিন মাসের ওষুধ একবারে দেয়ার জন্য প্রেসক্রিপশন করা হলে হাসপাতালে রোগীর চাপ কমানো সম্ভব হবে। অস্বাস্থ্যকর ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্য গ্রহণ, কম শারীরিক পরিশ্রমে অভ্যস্ততা, তামাক ব্যবহার, বয়স্ক জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং অন্যান্য আর্থসামাজিক ও জীবনযাত্রা সম্পর্কিত কারণে দেশে উচ্চরক্তচাপের বোঝা আগামী বছরগুলোতে আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপরের সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা হলে স্বল্প ব্যয়ে অসংখ্য জীবন বাঁচানোসহ হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে বলে কর্মশালায় জানানো হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব এবং জিএইচএআই বাংলাদেশ কান্ট্রি লিড মো. রূহুল কুদ্দুস। বিশেষ অতিথি ছিলেন- সিলেট জেলা সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. স্বপ্নীল সৌরভ রায়। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেটের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক ডা. মো. আমিনুর রহমান লস্কর। কর্মশালায় সভাপতিত্ব করেন প্রজ্ঞা’র নির্বাহী পরিচালক এবিএম জুবায়ের। সাংবাদিক কর্মশালায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের রোগতত্ত্ব বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ম্যানেজার ডা. শামীম জুবায়ের ও প্রজ্ঞার উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক কর্মসূচি প্রধান হাসান শাহরিয়ার।