ঢাকার ধামরাই এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের ৫ সক্রিয় সদস্য গ্রেফতার করেছে পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। র্যাব-৪ এর একটি বিশেষ টিম ২৬ জুলাই রবিবার দিবাগত রাত ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে ধামরাই থানাধীন ধুলিভিটা বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
গ্রেফতাকৃতরা হলেন- দুরুল হুদা (৪৪), মিজানুর রহমান পলাশ (৩৫), মো. রাসেল (৩৭), আব্দুর রশিদ (২১) এবং আব্দুল হাই (৪০)। সবার বাড়িই চাঁপাইনবাবগঞ্জে।
২৭ জুলাই সোমবার দুপুরে র্যাব-৪ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম সজল ব্রেকিংনিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকার করেছে। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদী সম্পর্কিত বই, লিফলেট, ডিজিটাল কনটেন্টসহ মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার মিজানুর রহমান পলাশ প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি পেশায় ব্যবসায়ী। এক পর্যায়ে আনসার আল ইসলামের স্থানীয় এক সদস্যের সঙ্গে পরিচয় হয় এবং তাকে আনসার আল-ইসলামের দাওয়াত দেয় এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও ভিডিও সরবরাহ করে। এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। বর্তমানে সে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকায় আনসার আল ইসলামের অন্যতম সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করে আসছেন।
তিনি অনলাইনে ৬টি জঙ্গি গোপনীয় গ্রুপের অ্যাডমিন। এই সকল গ্রুপের মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠন তথা আনসার আল ইসলামের কার্যক্রম পরিচালনা করেন ও সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করে থাকেন।
গ্রেফতার দুরুল হুদা জানান, তিনি পেশায় একজন শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। আনসার আল ইসলামের চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার সমন্বয়ক মিজানুর রহমান পলাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। আনসার আল ইসলামের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার জন্য মিজানের প্রস্তাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে সদস্য পদ গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি জঙ্গি সংগঠন আনসার আল-ইসলামের একজন সক্রিয় সদস্য। বিভিন্ন মাধ্যম থেকে আনসার আল-ইসলামের বিভিন্ন ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল অ্যাপস সংগ্রহ করতেন তিনি। নতুন সদস্যদের মোটিভেট করে এবং অর্থ সাহায্য করে থাকেন তিনি।
গ্রেফতার আব্দুর রশিদ পেশায় একজন রাজমিস্ত্রী। তিনি বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের গোপন কার্যক্রম দেখে জঙ্গি উদ্বুদ্ধ হন। এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার অন্যতম সমন্বয়ক মো. মিজানুর রহমান পলাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন।
রাসেল জানান, তিনি পেশায় একজন ওয়ার্কশপ মিস্ত্রী। তিনি পলাশ এবং দুরুল হুদার অনুপ্রেরণায় আনসার আল ইসলামের একনিষ্ঠ সদস্য হিসেবে অনেক দিন যাবত কাজ করে আসছেন। সে সদস্যদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা উত্তোলন করে দুরুল হুদাকে প্রদান করতেন।
আব্দুল হাই জিজ্ঞাসাবাদে জানান, তিনি পেশায় একজন গ্রাম্য চিকিৎসক। এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম চাঁপাইনবাবগঞ্জ এলাকার অন্যতম সমন্বয়ক মিজানুর রহমান পলাশের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং তার মাধ্যমে আনসার আল ইসলামে যোগদান করেন।
জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতাররা জানান, তারা নিয়মিতভাবে তাদের সদস্যদের কাছ থেকে মেহেনতের মাধ্যমে ইয়ানত সংগ্রহ করেন। এই দলের সদস্যরা অ্যান্ড্রোয়েড মোবাইল বা ল্যাপটপের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রটেক্টিভ অ্যাপস ব্যবহার করে বিভিন্ন গোপন গ্রুপ তৈরি করে উগ্রবাদী সংবাদ, বই, ব্লগ, উগ্রবাদ উৎসাহমূলক ভিডিও আপলোড ও শেয়ার করে নিয়মিত নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছিলেন।
তারা ৮/১০ জন দেশের নিয়মিত বিভিন্ন জেলায় তাদের দলের সদস্যদের সঙ্গে গোপন বৈঠকের জন্য গমন করে নতুন নতুন সদস্য সংগ্রহ করেন। ঢাকার সাভার ও ধামরাই এলাকার তাদের সাথি বন্ধুদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাত ও গোপন মিটিং করার জন্য গ্রেফতাররা ধামরাই থানাধীন ধুলিভিটা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তাদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে এই তথ্য জানতে পেরে গতকাল রাত্রে তাদেরকে ধামরাই থেকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের দলের আরও বেশ কয়েকজন পালিয়ে যায়। পলাতক জঙ্গিদের সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহপূর্বক গ্রেফতারের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।