বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো আমাদের জাতীয় পরিসংখ্যান সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন ধরণের শুমারি পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য শুমারিগুলো হলো জনশুমারি, কৃষিশুমারি ও অর্থনৈতিকশুমারি। বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পরিসংখ্যানিক কার্যক্রমসমূহের একটি হলো অর্থনৈতিক শুমারি যা বাংলাদেশে পরিসংখ্যানও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের আওতায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক বাস্তবায়নাধীনঅর্থনৈতিক শুমারি-২০২৩ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায়পরিচালিত হয়। দেশের সর্বপ্রথম অর্থনৈতিক শুমারি ১৯৮৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়, এরপর ২য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০০১ এবং ২০০৩ সালে পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়, ৩য় অর্থনৈতিক শুমারি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে বাংলাদেশের ৪র্থ অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪। অর্থনৈতিক শুমারির মূল কার্যক্রম আগামী ১০ থেকে ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ১৫ দিনব্যাপী সারাদেশে পরিচালিত হবে। শুমারির সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে আজ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) আগারগাঁওয়ের বিবিএস অডিটরিয়ামে অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪ প্রকল্পের চূড়ান্ত প্রস্তুতি বিষয়ে একটি অবহিতকরণ কর্মশালার আয়োজন করে।কর্মশালায় বাংলাদেশপরিসংখ্যান ব্যুরোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারাসহ অন্যান্য প্রতিনিধিগণ উপস্থিত থেকেমূল শুমারিরচূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। কর্মকর্তাগণ তাদের মূল্যবান মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন, যা শুমারির কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহায়ক হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কর্মশালার বিশেষ অতিথি, জনাব এস এম শাকিল আখতার, প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ও অংশীজনদের পরামর্শের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, “এই কর্মশালার দিকনির্দেশনা শুমারির সাথে সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে তাদের দায়িত্ব পালনে আরও সক্রিয় করবে।” তিনি জানান, চূড়ান্ত প্রস্তুতি হিসেবে বিভাগীয় ও জেলা শুমারি সমন্বয়কারীদের প্রশিক্ষণ, উপজেলা ও থানা পর্যায়ে জোনাল অফিসারদের প্রশিক্ষণ এবং তালিকাকারীদের প্রশিক্ষন ও সার্বক্ষনিক মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়ে। এছাড়া, আধুনিক (CAPI-Computer-Assisted Personal Interviewing) পদ্ধতিতে ট্যাবের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রচার ও অন্যান্য কার্যক্রমও সম্পন্ন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি, জনাব মোহাম্মদ ওবায়দুল ইসলাম, উপমহাপরিচালক (যুগ্মসচিব), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বলেন, “অর্থনৈতিক শুমারির মাধ্যমে আমরা দেশের প্রকৃত আর্থিক চিত্র তুলে ধরতে চাই, যা ভবিষ্যতে নীতি প্রণয়নে সহায়ক হবে। এজন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি এবং কার্যক্রম বাস্তবায়নে আমাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।” প্রধান অতিথি জনাব মো. মাহবুব হোসেন, সচিব, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, বলেন, “অর্থনৈতিক শুমারি সফলভাবে বাস্তবায়নের জন্য বিবিএস-এর সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রতিনিধিবৃন্দ, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার সদস্য, এবং স্টেকহোল্ডারদের সমন্বিত ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে, শুমারির গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ও তথ্য সংগ্রহে সহযোগিতার জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রচার কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে, যা সফল শুমারি বাস্তবায়নে সহায়ক হবে।” অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জনাব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব), বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো । অর্থনৈতিক শুমারি ২০২৪-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো ও প্রবণতা সম্পর্কে সঠিক ও আপডেটেড তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে, যা দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। বিবিএস-এর কর্মকর্তারা শুমারির প্রতিটি ধাপে যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ ও সময়মত সম্পন্ন করার জন্য নিবেদিত বদ্ধপরিকর থাকার কথা জানান। এবারের অর্থনৈতিক শুমারি তথ্য সংগ্রহ পদ্ধতিকে আরও উন্নত করার লক্ষ্যে প্রচার প্রচারণা এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এই শুমারির মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য দেশের অর্থনৈতিক নির্দেশকগুলোর বিশ্লেষণ এবং পরিকল্পনা প্রণয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।