হালকা শীতের আমেজে অতিথি পাখি আসতে শুরু করেছে চলনবিলে। কিন্তু বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইনের নূন্যতম প্রয়োগ না থাকায় পাখি শিকারিদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেছে শীতের শুরুতেই। পাখি শিকারিরা অবাধে অতিথি পাখি নিধন করে চলেছেন। সরেজমিনে দেখা যায়, চলনবিল অধ্যূষিত সগুনা ইউনিয়নের কুন্দইল গ্রামের কুন্দইল বাজার ও দিঘীসগুনা গ্রামের দিঘী বাজারে রীতিমত পাখির বাজার বসেছে। শিকারিরা রাতভর পাখি শিকার করে ভোরে বাজারে নিয়ে আসেন বিক্রির জন্য। এ ছাড়াও বারুহাস ইউনিয়নের বস্তুল গ্রামের বস্তুল বাজার ও পঁওতা গ্রামের পঁওতা বাজারে শতশত বক বিক্রি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাখি শিকারিরা বলেন, তারা মনে করেন পাখি শিকারে তেমন বিধিনিষেধ নেই। বরং অন্য কাজের পাশাপাশি অল্প শ্রমে পাখি শিকার করে অতিরিক্ত টাকা পাওয়া যায়। বিশেষ করে লোকজনের কাছে অতিথি পাখির ব্যপক চাহিদা রয়েছে। শিকারিদের সাথে তারা আগে থেকেই যোগাযোগ রাখেন। অনেকে শিকারিদের বাড়ি থেকে পাখি কিনে আনেন। শিকারিরাও পৌঁছে দেন অনেকের বাড়িতে। তাড়াশ ডিগ্রি কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক মর্জিনা ইসলাম বলেন, চলনবিলের পানি নামার সময় পুঁটি, দারকিনা, খলসেসহ প্রচুর পরিমাণে ছোট মাছ ও পোকা মাকড় পাওয়া যায়। মূলত খাবারের লোভে ও অপেক্ষাকৃত শীত থেকে বাঁচতে শামুকখোল, বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির অতিথি পাখি আশ্রয় নেয় চলনবিলে। কিন্তু শিকারিরা জাল ও বিভিন্ন ফাঁদ পেতে এসব পাখি শিকার করেন। তারা হয়ত জানেননা, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী পাখি শিকারিদের জন্য এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডের বিধান রয়েছে। তাছাড়া একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটালে সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত করাদন্ড অথবা সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এদিকে চলনবিল রক্ষা আন্দোলন কমিটির তাড়াশ উপজেলা শাখার আহবায়ক আব্দুর রাজ্জাক রাজু বলেন, পাখি শিকার করে ও শিকারিদের কাছ থেকে পাখি কিনে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন অন্যদের দেখানোর জন্য। এতে বুঝা যায় পাখি শিকার করা দন্ডনীয় যে অপরাধ, তা নিয়ে শিকারি বা ক্রেতাদের এ বিষয়ে বিন্দুমাত্র ভীতি নাই। চলনবিলের পাখি বাঁচাতে আইন প্রয়োগের পাশাপশি লোকজনের মধ্যে ব্যপকহারে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।’ উপজেলা বন কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, বেশীরভাগ শিকারি রাতে পাখি শিকার করেন। বিশাল চলনবিলের মধ্যে তাদের খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তবে সচেতনতা বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাড়াশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী মাজিস্ট্রেট সুইচিং মং মারমা বলেন, পাখি শিকারিদের অবস্থান জানা গেলে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ প্রসঙ্গে রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এস. এম. সাজ্জাদ হোসেন দৈনিক ইত্তেফাককে বলেন, তাড়াশ উপজেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনে যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে পাখি শিকারিদের আইনের আওতায় আনা হবে।