সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার সড়াতৈল বাজারটি আশপাশের অন্তত দশ গ্রামের কেন্দ্রস্থল। এখানে রয়েছে কলেজ, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দাখিল মাদরাসা,প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কমিউনিটি ক্লিনিক। এ অঞ্চলের শত শত মানুষের বাজারঘাট হয় এই সড়াতৈল বাজার থেকেই। অথচ এমন একটি জনগুরুত্বপূর্ণ জনপদে যাতায়াতে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এক কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা। বর্ষা মৌসুমে কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে থাকা এই রাস্তায় যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। দেখে মনে হয় রাস্তা নয়, এ যেন লাঙল দিয়ে সদ্য চাষ করা কোনো জমি। এ সড়কে নানা বিড়ম্বনার মধ্য দিয়ে স্কুল-কলেজে যেতে শত শত হয় শিক্ষার্থীদের। সরেজমিনে জানা যায়, অলিপুর-সড়াতৈল সড়কটি পাঁচলিয়া এলাকায় গিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটির আমডাঙ্গা থেকে সড়াতৈল মাদ্রাসা মোড় পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার অংশ পাকা করা হলেও পরের এক কিলোমিটার অংশ রয়েছে কাঁচা। আর এই কাঁচা সড়কটির অধিকাংশ স্থানেই কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে আছে। কোনো যানবাহন দূরের কথা হেঁটেও চলা যাবে না এমন অবস্থায় রয়েছে সড়কটির বেশ কয়েকটি স্থানে। স্থানীয়রা বলেন, অলিপুর-সড়াতৈল সড়কটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সড়কটি দিয়ে বড়হর ইউনিয়নের, বাগদা, চর বাগদা, রশিদপুর, অলিপুর, বোয়ালিয়া, বড়হর, পাগলা বোয়ালিয়া, গুয়াগাঁতিসহ অন্তত ১০ গ্রামের ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতের একমাত্র পথ। এসব গ্রামের মানুষকে উপজেলা সদর, জেলা সদরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতে হয় এ সড়কটি দিয়েই। শুকনো মৌসুমে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও বর্ষা মৌসুমে সড়কটি দিয়ে যাতায়াত করা একেবারেই দুষ্কর হয়ে পড়ে। রাস্তাটি দিয়ে থ্রি-হুইলার যানবাহনও চলাচল করতে পারে না। ফলে মালামাল পরিবহণ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। কৃষি প্রধান এলাকার কৃষিপণ্য হাটে বা বাজারে নিতে না পেরে ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হয় কৃষক। এমনকি হেঁটে চলাচলও মুশকিল হয়ে পড়ে জনসাধারণের। সড়াতৈল গ্রামের মোহাম্মদ বিপ্লব কাজী নামে এক সমাজকর্মী বলেন, অত্র অঞ্চলের ১০টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র পথটি বর্ষা মৌসুমের পুরো সময়ই কাদায় পূর্ণ হয়ে থাকে। কোনো কোনো সময় হাঁটু পর্যন্ত কাঁদার কারণে যানবাহন তো দূরের কথা পায়ে হেঁটেও যাতায়াত করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। তারপরও অনেক কষ্ট করে মানুষ যাতায়াত করছে। হেঁটে গেলেও শরীরে কাঁদায় কাপড়-চোপড় নষ্ট হয়ে যায়। ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পোশাক নোংরা হয়ে যায়। কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। বছরের পর বছর ধরেই আমরা এমন অবস্থার মধ্যে রয়েছি। সড়াতৈল মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল মান্নান বলেন, আমার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও অলিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সড়াতৈল মুসলিম উচ্চবিদ্যালয়, সড়াতৈল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সড়াতৈল দাখিল মাদরাসা ও সড়াতৈল ইউনিক কিন্ডারগার্টেনের হাজারও শিক্ষার্থীকে অলিপুর-সড়াতৈল সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয়। একটি পোস্ট অফিস ও কমিউনিটি ক্লিনিকও রয়েছে সড়াতৈল বাজারে। এছাড়াও সড়াতৈল প্রতিদিনের বাজার তো রয়েছেই। হাজার হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তাটির কাঁচা অংশটুকু গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ৫/৬ দিন পর্যন্ত এই কাঁচা অংশ কাদায় পরিপূর্ণ হয়ে থাকে। হাঁটুসমান কাদা মাড়িয়ে স্কুল-কলেজে যেতে হয় শত শত ছাত্র-ছাত্রীকে। ছেলে-মেয়েরা অনেক সময় স্কুলে যেতে পড়ে গিয়ে পোশাক ও ব্যাগ নষ্ট করে ফেলে। অনেককে বাড়ি ফিরে যেতে হয় কাদা মাখা অবস্থায়। উল্লাপাড়া উপজেলা প্রকৌশলী আবু সায়েদ জানান, রাস্তাটি জনগুরুত্বপূর্ণ। বড়হর ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের মানুষ সেখান দিয়ে যাতায়াত করে। ইতোমধ্যে রাস্তাটির দেড় কিলোমিটার পাকা করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই বাকি অংশটুকুও পাকাকরণ করা হবে।