সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ। সেই সাথে সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সকল সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং নেতৃবৃন্দের নামে বানোয়াট মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।
শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) উদ্যোগে আয়োজিত এক সাংবাদিক সমাবেশ থেকে নেতারা এই দাবি জানান। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ গণমাধ্যমের স্বাধীনতাবিরোধী সকল কালাকানুন বাতিল, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনিসহ সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিক সুরক্ষা আইন প্রণয়ন এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের নামে বানোয়াট নিউজ পরিবেশনের প্রতিবাদে এই সবাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের নামে মিথ্যাচারের ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়।
ডিইউজে সভাপতি মো: শহিদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএফইউজে সভাপতি রুহুল আমিন গাজী, মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী, ডিইউজে’র সাবেক সভাপতি কবি আবদুল হাই শিকদার, দ্য নিউ নেশনের সাবেক সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ডিইউজে সাধারণ সম্পাদক খুরশীদ আলম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী, বিএফইউজে’র সহসভাপতি খায়রুল বাশার, বিএফইউজের সহকারি মহাসচিব বাছির জামাল, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নওয়াজ, রংপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক, মুন্সীগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী বিপ্লব হাসান, সাংবাদিক নেতা জাহিদুল করিম কচি, এরফানুল হক নাহিদ, শাহীন হাসনাত, খন্দকার আলমগীর, এম সাঈদ খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম।
সমাবেশে রুহুল আমিন গাজী বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর কোনও দাবি দাওয়ার জন্য রাজপথে নামতে হবে, এটা আমাদের প্রত্যাশিত ছিল না। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে আমাদের রাজপথে নামতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সাগর-রুনির হত্যার বিচার চাইতে হবে কেন? এটা নিয়ে এত টালবাহানা কেন? কেন আপনারা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করলেন না? কেন কোনও পুলিশের ইনকোয়ারি করেন নাই, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে।’ সমাবেশে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার উদ্দেশ্যে বিএফইউজে সভাপতি বলেন, ষড়যন্ত্র করে গণতন্ত্রকে নস্যাৎ করতে পারবেন না। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশ গঠিত হয়েছে, সে বাংলাদেশকে কলুষিত করার ক্ষমতা আপনার নেই। সুতরাং, সব ষড়যন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসুন। সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন করে ভুয়া বানোয়াট সংবাদ পরিবেশনের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, এ কেমন সাংবাদিকতা? অপসাংবাদিকতা সাংবাদিক সমাজ সহ্য করবে না। মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করার জন্য, সাংবাদিকদের চরিত্র হনন গণমাধ্যমের কাজ নয়।
কবি আবদুল হাই শিকদার বলেন, ১২ বছরেও সাগর-রুনি হত্যার বিচার না হওয়া দুঃখজনক। এ হত্যাকান্ডে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। গত ১৫ বছরে ৬৪ জন সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি খুনের শিকার সাংবাদিকদের পরিবারকে ক্ষতি পূরণ প্রদানের দাবি জানান। সাংবাদিকদের এ নেতা বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে সাংবাদিক নেতারা লড়াই করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করা হচ্ছে, মিথ্যাচার করা হচ্ছে। এসব বন্ধ করতে হবে।
সমাবেশে বিএফইউজে’র মহাসচিব কাদের গণি চৌধুরী বলেন, যেহেতু দেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হয়েছে, তাই বর্তমান সরকারকে বলতে চাই- অবিলম্বে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আমরা যেমন সাংবাদিক সুরক্ষা আইন চাই, ঠিক একইভাবে আর কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে গিয়ে যেন কোনো সাংবাদিক আহত না হয়, সেটাও চাই।
সভাপতির বক্তব্যে শহিদুল ইসলাম বলেন, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যারা লড়াই করেছেন, সে সব সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অত্যন্ত উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে কিছু মিডিয়া মিথ্যাচার করছে। তাদের চরিত্র হনন করছে। এটা সহ্য করা হবে না। যারা এসব অপকর্মে জড়িত, তাদের খুঁজে বের করতে ডিইউজে’র পক্ষ থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হবে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ডিআরইউ’র সাবেক সভাপতি মুরসালিন নোমানী বলেন, সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ১২ বছরের বেশি সময় পার হলেও দু:খজনকভাবে খুনিদের এখনও কোন বিচার হয়নি। হত্যাকাণ্ডের সময় বলা হয়েছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের ধরা হবে। কিন্তু তাদের হত্যাকান্ডের পর ১ লাখ ৫ হাজার ২০৩ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও খুনিদের ধরা হয়নি। তিনি স্বৈরাচার সরকারের পতনের আগে নিহত ৫ জন সাংবাদিক পরিবারের দায়িত্ব নিতে সরকারের প্রতি আহবান জানান।