সাংবাদিকদের ওপর হামলা, রক্তাক্ত জখমের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দোষীব্যক্তিদের কে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শান্তির দাবি জানান ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন, ঢাকা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক, মোঃ দেলোয়ার হোসেন ও সভাপতি আওরঙ্গ জেব কামাল সহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সাধারণ সম্পাদক মোঃ দেলোয়ার হোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, গত কয়েকদিনের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন পত্র পত্রিকা ও টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক কর্মীগন আহত হয়েছেন।
১৮ জুলাই সন্ধ্যায় যাত্রাবাড়ী এলাকায় সহিংসতার সময় পুলিশের গুলিতে হত্যার শিকার হন ঢাকা টাইমসের সিনিয়র রিপোর্টার হাসান মেহেদী। ১৯ জুলাই দুপুরে সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে আন্দোলনের ছবি তোলার সময় ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক তৌহিদ জামান প্রিয়’র মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। একই দিনে সিলেটে দায়িত্ব পালনের সময় নয়া দিগন্তের সাংবাদিক এ টি এম তুরাব গুলিবিদ্ধ হন। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তুরাবের দেহে আটানব্বইটি গুলি পাওয়া যায়। এ ছাড়া ১৮ জুলাই দৈনিক ভোরের আওয়াজের গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি মো. শাকিল হোসেন সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এই ছাড়া ও আহত হন কালবেলার আকরাম হোসেন, এসএ টিভির রহমতুল্লাহ ও রেদওয়ান হিমেল, তারিকুল ইসলাম, আব্দুল আউয়াল, মহির মারুফ,আবু সাঈদ নিশান, জুবায়ের আহমেদ, সময় টিভির-ত্বোহা খান তামিম ও রাশেদ বাপ্পী, সামছুল আরেফিন প্রিন্স, সুমন সরকার সালাউদ্দিন আল মামুন, নিজাম উদ্দিন,,মেহেদি মামুন,
আব্দুর রহমান, সার্জিল, ওয়াজহাতুল ওয়াস্তি এস এম তাওহীদ, সময়ের আলোর মুকফিকুর রিজওয়ান, দ্য সাউথ এশিয়ান নিউজের সাকিব আহমেদ, যুগান্তরের মোসাদ্দেকুর রহমান, ডিপিসি বাংলা টিভির বিশেষ প্রতিনিধি মোঃ মুজাহিদ ইসলাম
বাংলা ট্রিবিউনের স্টাফ রিপোর্ট আরমান ভূঁইয়া জনকন্ঠের সাংবাদিক সমিতির সদস্য মোতাহার হোসেন, জনকণ্ঠ পত্রিকার চিত্র সাংবাদিক সুমন্ত চক্রবর্তীসহ প্রায় ৪২জন সহকর্মী আহত হয়েছেন। ঢাকা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তীব্র নিন্দা ও জোরালো প্রতিবাদ জানান, যারা সাংবাদিক দের উপর হামলা ও তাদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছেন। দোষীব্যক্তিদের কে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্ত মূলক শান্তির ব্যবস্থার জোর দাবি জানায়। তিনি আহবান করেন আন্দোলনকারী ও প্রতিহতকারী সকলেই সাংবাদিক দের কাছে একই। সাংবাদিকরা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেন। সাংবাদিকরা যেইখানে যা কিছু ঘটতেছে তাদের জীবনবাজি রেখে দেশ ও জনগণকে সরাসরি লাইভে হোক সংবাদ এর মাধ্যমে হোক টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে হোক, ফেইসবুকের মাধ্যমে হোক তারা কিন্তু খবর টা সবার মাঝে ছড়িয়ে দিচ্ছে। এতে দু’পক্ষই উপকৃত হচ্ছে। সাংবাদিকরা প্রচার করে বিধায় দেশ বিদেশে সবাই তাৎক্ষণিক খবরটি জানতে পারে। সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী দের প্রতি আহবান সাংবাদিকদের উপর অতাচার নির্যাতন, প্রতিহিংসা, অবমূল্যায়ন, থেকে বিরত থাকুন। সাংবাদিক হলো সকল রাজনৈতিক দলের জন্য আয়না, তারা সমাজের দর্পণ হিসেবে কাজ করে।বিবেকের সর্বোচ্চ স্থান থেকে ইতিবাচক চিন্তা ধারার মাধ্যমে সামাজিক শান্তি বিস্তৃতি করার লক্ষ্যে সমাজের অভ্যন্তরীণ কালো অধ্যায় গুলো প্রতিনিয়ত তুলে ধরেন পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে। তারা শুধুই ভালো মন্দের ঘটনা গুলো জাতির সামনে তুলে ধরে। যেন শান্তি রক্ষার দায়িত্ব হলো সরকার সহ পুরো নাগরিক সমাজের। নানা অজানা তথ্য পাওয়ার একমাত্র নির্ভরশীল তথ্য বাহক ও সরবরাহকারকই হলো জাতির বিবেক এই সাধারন সাংবাদিকেরা।সাংবাদিক জাতির বিবেক,রাস্ট্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে জোরালো নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখে, সাংবাদিক একটি জাতির জন্য আয়না স্বরুপ কাজ করে। সরকারী দল,বিরোধী দল তাদের কাছে দুটোই সমান। তাই সকল রাজনৈতিক দলের নেতাদেরকে বলছি। সাংবাদিক দেরকে সহযোগিতা করুন,তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করুন, আপনাদের থেকে সুদৃষ্টি আসা করছি।
এতগুনে গুনায়ীত হওয়ার পর আজ আমাদের সাংবাদিকরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত অত্যাচারিত নিপিড়ীত হচ্ছে। আমাদের সাংবাদিকরা তাদের
পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে ইত্তেফাক, সময় টিভি, একুশে টেলিভিশন যমুনা টিভি ও কালবেলাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমের সহকর্মীরা দুর্বৃত্তদের হামলায় বিভিন্ন জাগায় আহত এবং নিহত হবার মত ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছে। আমরা গণমাধ্যম কর্মীহয়ে নিজের জীবনবাজী রেখে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি, আমাদের তো এমনটি কখনোই কাম্য ছিলনা।
সকল আন্দোলন কারী নেতাকর্মীদেরকে বলবো সাংবাদিকদের কে সহযোগিতা করুন, তাদের কাজে প্রতিবন্ধকতার বেষ্টনী থেকে দূরে থেকে সামাজিক অবক্ষয় রোধে তাদেরকে সহযোগিতা করুন। তাদের বিপদে এগিয়ে আসুন, সাংবাদিকদের আপনারা সমাজ ব্যবস্থার অপতৎপরতার বিরুদ্ধে অক্সিজেন হিসেবে চিন্তা করতে পারেন। সাংবাদিকদের উপর অত্যাচার জুলুম,নির্যাতন এবং অবমূল্যায়ন, থেকে বিরত থাকুন। সকল রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে অনুরোধ করছি যেকোনো আন্দোলন, যেকোনো কাজে সাংবাদিক দের কে সহযোগিতা করুন। দেশের উন্নয়নে সবাই যেন স্ব-স্ব অবস্থান থেকে নিরবিচ্ছিন্ন কাজ করে যেতে পারি সেই সহযোগিতা কামনা করি।
সিনিয়র সাংবাদিক সাইদুর রহমান রিমন এর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে দেশের বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা তাদের সংগঠন কর্তৃক একাধিক ব্যানারে উপস্থিত ছিলেন।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন, ঢাকা প্রেসক্লাব বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স ফোরাম, জাতীয় রিপোর্টার্স ক্লাব, মিরপুর প্রেসক্লাব, পূর্বাঞ্চল সাংবাদিক ইউনিট, মিরপুর রিপোর্টার্স ক্লাব, জার্নালিষ্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশের, পুরান ঢাকা সাংবাদিক ফোরাম, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন, গ্লোবাল জার্নালিষ্ট কাউন্সিল ইন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফাউন্ডেশন, এশিয়ান জার্নালিষ্ট সোসাইটি, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ইউনিয়ন, খিলক্ষেত প্রেসক্লাব, মিরপুর রিপোর্টাস ইউনিটি, কেরানীগঞ্জ মডেল থানা প্রেসক্লাব, কদমতলী সাংবাদিক ক্লাব, শ্যামপুর প্রেসক্লাব, ঢাকা মেট্রোপলিটন ক্রাইম রিপোর্টার্স সোসাইটি, ডেমরা থানা প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক সোসাইটিসহ আরো একাধিক সাংবাদিক সংগঠন এবং সংগঠনের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ জার্নালিস্ট অর্গানাইজেশন এর চেয়ারম্যান এস এম মোরশেদ। ঢাকা প্রেসক্লাবের সহ সভাপতি ও এস টিভি বাংলা সহ-সম্পাদক সুরমা আলম, অর্থ সম্পাদক ও দৈনিক সবুজ বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক মোঃ মাসুদ আলম সহ জিয়াউর রহমান,হাফিজুর রহমান শফিক. জুয়েল খন্দকার, মুস্তাকিম নিবিড়, মোঃ সেলিম, আকাশ মনি, সাইদুল ইসলাম, সৈয়দা রিমি, মাহাবুব আলম, মেহেদী হাসান, আব্দুল আজিজ, সুজন শেখ, জাকিয়া সুলকানা ও আজিজুল ইসলাম যুবরাজ বক্তারা বলেন, কোটা আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীসহ সারাদেশে সাংবাদিক হতাহত, গণমাধ্যমের গাড়ি ভাংচুর, আগুনে জ্বালিয়ে দেয়াসহ নজিরবিহীন যে বর্বরতা চালানো হয়েছে তার কঠোর প্রতিবাদ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি। সরকারি বাহিনী এবং আন্দোলনকারী উভয়েই সাংবাদিকদের প্রতিপক্ষ বানিয়ে জঘণ্যভাবে হামলায় পড়েছে। কোথাও লড়াইয়ের ফাঁদে ফেলে, কোথাও ঠান্ডা মাথায় গুলি চালিয়ে চার জন সাংবাদিককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আহত বানানো হয়েছে প্রায় দুইশ’ বিশ জন সংবাদকর্মিকে। এদের মধ্যে অনেকেই চিরদিনের জন্য পঙ্গু হয়ে গেছেন।
ছাড়াও বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব ও ডিইউজের সাবেক র্নিবাহী সদস্য এএইচ আল আমিন। সেদিন কি ঘটেছিলো, তা তার প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক ইমাম হোসেন ইমন সবার সামনে তুলে ধরেছেন।
এসময় বক্তারা তাদের দাবি উত্থাপন করে বলেন, আন্দোলন চলাকালীন দুদিনের মধ্যে চার সাংবাদিক হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আমরা অবিলম্বে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমরা চাই হত্যার শিকার সাংবাদিক পরিবারের সদস্যকে সরকারি চাকরি প্রদানসহ পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক। পাশাপাশি আহতদের সমুদয় চিকিৎসা ব্যয়বহণসহ জরুরি আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হোক।
সাংবাদিকগন দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের জীবন কেড়ে নেয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারসমূহের পাশে তাৎক্ষণিক ভাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দাঁড়ানোর নজির দেখতে পেয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রী কে খোঁজ খবর নিতে দেখেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী কে দেখেছি নিহত
পুলিশ ও আনসার পরিবার কে দান অনুদান প্রদান করতে। এগিয়ে আসতে দেখেছি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টকেও। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। কিন্তু পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম থাকা সাংবাদিকদের হত্যার ঘটনায় পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তাদের জীবন যাপনের স্থায়ী ভিত্তি গড়ে দেওয়া খুবই জরুরি। ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক হাসান মেহেদির দুটি অবুঝ সন্তান রয়েছে। শুধু কোটা-সংস্কার আন্দোলন নয়, কোনো আন্দোলনেই একজন সংবাদকর্মী কখনো কারো প্রতিপক্ষ হয়ে কাজ করে না। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে সাংবাদিকরা দায়িত্ব পালনের সময় গুলিবিদ্ধ, হামলার শিকার ও সংঘাতের মাঝে পড়ে দুইশতাধিক সংবাদকর্মিরা আহত হয়েছেন।
সাংবাদিকেরা আন্দোলন করতে যাননি, পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন। তাকে কেন গুলিবিদ্ধ হয়ে হত্যার শিকার হতে হবে? কেন বরণ করতে হবে পঙ্গুত্ব? প্রতিটি ঘটনার ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার মধ্য দিয়েই সাংবাদিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত হবে বলে মনে করেন সকল সাংবাদিক সংগঠন এর নেতারা।