আমরা শুরুটাই করি ভেজাল দিয়ে। যেমন জন্মনিবন্ধনে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছি, চাকরি নিতে গিয়ে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছি। এজন্য আমাদের সামাজিক ও মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। ভেজাল প্রতিরোধ করতে না পারলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব না। এজন্য উৎপাদন পর্যায়ে নজর না দিলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। গতকাল মঙ্গলবার (১১ জুন) সকালে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে ‘খাদ্যজনিত অসুস্থতা ও স্বাস্থ্য বিপত্তি নিরসনে নিরাপদ খাদ্যব্যবস্থার গুরুত্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের (বিএফএসএ) উদ্যোগে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়। বিএফএসএ’র চেয়ারম্যান জাকারিয়ার সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিভাগের বিভাগীয় কমিশনার মোঃ সাবিরুল ইসলাম, মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিএফএসএ সদস্য আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান। মো. সাবিরুল ইসলাম বলেন, করপোরেট পর্যায়ে যারা খাদ্য উৎপাদনে বিস্কিট আমদানি ২০ এসে পড়েছে। ক্যান্সার আক্রান্ত হচ্ছে। এজন্য ধান, শাক-সবজি উৎপাদনে কতটুকু সার, কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে তা দেখা দরকার। তিনি বলেন, একটি বাগানে কী পরিমাণ কীটনাশক ব্যবহার করা হবে, সেখানে কৃষি কর্মকর্তাদের উপস্থিতি পাওয়া যায় না। কিন্তু যেখানে ভালো ফসল হয়, সেখানে তাদের সাইনবোর্ড দেখা যায়। ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার আরো বলেন, আমরা যদি নিজেরা নীতি-নৈতিকতা না মানি তাহলে খাদ্য নিরাপদ করা যাবে না। মুড়িতে ইউরিয়া সার দেওয়া হচ্ছে, কৃষিতে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার হচ্ছে। পেশাদারদের মধ্যে পেশা দারিত্ব না থাকলে শুধু নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ দিয়ে কাজ করলে খাদ্য নিরাপদতা করা যাবে না। খাদ্যের নিরাপদতা নিশ্চিতে ১৭ কোটি মানুষকে নিয়ে কাজ করতে হবে। মানব, পশু ও পরিবেশগত খাদ্যব্যবস্থা নিয়েও কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, যেহেতু নিরাপদ খাদ্যের লোকোবল কম তাই উপজেলা পর্যায়ে কাজ করতে হলে সরকারের অন্যান্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জনশক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে বিএফএসএ চেয়ারম্যান জাকারিয়া বলেন, খাদ্য ব্যবস্থাপনায় প্লাস্টিকের ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব প্রক্রিয়ায় খাদ্য কতটা নিরাপদ থাকছে তা নিয়ে গবেষণা করতে হবে। খাদ্যজনিত কারণে কত মানুষ অসুস্থ হয় তার কোন তথ্য নেই। বিশ্বের ১০ শতাংশ মানুষ অসুস্থ হয়। তবে আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি মানুষ অসুস্থ হয়। আর দক্ষিণ এশিয়ায় এ হার বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ যেহেতু দক্ষিণ এশিয়ার দেশ সেক্ষেত্রে আমরা খাদ্যজনিত অসুস্থতায় দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছি। তবে এ ব্যাপারে আমাদের নিজস্ব কোন জরিপ বা গবেষণা নেই। আমরা বিভিন্ন হাসপাতালে এ বিষয়ে তথ্য চাইলে তারা জানিয়েছে এ ব্যাপারে কোন তথ্য নেই। তবে আইসিডিডিআরবি তারা কিছু তথ্য দিয়েছে তারা প্রসেসিং চলছে। আবু নূর মোঃ শামসুজ্জামান বলেন, নিরাপদ খাদ্যপ্রাপ্তির অধিকারকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়ার জন্য উপস্থিত সকলকে আহ্বান করেন। বিএফএসএর সদস্য ড. মোহাম্মদ শোয়েব বলেন, আইইডিসিআরের ২০১৫ সালের হিসেবে দেশে ৩ কোটি মানুষ খাদ্যজনিত অসুস্থতায় ভোগে। তা ছাড়া অন্য একটি হিসেবে এ সংখ্যা সাড়ে ৪ কোটি। অনুষ্ঠানে সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের, খাদ্যপ্রতিষ্ঠানসমূহের, গণমাধ্যমের ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।