শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজে সমতা ফেরালো স্বাগতিক বাংলাদেশ। সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ ৮ উইকেটে হারিয়েছে শ্রীলংকাকে। উইকেট বিবেচনায় টি-টোয়েন্টিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে এটিই বড় জয় টাইগারদের। এই জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরালো বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচ ৩ রানে জিতেছিলো শ্রীলংকা।
এ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৫ রান করেছিলো শ্রীলংকা। জবাবে তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয়ের ৫৫ বলে ৮৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ১১ বল বাকী রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। শান্ত ৫৩ ও হৃদয় ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন। ম্যাচ সেরা হন শান্ত।
গতকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ম্যাচেও টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল। বল হাতে নিয়ে ম্যাচের প্রথম ওভারেই মেডেন নেন বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার শরিফুল ইসলাম।
দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলে ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোকে খালি হাতে সাজঘরে ফেরত পাঠান আরেক পেসার তাসকিন আহমেদ।
প্রথম উইকেট হারানোর পর বাংলাদেশ বোলারদের উপর চড়াও হন আরেক ওপেনার কুশল মেন্ডিস ও কামিন্দু মেন্ডিস। তাসকিনের করা চতুর্থ ওভারে ২টি ছক্কা ও ১টি চারে ১৭ রান তুলেন দু’জনে। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে মুস্তাফিজুর রহমানের বলে ২টি চার ও ১টি ছক্কায় ১৫ রান নেন কুশল ও কামিন্দু। এতে পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ১ উইকেটে ৪৯ রান পেয়ে যায় শ্রীলংকা। অথচ প্রথম ৩ ওভারে লঙ্কানদের রান ছিলো ১ উইকেটে ৮।
নবম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসে কুশলকে থামিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক-থ্রু এনে দেন মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ২টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২২ বলে ৩৬ রান করা কুশল। দ্বিতীয় উইকেটে ৪২ বলে ৬৬ রান যোগ করেন কুশল ও কামিন্দু।
সতীর্থকে হারানোর কিছুক্ষণ পর মাহেদি হাসানের থ্রোতে নন স্ট্রাইকে রান আউট হন কামিন্দু। ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৭ বলে ৩৭ রানে ফিরেন তিনি। চার নম্বরে নেমে সুবিধা করতে পারেননি সাদিরা সামারাবিক্রমা। ৭ রান করে মুস্তাফিজের শিকার হন তিনি।
আগের ম্যাচের মত উইকেটে সেট হয়ে মারমুখী হয়ে উঠেন শ্রীলংকার অধিনায়ক চারিথ আসালঙ্কা। ১৪তম ওভারে স্পিনার মাহেদির বলে ২টি ছক্কা মারার পর বোল্ড হন আসালঙ্কা। ১৪ বল খেলে ১টি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৮ রান করেন লঙ্কান দলনেতা।
দলীয় ১১২ রানে আসালঙ্কা ফেরার পর দলের হাল ধরে ইনিংসের শেষ ৩৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৩ রান যোগ করে শ্রীলংকাকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন দুই সাবেক অধিনায়ক ম্যাথুজ ও দাসুন শানাকা। ২০ ওভারে ৫ উইকেটে ১৬৫ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। ৪টি বাউন্ডারিতে ২১ বলে ৩২ রানে অপরাজিত থাকেন ম্যাথুজ। ১টি করে চার-ছক্কায় ১৮ বলে অনবদ্য ২০ রান করেন শানাকা।
তাসকিন, মাহেদি, মুস্তাফিজ ও সৌম্য ১টি করে উইকেট নেন।
১৬৬ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে দারুন শুরু করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার লিটন দাস ও সৌম্য। চতুর্থ ওভারে পেসার বিনুরা ফার্নান্দোর বলে ক্যাচ আউট হলেও রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান ১৪ রানে থাকা সৌম্য। জীবন পেয়ে লিটনের সাথে পাওয়ার প্লেতে ৬৩ রান তুলেন সৌম্য।
সপ্তম ওভারে দলীয় ৬৮ রানে মাথিশা পাথিরানার বলে শিকার হন সৌম্য। ৫টি চারে ২৬ রান করেন সৌম্য।
১৩ বল পর পাথিরানার দ্বিতীয় শিকার হন লিটনও। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৪ বলে ৩৬ রান করেন লিটন।
নবম ওভারে দুই ওপেনারের বিদায়ের পর বাংলাদেশকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান অধিনায়ক নাজমুল ও তাওহিদ হৃদয়। তৃতীয় উইকেটে ৫৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ৮৭ রান তুলেন তারা।
১৯তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা মেরে দলের জয় নিশ্চিতের পাশাপাশি টি-টোয়েন্টিতে চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন নাজমুল। ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৮ বলে অপরাজিত ৫৩ রান করেন নাজমুল। ২টি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারিতে ২৫ বলে অনবদ্য ৩২ রান করেন হৃদয়।
আগামী ৯ মার্চ একই ভেন্যুতে সিরিজ নির্ধারনী তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি খেলতে নামবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।
শ্রীলংকা ব্যাটিং :
আভিষ্কা ক এন্ড ব তাসকিন ০
কুশল ক লিটন ব সৌম্য ৩৬
কামিন্দু রান আউট ৩৭
সামারাবিক্রমা ক এন্ড ব মুস্তাফিজুর ৭
আসালঙ্কা ব মাহেদি ২৮
ম্যাথুজ অপরাজিত ৩২
শানাকা অপরাজিত ২০
অতিরিক্ত (ও-৫) ৫
মোট (৫ উইকেট, ২০ ওভার) ১৬৫
উইকেটের পতন : ১-১ (আভিষ্কা), ২-৬৭ (কুশল), ৩-৭৭ (কামিন্দু), ৪-৯২ (সামারাবিক্রমা), ৫-১১২ (আসালঙ্কা)।
বোলিং :
শরিফুল : ৪-১-২০-০ (ও-২), তাসকিন : ৪-০-৩৮-১, মাহেদি : ৪-০-৩৯-১ (ও-১), মুস্তাফিজ : ৪-০-৪২-১ (ও-১), রিসাদ : ৩-০-২১-০ (ও-১), সৌম্য : ১-০-৫-১।
বাংলাদেশ ব্যাটিং :
লিটন ক আসালঙ্কা ব পাথিরানা ৩৬
সৌম্য ক ম্যাথুজ ব পাথিরানা২৬
নাজমুল অপরাজিত ৫৩
হৃদয় অপরাজিত ৩২
অতিরিক্ত (বা-৪, লে বা-৬, ও-১৩) ২৩
মোট (২ উইকেট, ১৮.১ ওভার) ১৭০
উইকেটের পতন : ১-৬৮ (সৌম্য), ২-৮৩ (লিটন)।
বোলিং :
ম্যাথুজ : ২.২-০-২২-০, মাদুশাঙ্কা : ৪-০-৩৪-০ (ও-১), বিনুরা : ৩-০-২২-০ (ও-১), থিকশানা : ৪-০-৩৫-০ (ও-১), পাথিরানা : ৩.৪-০-২৮-২ (ও-৪), শানাকা : ১,১-০-১৯-০।
ফল : বাংলাদেশ ৮ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ : তিন ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।