চলতি বছর র্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর জেল থেকে বের হয়ে এসে চালাচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড॥ তার বিরুদ্ধে রয়েছে বহু মামলা ও অভিযোগ॥ আতঙ্কে কাটছে তার বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী ও অভিযোগকারীরা
আবারও সক্রিয় হয়ে উঠেছে কেরানীগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী জরিপ মিয়া ওরফে কালা জরিপ। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বর্তমানে মূর্তিমান শীর্ষ সন্ত্রাসী ও এলাকাবাসীর আতঙ্ক জরিপ। তার বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ ও আশপাশের এলাকায় মাদক ব্যবসা, অবৈধভাবে জমি দখল, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ ও হত্যাসহ ১০/১২টি মামলা রয়েছে। এসব অভিযোগ চলতি বছর জানুয়ারি মাসে র্যাব অভিযান চালিয়ে কেরানীগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী জরিপ মিয়াকে গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন অস্ত্র, মাদক, টাকা ও একটি গাড়ি জব্দ করে। সম্প্রতি জরিপ মিয়া ওরফে কালা জরিপ জেল থেকে বের হয়ে এসে চালাচ্ছে অপরাধ কর্মকাণ্ড। তার বিরুদ্ধে যারা মামলা করছেন এবং অভিযোগ দিয়েছেন তাদেরকে প্রকাশ্যেই প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। কেউ তার বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পাচ্ছেন না। তার অত্যাচারে সাধারণ মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছেন।
জানা গেছে, গত ৬ সেপ্টেম্বর’ ২০১৮ ইং দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মূর্তিমান শীর্ষ সন্ত্রাসী ও এলাকাবাসীর আতঙ্ক জরিপ ওরফে কালা জরিপ গ্রেফতার পুলিশ। জেলহাজত থেকে বের হয়ে এসে মামলার বাদীকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তার ভয়ে মামলার বাদী আত্মগোপনে চলে যায়। এরপর আবার চলতি বছর ১৮ জানুযারী বুধবার ভোরে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকায় দীর্ঘদিন সাধারণ মানুষের জমি দখল, মাদক কারবারের অভিযোগে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি জরিপ মিয়া ওরফে কালা জরিপকে (৪০) সহযোগীসহ গ্রেফতার করে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় জরিপের তিন সহযোগী মো. আনিসুর রহমান (৩৮), মো. জাহিদ ওরফে বাবু মন্ডল (৪৫) ও ঝুমুর আক্তারকে (২৬) গ্রেফতার করা হয়। সম্প্রতি জেলহাজত থেকে বের হয়ে এসে শীর্ষ সন্ত্রাসী জরিপ মিয়া ওরফে কালা জরিপ মামলার বাদী ও অভিযোগকারীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শীর্ষ সন্ত্রাসী জরিপ ওরফে কালা জরিপের নাম শুনলে মুখে কুলুপ আঁটেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সাধারণ মানুষ। এলাকার সাধারণ মানুষের প্রতিদিন কাটছে জরিপ মিয়া আতঙ্কে। জরিপ যা মনে করেন, তাই করেন। কারোর টাকা আছে মনে করলেই তুলে এনে বা লোক পাঠিয়ে চাঁদা চেয়ে বসেন জরিপ। তবে চাঁদার পরিমাণটা তার মন-মর্জির ওপরে নির্ভর। শেষে হয় টাকা, না হয় এলাকা ছাড়া হতে হয় ভুক্তভোগীকে।
সূত্র আরও জানায়, বাবার চাকরি চলে যাবার পরে পারিবারিক অনাটনে জড়িয়ে পরেন সেই সময়কার সন্ত্রাসী ‘আনসার বাহিনীতে’। ছোট বেলায় ওই বাহিনীতে হাত পাকিয়েছেন জরিপ মিয়া। এ সময় নিজেই রপ্ত করেছেন বিভিন্ন অস্ত্র চালানোর কৌশল। আনসার বাহিনীর প্রধান পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান। পরে ওই বাহিনীর নেতৃত্বে আসে জরিপ মিয়া। সেই বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘জরিপ বাহিনী’। জরিপের আতঙ্কে এলাকা ছাড়া অনেক মানুষ। কারোর কাছে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় হত্যার ঘোষণা, কারোর বা জমি দখল করে নেয়ায় প্রতিবাদ করায় ছাড়তে হয়েছে বাপ-দাদার বাড়ি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কেউ কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
ইকুরিয়া বাজার এলাকার আবুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘ঠিক দিনক্ষণ মনে নাই, তবে সাত-আট বছর আগে স্থানীয় ডিশ ব্যবসায়ী মতিউর রহমান মতি নিখোঁজ হন। এরপর জরিপ মতির স্ত্রী মমতাজকে জোরপূর্বক হুমকি-ধমকি দিয়ে মতির ডিশ ব্যবসার পার্টনার হয়। মমতাজও স্বামীর নিখোঁজ হওয়ার পেছনে যারা জড়িত তাদের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জরিপকে পার্টনার করে নেয়। এর পাশাপাশি জরিপ বসুন্ধরার জমি থেকে রাতের আঁধারে মাটি চুরি করে বিক্রি করে বনে যায় কোটিপতি। শুরু করে এলাকার জমি দখল, অন্যের জমিতে মাটি কেটে বিক্রি, সাধারণ জনগণকে হুমকি দিয়ে চাঁদা আদায়, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, হত্যা-লুটপাটের রাজত্ব কায়েম। শুভাঢ্যা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নাজিম উদ্দিন নাজিম মারা যাওয়ার পর তাঁর ইকুরিয়া এলাকার হাসনাবাদ সুপারমার্কেটের ৯০টি দোকান জবর দখল করে নেয়। এর প্রতিবাদ করায় হামলা চালিয়ে মার্কেটের কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করে ম্যানেজারকে মারধর করে। কালা জরিপ তৈরি করেছে টর্চার সেল। ওই টর্চার সেলে বিভিন্ন নারীদের এনে নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি দখল, মাদক, মারামারি, ধর্ষণ ও হত্যাসহ নানা অপরাধে ২২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বর্তমানে ১০টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এরপরও সক্রিয় রয়েছে সন্ত্রাসী কালা জরিপ।
দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ওসি শাহজামান বলেন, জরিপ স্থানীয় কুখ্যাত সন্ত্রাসী। সে এলাকায় চাঁদাবাজি, খুন, রাহাজানি, মাদক পাচারসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে থাকে। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় জরিপের নামে বেশ কয়েকটি মামলায় আছে। তাকে কয়েকবার গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এতে সে কিছুদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে আসছে। তার রেকর্ড খুবই খারাপ, অনেক ভুক্তভোগী আমাদের কাছে এসে অভিযোগ দিয়েছে। মামলার রেকর্ড থেকেই তো বোঝা যায়, তার অপকর্মের বিষয়টা। এলাকায় জরিপ বেশকিছু খারাপ যুবকদের নিয়ে ঘুরাফেরা করে। এছাড়া জমিজমা দখল করা নিয়ে বিভিন্ন সময় ঝামেলায় জড়ায়। এসব ঘটনায় যারা লিখত অভিযোগ দিচ্ছে। তাদের থেকে মামলা নিচ্ছি এবং সেই অনুয়ায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।