ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এখন দালালের উৎপাত বেড়ে চলছে। পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখে উপায় নেই তারা দালাল। অথচ সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কৌশলে বুঝিয়ে নেয়া হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। এতে করে সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন জনসাধারণ। জেলার প্রতিটি সরকারি হাসপাতালের প্রধান ফটকের সামনেই গড়ে উঠেছে অগণিত বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর মধ্যে অনেকটিরই নেই লাইসেন্স। এসব প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে নানা বয়সী পুরুষ ও মহিলাদের। যাদের কাজই হলো সরকারি হাসপাতাল ঘুরে নানা প্রলোভনে রোগীকে তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা। গত দুই বছর আগে ময়মনসিংহ মেডিকেলে অভিযান চালিয়েছিল র্যাব। এ সময় ১৩ দালালকে আটক করা হয়। এরপর কখনো সরকারি হাসপাতালে অভিযান না চালানোর কারণে কৌশলে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে দালাল চক্র। বেশ কয়েকজন রোগী ও তাদের স্বজন জানান, সরকারি হাসপাতালে সেবা নিতে আসা অনেক ব্যক্তিকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে দালালরা। অনেকে তাদের এই ফাঁদে পা বাড়ান। পরে উন্নত সেবার নামে নানাভাবে খরচ হয় টাকা। তাদের এই ফাঁদে সবচেয়ে বেশি পড়েন গ্রাম থেকে আসা রোগী ও স্বজনরা। সম্প্রতি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলা ক্যানটিনের সামনে বসে ছিলেন আক্কাছ আলী নামে বৃদ্ধ। তিনি নেত্রকোনার দুর্গাপুর থেকে ছেলে এনামুলকে নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের গেট পর্যন্ত আসতেই নতুন শার্ট-প্যান্ট পরা কয়েকজন ভদ্রলোক এসে বলে সমস্যা কি? বললাম, আমার ছেলেটা শারীরিক দুর্বলতাসহ মানসিক সমস্যায় ভুগছে। পরে তারা সরকারি হাসপাতালের নানা দুর্নাম করে বেসরকারি হাসপাতালে নিতে চাইল। পাশাপাশি সব পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ৪০ ভাগ ছাড় দেয়ার কথাও বলা হয়। কিন্তু তারা দালাল বুঝতে পেরে সঙ্গে যাইনি।’ ময়মনসিংহ মেডিকেলের মূল ফটকের কাছে দাঁড়িয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে কথা বলছিল সাদা শার্ট-প্যান্ট পরা একজন দালাল। রোগীকে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে যেতে স্বজনদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে বুঝানো হচ্ছিল। এ সময় তার কাছে গিয়ে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে দ্রুত হেঁটে হাসপাতালে ত্যাগ করে সে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ময়মনসিংহ মহানগরের সম্পাদক আলী ইউসুফ দৈনিক নবচেতনাকে বলেন রোগীর স্বজনদের বুঝিয়ে হাসপাতাল থেকে রোগী বাগিয়ে নিতে শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এদের আইনের আওতায় আনতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জোরালো ভূমিকা পালন করা প্রয়োজন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক বলেন, পোশাক-পরিচ্ছেদ দেখে দালাল চিহ্নিত করা কঠিন। তবে ১৩ জন দালালকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের পর হাসপাতাল দালালমুক্ত হয়েছিল। এখন দালালগুলোকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে চেষ্টা চলছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো দালালমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে ময়মনসিংহ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. নজরুল ইসলাম বলেন, দালালদের স্থানীয়রাই সবচেয়ে বেশি চেনেন। এ জন্য কোনো দালাল হাসপাতালের ভেতরে এসেছে এমন সন্দেহ হলে তাৎক্ষণিক পুলিশকে খবর দেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন।