হবিগঞ্জে আবার সংঘর্ষ হয়েছে। তবে এবার বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে নয়। সংঘর্ষ হয়েছে বিএনপির সঙ্গে আওয়ামী লীগের। রোববার বিকালে শহরের শায়েস্তানগরে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে দুপক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়। এতে শতাধিক আহত হয়েছেন। এর আগে শনিবার বিএনপির সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওইদিন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন সদর থানার ওসিসহ অন্তত ৪০ পুলিশ সদস্য।
জানা যায়, শনিবারের ঘটনার প্রতিবাদে রোববার বিকালে হবিগঞ্জ শহরের শায়েস্তানগর পয়েন্টে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। তাই নেতাকর্মীরা সেখান জড়ো হন। সমাবেশ শেষে মিছিল বের করে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছলে সংঘর্ষ বাধে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। তারা বিএনপি নেতাকর্মীদের ধাওয়া দিলে সংঘর্ষ ত্রিমুখী রূপ নেয়। এ সময় এক পৌর কাউন্সিলরসহ উভয় পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।
জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আলমগীর চৌধুরী বলেন, আমরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছি। পরে শান্তিপূর্ণ মিছিল বের করি। এ সময় হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে আমাদের অনেক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায় বিষয়ক সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র জি কে গউছ বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে লাঠিসোঁটা সহকারে হঠাৎ আমাদের কার্যালয়ে হামলা করে। এরপর ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। আমার বাসায়ও হামলা চালিয়েছে। পুলিশও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। হামলায় পৌর কাউন্সিলর শফিকুর রহমান সিতুসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) বদিউজ্জামান জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে।
শনিবারের ঘটনায় বিএনপি ও পুলিশের পালটাপালটি বক্তব্য : হবিগঞ্জে শনিবারের সংঘর্ষ নিয়ে বিএনপি ও পুলিশ একে অপরকে দোষারোপ করছে। বিএনপির দাবি এটি পরিকল্পিত হামলা। আর পুলিশ বলছে, বিএনপি থানায় আক্রমণের পরিকল্পনা করেছিল। বাধ্য হয়ে তারা কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে।
ওইদিনের ঘটনা সম্পর্কে বিএনপির কেন্দ্রীয় সমবায়বিষয়ক সম্পাদক জিকে গউছ বলেন, এটি পরিকল্পিত হামলা। পুলিশ শুরু থেকেই উসকানি দিয়েছে। শান্তিপূর্ণ মিছিলের শেষে তারা হঠাৎ আক্রমণ চালায়। গুলি করে নেতাকর্মীদের আহত করে। আমার বাসায় গুলি করেছে। এখন আবার আমাদের বিরুদ্ধেই মামলা দিচ্ছে। এসব মিথ্যা মামলা দিয়ে আন্দোলন দমিয়ে রাখা যাবে না। তিনি বলেন, ‘পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এসএম আওয়াল ও যুবদল নেতা নূর উদ্দিন গুলিবিদ্ধ হয়ে সিলেটে আইসিইউতে জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন। আরেক যুবদল নেতা আমিন শাহর অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
অন্যদিকে সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খলিলুর রহমান জানান, বিএনপি শুরুতে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছিল। কিন্তু হঠাৎ তারা মারমুখী হয়ে ওঠে। মূলত তাদের উদ্দেশ্য ছিল থানায় আক্রমণ করা। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে তারা সন্ত্রাসী এনেছিল। পুলিশ প্রথমে সহনশীল ছিল। এ কারণেই পুলিশ পিছু হটেছিল। কিন্তু তারা একের পর এক আক্রমণ করে চলছিল। কোনো উপায় না পেয়ে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পরিস্থিতি শান্ত করতেই এই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে। সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সদর থানার ওসি অজয় চন্দ্র দেবকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে শনিবার জেলা বিএনপি পদযাত্রা কর্মসূচির আয়োজন করে। কর্মসূচিতে কয়েক হাজার নেতাকর্মী অংশ নেন। শুরু থেকে কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ ছিল। কিন্তু কর্মসূচি শেষে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন।