গণতন্ত্রের নামে ভারত মহাসাগরসহ এ অঞ্চলের সমুদ্রসীমা নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক মন্তব্যকে জাতীয় স্বার্থ সুরক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
তারা বলেন, দেশ ও জনগণের ভবিষ্যৎ স্বার্থ মাথায় রেখে এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে আরও সবিস্তারে তথ্যভিত্তিক কথা বলা প্রয়োজন।
বুধবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো দেশের নামোল্লেখ না করে বলেন, ‘গণতন্ত্রের নাম করে ভারত মহাসাগর ব্যবহার করে বিভিন্ন দেশকে আক্রমণ করাই কারও কারও উদ্দেশ্য। সেই উদ্দেশ্যে তারা কাজ করছে।
তিনি বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের দিক দিয়ে ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের এ অঞ্চলের গুরুত্ব অনেক বেশি। আমাদের বঙ্গোপসাগরটাও এরই অংশ। ভারত মহাসাগরে যত দেশ আছে এখানে কারও সঙ্গে কারও দ্বন্দ্ব নেই। স্বাধীনভাবে পণ্য চলাচল করে এখানে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কিছু লোক আছে তারা এদের সঙ্গে সুর মেলায়। তাই আমাদের সজাগ থাকতে হবে। একই সঙ্গে ভারত মহাসাগরের অন্যান্য দেশকেও সচেতন থাকতে হবে। আমি মনে করি, তারা সচেতন। এ এলাকা নিয়ে নানা ধরনের চক্রান্ত চলছে।’
এর আগে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশের সামনে কঠিন সময় অপেক্ষা করছে’ বলে মন্তব্য করেন।
জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ বলেন, ভারত মহাসাগর যারা নিয়ন্ত্রণ করবে আগামী দিনে বিশ্ব তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। এজন্য এবার বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অতি আগ্রহের কারণ ভূ-রাজনৈতিক। যুক্তরাষ্ট্র ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে চায়। কারণ প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও মিয়ানমারের মাধ্যমে রাশিয়ার উপস্থিতি নিয়ে তারা চিন্তিত। এমন কি ভারতও যুক্তরাষ্ট্রের এত বেশি মিত্র নয়, যতটা তারা চায়। এ কারণে বাংলাদেশে একটা পুতুল সরকার হলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুবিধা হয়।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের কেন্দ্রে ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি। বাংলাদেশ বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী দেশ। তাই ভারত মহাসাগরীয় দেশে এই স্ট্র্যাটেজি কার্যকর করতে বাংলাদেশকে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের। এটিই আসলে তাদের মূল্য উদ্দেশ্য। নির্বাচন সুষ্ঠু করার কথা একটা বাহানা মাত্র।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবির বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি আমাদের জাতীয় স্বার্থের বড় একটি ইস্যু। এ বিষয়ে দায়িত্বশীলদের পক্ষ থেকে জাতির সামনে আরও বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করা দরকার।
জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত শমশের মবিন চৌধুরী বলেন, নির্ভরযোগ্য নয়, এমন সূত্রের ওপর ভিত্তি করে বারবার একটা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। কংগ্রেসে টম ল্যান্টন কমিশন আরও স্যাংশন দিতে বলছে। দুজন কংগ্রেসম্যান এসে ঘুরে গেলেন। তারা সুশীল সমাজ বলে যাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন সবাই এক ঘরানার, সরকারবিরোধী লোকজন। যদিও তারা সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত হবে, চাপ সৃষ্টি না করে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সহায়তা করা। এদিকে এ বিষয়ে আরও কয়েকজন কূটনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এরমধ্যে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকও রয়েছেন।