উপযুক্ত সময়ে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি বছর মাগুরায় পাটের বাম্পার ফলনের আশা করছেন জেলার পাটচাষিরা। চৈত্র-বৈশাখ মাসে পাটের বীজ বোনার পর জেলার পাটচাষিরা কিছুটা শঙ্কিত ছিলেন। কারণ সেই সময় তীব্র খরা আর বৃষ্টি না হওয়ার ফলে পাটের চারা গজাতে কিছুটা দেরি হলেও, বৈশাখ মাসের শেষের দিকে বৃষ্টিপাত দেখা দেয়ায় পাট চাষ ভালো হয়েছে। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টির প্রবণতা বাড়াতে পাটের চারা তাড়াতাড়ি বাড়তে শুরু করে। সরজমিন মাগুরা সদরের মঘী, রাঘবদাইড়, হাজরাপুর, হাজীপুর, চাউলিয়া, জগদলসহ শালিখা উপজেলার ধনেশ্বরগাতী, আমিয়ান, পিপরুল, বাহিরমল্লিকা, শতখালী, বরইচারা, ছাবড়ীসহ বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে পাটের চারা ৫-৬ হাত পর্যন্ত লম্বা হয়েছে। এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে ও যথাসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পাটের চাষ ভালো হবে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে জেলায় বেশি পাট উৎপাদন হবে বলে তারা আশাবাদী। জেলার কৃষি বিভাগ বলছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৫ হাজার ৪৯৫ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। তার মধ্যে সদরে ১১ হাজার ৫০ হেক্টর, শ্রীপুরে ৯ হাজার ৬২০ হেক্টর, শালিখায় ৩ হাজার ৯৫০ হেক্টর ও মহম্মদপুরে ১০ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছে। এবার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৪৮৫ বেল পাট। নির্দিষ্ট সময়ে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার পাটের চাষ ভালো হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ মনে করছে। আবহাওয়া ভালো থাকার কারণে এবার পাটচাষিরা এ চাষে বেশি লাভবান হবে। মাগুরা সদরের কার্পাসহাটি গ্রামের পাটচাষি বাবলু শিকদার বলেন, এবার আমি ২ একর জমিতে পাটের আবাদ করেছি। বীজ বোনার পর কিছুটা শঙ্কিত ছিলাম। অনাবৃষ্টি আর তীব্র খরার কারণে পাটের চারার কিছুটা ক্ষতি দেখা দিয়েছিল, কিন্তু বৈশাখ মাসের শেষের দিকে কিছুটা বৃষ্টিপাত হওয়ায় পাটের চারা অনেকাংশে ভালো বৃদ্ধি পেয়েছে। আষাঢ় মাসের শুরুতে বৃষ্টি বেশি হওয়ার ফলে এ চাষে আরো ভালো ফলনের আশা মনে করছি। সদরের বাটিকাডাঙা গ্রামের পাটচাষি গণেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমি এবার দেড় একর জমিতে পাটের চাষ করেছি। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে পাট চাষ ভালো হবে। এ চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। পাট কাটা ও জাগ দেয়ার সময় অনেক সময় আমাদের শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। তাই নির্দিষ্ট সময়ে যদি শ্রমিক পাই তাহলে পাট কেটে জাগ দিয়ে ভালো অর্থ পাব। মাগুরা সদরের চাউলিয়া ইউনিয়নের বালিয়াডাঙা গ্রামের নাজিম উদ্দিন বলেন, আমি চাষি মূলত পাটের। প্রতি বছরের মতো এবার আমি ৩ বিঘা জমিতে পাটের চাষ করেছি। আমাদের গ্রামের পাশ দিয়ে নদী বয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের পাট জাগ দেয়া ও তোলা ভালো হয়। আমাদের পাটের রং খুবই ভালো হয়। তাই আমরা পাটের দামও ভালো পাই। প্রতি বছর বিভিন্ন এলাকার বেপারিরা আমাদের গ্রামের বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাট আঁশ সংগ্রহ করে। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে পাটের বাম্পার ফলন বলে বলে মনে করছি। মাগুরা জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, চলতি বছর যথাসময়ে বৃষ্টিপাত ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকার কারণে পাট চাষ ভালো হয়েছে। এ বছর কৃষি বিভাগ থেকে জেলার পাটচাষিদের কৃষি প্রণোদনার আওতায় ২০ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে পাটের বীজ দেয়া হয়েছে। এ চাষের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কৃষি বিভাগ সব সময় কৃষকদের পাশে আছে। আমাদের কৃষি বিভাগের মাঠকর্মীরা নিয়মিত মাঠ পরিদর্শন ও তদারক করছে। তাছাড়া পাট চাষের ব্যাপারে পাটচাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।