বর্তমান ছাত্ররাজনীতির সমসাময়িক বিষয় ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নবচেতনা জবি ক্যাম্পাস প্রতিনিধি রিসাত রহমান স্বচ্ছ।
প্রশ্ন: শেখ ওয়ালি আসিফ ইনান আপনার ছাত্র রাজনীতির শুরুটা কীভাবে হয়েছিল?
ইনান: আমি স্কুল জীবন থেকেই ছাত্র রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম। এরপর কলেজে তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগে শীর্ঘ ১২ বছর যাবৎ যুক্ত। ছাত্র রাজনীতির সকল ধাপ পেরিয়ে আজ আমি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েছি।
প্রশ্ন: কখনো কি ভেবেছিলেন এই পর্যায়ে আসবেন?
ইনান: সংগঠনটি করেছি নিজের দায়বদ্ধতা থেকে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের প্রতি নিজের পারিবারিক দায়বদ্ধতা যে ঋণ, পাশাপাশি দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি ভালোলাগা ভালোবাসা থেকে সংগঠনে আসা। সংগঠন থেকে কি পাব কি না পাবো না ভেবে বরং বাংলাদেশকে নিয়ে দেশরত্ন শেখ হাসিনার চলার পথকে মসৃণ করা, এদেশের ছাত্র সমাজের ভবিষ্যৎকে সমৃদ্ধ ও নিরাপদ করা নিয়ে সময় দিয়েছি।
প্রশ্ন: কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আসলে ছাত্রলীগের কোনো বিষয়ে নজর দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন কিনা?
ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি ধারাবাহিক ও নিয়মিত প্রক্রিয়ার সংগঠন। এখানে নতুন করে পরিকল্পনা করে কিছু করব তার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় পরিকল্পনা মাফিক চলেছে। ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে যথাযথ পরিকল্পনা মাফিক এগিয়েছে। এই পরিকল্পনার মধ্যে আমাদের দেশের এবং মানুষের অধিকার নিয়ে ভাবা এবং শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখা নিয়ে ভাবা, পাশাপাশি দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন থেকে তার আদর স্নেহ দিয়ে সংগঠনকে লালন পালন করছেন দেশরত্ব শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় সংগঠনটি তার অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের ধারা বজায় রেখে একটি নিয়মতান্ত্রিক, গঠনতান্ত্রিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে সারা বাংলাদেশ পরিচিত লাভ করেছে।
প্রশ্ন: ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে বিরোধীদলের মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন কিনা?
ইনান: না মামলার শিকার হইনি। তবে রাজপথে রাজনৈতিক অপশক্তিকে মোকাবেলা করতে অনেক সময় হামলার শিকার হয়েছি। এটি দেশের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে, সংগঠনের প্রতি আদর্শিক জায়গা থেকে মেনে নিয়েছি।
প্রশ্ন: স্মার্ট বাংলাদেশ ও স্মার্ট ছাত্রলীগ গড়তে কি কি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নিয়েছেন?
ইনান: দেখুন বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরত্ন শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি, স্বপ্ন এ তরুণ প্রজন্মকে দেখিয়েছেন। তাঁর এ পদাঙ্ক অনুসরণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ স্মার্ট ছাত্র সংগঠন হিসেবে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বাঙ্গীণ ভূমিকা রাখতে পারে সে লক্ষ্যে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
প্রশ্ন: অনেকে মনে করেন, জাতীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি বা যে দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তাদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ায় ছাত্ররাজনীতি তার স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। আপনি কী বলবেন?
ইনান: এটি বাংলাদেশ ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে প্রাসঙ্গিক নয়। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় একটি স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠন। দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশনা মেনে চলা সংগঠন। অন্যান্য রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনকে আমরা যেমন দেখেছি তারা খাতা, কলম ও বই হাতে তুলে না দিয়ে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়েছে। যুবসমাজ ও ছাত্র সমাজকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনা কখনই এমনটি করেননি। বরং একটি স্বৈরশাসকের মাধ্যমে গড়ে ওঠা দল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে মানবিক বিদ্যালয়ের পরিবর্তে দানবীয় অস্ত্রালয়ে পরিণত করেছিল তখন দেশরত্ন শেখ হাসিনা শিক্ষার্থীদের হাতে অস্ত্রের মহড়া ঝঞ্ঝাট বন্ধ করে খাতা কলম তুলে দিয়েছিল।
প্রশ্ন: সামনে জাতীয় নির্বাচন এই বিষয়ে ছাত্রলীগের কী ভূমিকা থাকবে? তা নিয়ে প্রস্তুতি কেমন?
ইনান: আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে, এদেশের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ জীবন নির্ধারণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্যও আগামী জাতীয় নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে আগামী নির্বাচনে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির দিকে আধুনিক উন্নত দেশ হিসেবে এগিয়ে যাবে নাকি বাংলাদেশ একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাবে এ সিদ্ধান্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাষ্ট্রকে, এই দেশের জনগণকে নিতে হবে। কারণ দেশরত্ন শেখ হাসিনার হাতে দেশ থাকা মানে নিরাপদ একটি দেশ, নিরাপদ একটি রাষ্ট্র, উন্নত বাংলাদেশ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ। সুতরাং এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ অবশ্যই যথাযথভাবে কাজ করে যাবে।
প্রশ্ন: পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে এখন পর্যন্ত সর্বশেষ তথ্য জানতে চাচ্ছিলাম।
ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতান্ত্রিক বিধি-বিধান গুলো যেকেউ চাইলেই পড়তে পারবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাঠামো এই রাষ্ট্রের। আমরা সেই গুরুত্ব বজায় রেখেই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার চেষ্টা করব। আমাদের কমিটির কার্যক্রম প্রায় চূড়ান্ত। আমার সভাপতি শারীরিক অসুস্থতা জনিত কারণে দেশের বাইরে আছেন। ওখান থেকেও ভার্চুয়ালি আমাদের কাজকর্ম সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। উনার দায়িত্বটুকু পালন করে যাচ্ছেন। অতি শীঘ্রই আমরা এই কার্যক্রম সম্পন্ন করব।
প্রশ্ন: নেতিবাচক ঘটনা ঘটলে অনুপ্রবেশের কথা বলা হয়। সংগঠনে তাহলে নেতা-কর্মী নির্বাচনের মাপকাঠি কী?
ইনান: অনুপ্রবেশের ঘটনা অনেক সময় ঘটে থাকে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের অতীত ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সুনামকে নস্যাৎ করার জন্য অনেক মৌলবাদী অপশক্তি বাংলাদেশ ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে থাকে। তাদের চেষ্টাকে নস্যাৎ করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি যাব।
প্রশ্ন: যারা ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করেছে বা করছে তাদের বিরুদ্ধে আপনার কী বার্তা?
ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করে এ রাষ্ট্রের কোথাও কোন রাজনৈতিক অপচর্চা করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ একটি গঠনতান্ত্রিক ও নিয়ম তান্ত্রিক সংগঠন। এই সংগঠনে থাকতে হলে ভালো মানুষ হয়ে, নীতি-নৈতিকতার মূল্যবোধকে ধারণ করে চলতে হবে৷ যদি কারো নৈতিক অবক্ষয় ঘটে, কিংবা সংগঠনের নাম ব্যবহার করে কোন অপকর্ম করার অভিযোগ ওঠে তবে আমরা তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করি।
প্রশ্ন: পদ প্রত্যাশী ছাত্রলীগের কর্মীদের উদ্দেশ্যে আপনার বার্তা কীভাবে নিজেদের প্রস্তুত করবে?
ইনান: দেশরত্ন শেখ হাসিনা সবসময় একটি কথা বলেন যে শুধু ভালো কর্মী হলেই চলবে না। পড়ালেখায়ও ভালো হতে হবে। আমি ছাত্রলীগের ৫০ লক্ষ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আহবান করতে চাই, দেশরত্ন শেখ হাসিনা চান বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা পড়ালেখা করে, জীবনমুখী শিক্ষা অর্জন করে, নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধসম্পন্ন মানবিক মানুষে রূপান্তরিত হয়ে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্বনির্ভর রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য যেন সর্বোচ্চ অবদান রাখতে পারি। আসুন দেশরত্ন শেখ হাসিনার সেই আহবানে, ডাকে সাড়া দিয়ে আমরা আমাদের নিজেদের দেশকে গড়ে তুলি।
প্রশ্ন: দায়িত্ব গ্রহণের পর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড-সাফল্য ও পরবর্তী পরিকল্পনা কি?
ইনান: বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় দেশের মানুষের জন্য দুর্যোগে-দূর্বিপাকে, সংকটে-সংশয়ে কাজ করে থাকে। এ ধারা বজায় রেখে আমরা কাজ করে চলছি। আমাদের পরিকল্পনা যেভাবে আমাদের অগ্রজরা পূর্বে সংগঠন চালিয়েছেন সেভাবেই সংগঠনের অতীত ঐতিহ্য ও ইতিহাসের ধারা সমুন্নত রেখে এই সংগঠনকে আরো বেগবান করা, ত্বরান্বিত করা, আধুনিক যুগপোযোগী স্মার্ট ছাত্র সংগঠন হিসেবে গড়ে তোলা।
প্রশ্ন: সম্প্রতি ধান কাটা কর্মসূচি বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এই ধরনের আরো কোন কর্মসূচি সামনে আসছে কিনা?
ইনান: আমাদের মানবিক নেত্রী আমাদের সর্বোচ্চ অভিভাবক, বাংলাদেশের মানুষের সর্বোচ্চ আশ্রয়স্থল, আশা-ভরসার শেষ ঠিকানা, সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, মিলন-বিরহের সর্বক্ষণের সাথী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে পৌঁছে দিতে আমরা যেন সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। তার সে নির্দেশনাকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি যাব।
প্রশ্ন: অনেকে শুধু ফটোসেশনের জন্য প্রস্তুতি ছাড়াই মাঠে যাচ্ছে তাদের বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
ইনান: এটি নিন্দুকদের সমালোচকদের ছাত্রলীগের তথাকথিত বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে মনে করি। তাদের এসব মন্তব্য সাথে আমি কোন ভাবেই একমত নই। হয়তো কৃষকের মত হচ্ছে না কারণ ছাত্রলীগের কোন কর্মী সরাসরি কৃষক নয়। তারা চেষ্টা করছেন কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য। এটিকে বরং তাদের পজিটিভ মানসিকতাকে, মানবিক মূল্যবোধকে সাধুবাদ জানানো উচিত। এবং যারা সমালোচনা করছে তাদেরকে আহ্বান করব সমালোচনা না করে দেশরত্ন শেখ হাসিনার আহবানে সারা দিয়ে কটাক্ষ না করে কৃষকের পাশে দাঁড়াই। মানুষকে সহযোগিতা করি সাহায্য করি। ছাত্র সমাজ সব সময় দেশের শ্রমিকদের পাশে ছিল কৃষকদের পাশে ছিল। মুসলিম মানুষের পাশে ছিল। এটি থাকবেই এটি হওয়া উচিত।
ধন্যবাদ আপনাকে।
ইনান: আপনাকেও ধন্যবাদ।