গুরুতর অসুস্থ এক নারীকে নিয়ে বরিশাল থেকে ঢাকায় আসছিল অ্যাম্বুলেন্সটি। পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে এসে সামনে থাকা একটি এলপি গ্যাস সিলিন্ডারবাহী ট্রাকের পেছনে ঢুকে যায় অ্যাম্বুলেন্সটি। এতে রোগী-চালকসহ ছয়জন প্রাণ হারান।
ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষের এই ঘটনায় প্রত্যক্ষ দৃষ্টিতে দুর্ঘটনার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চালককে দায়ী মনে করা হলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, দুর্ঘটনার জন্য সিলিন্ডার ভর্তি ট্রাকটির অবৈধ পার্কিং-ই দায়ি। কারণ ট্রাকটি এমন একটি জায়গায় পার্কিং করা ছিলো যেখানে সাধারণত কোন গাড়ি থামে না।
ধারণা করা হচ্ছে চোখে ঘুম নিয়ে দুর্বল থাকা এ্যম্বুলেন্স চালক গাড়িটিকে চলন্ত করেই গাড়ি চালাচ্ছিলো। কিন্তু হঠাৎ করেই গাড়িটিকে পার্কিং দেখে স্পীড ব্রেকার পার হতে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারায় এ্যম্বুলেন্সটি। যা দুর্ঘটনা ঘটায়। দুর্ঘটনার পর ট্রাকচালক পালিয়ে যান।
তবে পুলিশ বলছে, দুর্ঘটনার ধরন দেখে চালকের চোখে ঘুম চলে আসায় এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও চালক ও তার সহযোগী এতে প্রাণ হারিয়েছেন। হাইওয়ে পুলিশও সেই কথা জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) ভোররাত চারটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের জাজিরার নাওডোবা এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে নবচেতনার বরিশাল ব্যুরো প্রধান সাংবাদিক মো: মাসুদ রানা (৩০) ছাড়াও বাকীদের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন রোগী জাহানারা বেগম (৫৫), তার মেয়ে লুৎফুন নাহার লিমা (৩০), স্বাস্থ্যকর্মী ফজলে রাব্বি (২৮), গাড়িচালক জিলানি (২৮) ও গাড়ির হেলপার রবিউল ইসলাম (২৬)।
পটুয়াখালীর অসুস্থ জাহানারা বেগমকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকায় আনা হচ্ছিল। তাকে নিউরো সাইন্স হাসপাতালে ভর্তি করার কথা ছিল বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা জানান, পদ্মা সেতুর কাছে ঢাকামুখী অ্যাম্বুলেন্সটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকের পেছনে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এতে অ্যাম্বুলেন্সটি ধুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনার ধরন দেখে চালকের চোখে ঘুম চলে আসায় এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও চালক ও তার সহযোগী এতে প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনার পর ট্রাকচালক পালিয়ে যান।
শিবচর হাইওয়ে থানার পরিদর্শক আবু নাঈম মোহাম্মদ মোফাজ্জেল হকও চালকের চোখে ঘুম চলে আসার কথা জানিয়েছেন । তিনি বলেন, আমরা জেনেছি, অ্যাম্বুলেন্সের চালক রবিউল টানা ২৬ ঘণ্টা ডিউটিতে ছিলেন। এ কারণে তিনি ক্লান্ত ছিলেন। সম্ভবত গাড়ি চালাতে চালাতে তিনি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। এ কারণে চলন্ত ট্রাককে পেছন থেকে ধাক্কা দেয় অ্যাম্বুলেন্সটি।
পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুরুজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘হঠাৎ থানার পাশে বিকট চিৎকার চেঁচামেচি শুনে উঠে আসি। এসে দেখি, দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই ছয়জন লাশ হয়ে আছে। পরে ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিয়ে এনে তাদের নিয়ে গাড়ি ও লাশগুলো উদ্ধার করি।’
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা এনামুল হক সুমন বলেন, ‘আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে এসে দুর্ঘটনার শিকার গাড়িগুলো সেখান থেকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাই এবং লাশগুলো উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসি।’
হাইওয়ে ফরিদপুর সার্কেল এএসপি মো. মারুফ হাসান জানান, মরদেহ উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে সুরতহাল করা হয়েছে। নিহতদের স্বজনদের খবর দেওয়া হয়েছে। স্বজনরা এলে তাদের হাতে মরদেহগুলো তুলে দেওয়া হবে।