নয়জন তরুণ-তরুণী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় ঘর ছেড়েছিল। পরে সবাই ভুল বুঝতে পেরে তাদের পরিবারের কাছে যাওয়ার জন্য ইচ্ছা পোষণ করে। ডি-রেডিক্যালাইজ কর্মসূচির আওতায় তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-র্যাব।
এ সময় অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসা তরুণ-তরুণীদের ফুলের শুভেচ্ছা ও বই উপহার দেয় র্যাব। এছাড়া এলিট ফোর্সটির পক্ষ থেকে প্রত্যেককে নগদ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
তাদের সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার মাধ্যমে দেশ সেবায় অংশগ্রহণের প্রত্যাশার কথা জানান র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) কামরুল হাসান।
র্যাব জানায়, গত ২২ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নয়জন তরুণ-তরুণী ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের জন্য একযোগে গৃহত্যাগ করে। এ বিষয়ে তাদের পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে। এই তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-৭ ও র্যাব-৮ এর সহযোগিতায় গত ২৫ ডিসেম্বর তাদের র্যাবের হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কাউন্সেলিং করা হয়। এতে তারা তাদের ভুল বুঝতে পেরে পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করে।
এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২ জানুয়ারি) দুপুরে র্যাব ফোর্সেসের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত ‘নবদিগন্তের পথে’ নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া তরুণ-তরুণীরা হলো আবু বকর সিদ্দিক (১৯), ফয়সাল হোসেন (১৭), মো. ফারুক হোসেন (১৮), মো. আলিফ খান (১৭), মুফলিয়া আক্তার (১৮), তাজকিয়া তাবাসসুম (১৭), জান্নাতুল ফেরদৌস (১৭), রুনা আক্তার (১৮) ও কানিজ ফাতিমা ইফতি (২১)।
র্যাব আরও জানায়, তারা ধর্মের ভুল ব্যাখ্যায় উদ্বুদ্ধ হয়ে কথিত হিজরতের জন্য দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একযোগে গৃহত্যাগ করেছিল। তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের মুসলিম নারী ও শিশুদের নির্যাতনের ভিডিও ও ছবি দেখে তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। তারা ওইসব ভিডিও এবং ছবির লিংক তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারের পাশাপাশি লাইক ও কমেন্ট করত। এদের মধ্যে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা ওইসব ভিডিও ও ছবি শেয়ার ও কমেন্ট করত তাদের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাত।
র্যাব আরও জানায়, যারা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করত তাদের নিয়ে ‘দুনিয়া কি মুসাফির’ নামে আরেকটি মেসেঞ্জার গ্রুপ খোলে। ওই গ্রুপের মোট নয়জন সদস্য ছিল। এরমধ্যে চারজন পুরুষ ও পাঁচজন নারী। পরবর্তী সময়ে তারা এই গ্রুপের সদস্যদের মেসেঞ্জার গ্রুপ থেকে টেলিগ্রাম গ্রুপে নিয়ে যায় এবং সেখানে ইসলামিক বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করত। সেখানে তারা বিভিন্ন ইসলামিক ভিডিও পোস্ট করত এবং বিভিন্ন লেখকের বই ডাউনলোড করে গ্রুপে দিত। পরবর্তী সময়ে গ্রুপের এডমিন মাঝে মাঝে তাদের পড়াশোনার বিষয়ে জিজ্ঞেস করত। একপর্যায়ে তাদের নির্বিঘ্নে ধর্ম পালন করতে হলে সব ফেতনা থেকে দূরে সরে গিয়ে পাহাড়ি এলাকায় নিরিবিলি পরিবেশে যেতে হবে এবং সেখানে গিয়ে ধর্ম পালন করার নির্দেশ কোরআন ও হাদিসে আছে মর্মে ধর্মীয় ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ করত।
র্যাব জানায়, ওই নয়জন সদস্যই হিজরত করার বিষয়ে একমত পোষণ করে। তখন তারা গুগল ম্যাপ বিশ্লেষণ করে রাঙামাটির পাহাড়ি এলাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই অনুযায়ী তারা গত ২২ ডিসেম্বর বাড়ি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সে অনুযায়ী ২৩ ডিসেম্বর তারা চট্টগ্রামের একটি স্থানে একত্রিত হয়। সেখান থেকে ওই দিনই বাসে করে রাঙামাটিতে গমন করে এবং সেখানে গিয়ে লোক সমাগম দেখে তারা হিজরতের জন্য অনুকূল নিরিবিলি কোনো স্থান না পেয়ে চট্টগ্রামে ফেরত আসে। পরদিন তারা সবাই বান্দরবান গিয়েও সুবিধাজনক স্থান না পেয়ে একই দিনই আবারও চট্টগ্রাম ফেরত আসে। সুবিধাজনক স্থান না পাওয়ায় চট্টগ্রামে এসে তারা পরবর্তী সময়ে কী করবে সে বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে একজন নারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়লে তারা স্থানীয় একটি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করায়। এসময় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রাম থেকে তাদের র্যাব হেফাজতে নেওয়া হয়।