ফাঁদসহ নানা কৌশলে সুন্দরবনে হরিণ শিকারে মেতে উঠছে শিকারিরা। এসব হরিণের মাংস আবার বন সংলগ্ন খুলনার দাকোপের বিভিন্ন এলাকায় হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে। হরিণ শিকারের পাশাপাশি এসব শিকারির কাছ থেকে অন্যান্য বন্য প্রাণীও রেহাই পাচ্ছে না। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব ও পশ্চিম সুন্দরবনের কোল ঘেষা উপজেলার সুতারখালী, কালাবগী, নলিয়ান, কালিনগর, কৈলাশগঞ্জ, রামনগর, বানিশান্তা, ঢাংমারী, খেজুরিয়া ও লাউডোব এলাকা রয়েছে। এসব এলাকার চিহ্নিত শিকারি চক্রের সদস্যরা বেশ কিছুদিন যাবৎ সুন্দরবনে অবাধে কৌশলে হরিণ শিকার করে আসছে। বনবিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সুন্দরবনে ঢুকে খুব সহজেই লোকালয়ে নিয়ে আসে ওই চক্রের সদস্যরা। পরে বিভিন্ন এলাকা থেকে অগ্রিম অর্ডার নেওয়া লোকজনের কাছে কেজিপ্রতি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে নগদ ও বাকিতে বিক্রি করছে। মাঝে মাঝে বনবিভাগ ও কোস্টগার্ডের কাছে হরিণের মাংস ও চামড়াসহ এসব শিকারি চক্রের দুই একজন সদস্য ধরা পড়ে। কয়েকটি মামলা হলেও থেমে নেই হরিণ শিকার। এসব শিকারি চক্রের কোনো কোনো সদস্য আবার পালিয়েও যায় বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা শিকারিদের কাছ থেকে হরিণের মাংসসহ নানারকম সুযোগ-সুবিধা নিয়ে থাকে। বিধায় হরিণ শিকার কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। এমনই অভিযোগ সচেতন এলাকাবাসীর। এমনিভাবে চোরা শিকারিদের সুন্দরবনে হরিণ নিধন চলতে থাকলে আগামীতে চিত্রল মায়াবী হরিণ বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন তারা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার একাধিক ব্যক্তি বলেন, চিহ্নিত হরিণ শিকারিরা প্রতি অমাবস্যা ও পূর্ণিমায় গোপনে বনে ঢুকে বনে ঢুকে পড়ে। ফাঁদসহ নানা কৌশলে হরিণ শিকার করে এলাকায় এনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করে। এ বিষয়ে এলাকার কোনো লোক মুখ খুললে প্রভাবশালী নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের রোষানলে হয়রানির শিকার হয়। শুধু হরিণ নয়। এসব শিকারির হাত থেকে সজারুসহ বনের অন্য বন্য প্রাণীও বেহাই পায় না। হরিণ শিকারের অভিযোগে মামলা থাকলেও তারা বহালতবিয়তে এই অপকর্ম চালিয়ে আসছে। কোষ্টগার্ড পশ্চিম জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা লে. কমান্ডার বিএন আব্দুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন আগে ৩৬ কেজি হরিণের মাংসসহ এক ব্যক্তিকে বানিশান্তা বাজার থেকে আটক করা হয়। এছাড়া গত একবছরে অভিযান চালিয়ে মোট ১৪৮ কেজি হরিণের মাংসসহ ৫টি চামড়া, ২টি মাথা, ৪টি পা ও ১টি ভুঁড়ি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় ৫ জনকে আটকের পর মামলা দিয়ে কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়। এ অভিযান সব সময়ে অব্যাহত থাকবে বলে তিনি জানান। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, হরিণ শিকারিদের তৎপরতা আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছুদিন আগেও কয়েকজনকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে কোর্ট হাজতে পাঠানো হয়েছে। তাছাড়া কোষ্টগার্ডও আমাদের কাছে কয়েকজনকে হস্তান্তর করে। তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া সোর্সের মাধ্যমে খবর নিয়ে শিকারি চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে আগাম ব্যবস্থাসহ আমাদের টহল অব্যাহত আছে।
///